খুবির এক শিক্ষক বরখাস্ত, দুই শিক্ষক অপসারণ
নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ছাত্র আন্দোললনে সংহতি প্রকাশের দায়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং অপর দুই শিক্ষককে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অবাধ্যতা, গুরুতর অসদাচারণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনবিরোধী কার্যক্রম ছাড়াও একাধিক অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েও ওই তিন শিক্ষক তাদের কাজের জন্য ক্ষমা বা দুঃখ প্রকাশ না করেননি। পরে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
বরখাস্ত শিক্ষক হলেন- বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল ফজল। এছাড়া অপসারণ করা শিক্ষক দুজন হলেন- বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১১তম সভার সিদ্ধান্তে ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রারের সই করা এক অফিস আদেশে তাদের স্ব স্ব নামে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে কেন তাদের বরখাস্ত ও অপসারণ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত তিনজন নির্ধারিত ২১ জানুয়ারি দুপুরের মধ্যে ওই চিঠির জবাব দেন। তবে তারা জবাব দিলেও কোনো রকম দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চাননি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়। নিয়ম অনুযায়ী শনিবার (২৩ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় ২১১তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত এবং তিন শিক্ষককে দেওয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে জবাব নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা করা হয়। শেষে সিন্ডিকেট তাদের চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত এবং অপসারণের সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
সিন্ডিকেট সচিব ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস জানান, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, নতুন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল জব্বার ও ড. নিহার রঞ্জন সিংহকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগির অন্যান্য সব সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন। সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন অনলাইনে যুক্ত থেকে এ সভায় অংশ নেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক স্থাপনের নকশাও গ্রহণ করা হয়। এছাড়া উপাচার্য ফিতা কেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি আর্কাইভের উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খুবির প্রকৃত ঘটনা না জেনে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য বা বিবৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়ে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে দুজন শিক্ষার্থীর অসদাচারণের অভিযোগ তদন্ত শেষে সম্প্রতি শৃঙ্খলা বোর্ড বিভিন্ন মেয়াদে তাদের শাস্তি প্রদান করে। এই শাস্তি প্রত্যাহারে ঐ দুই শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। শাস্তি প্রত্যাহারে বা শাস্তি কমানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিক পথ রয়েছে। কিন্তু তারা এ পথ অনুসরণ করে আবেদন করছে না।
খুলনা/নূরুজ্জামান/এসএন
আরো পড়ুন