ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে 

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৪৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে 

কুমারগাঁও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছরে উদ্যোক্তা সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের মোট ব্যয় হবে এক হাজার ১৯৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।  এ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  বাংলাদেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০-১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে।  উক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।  ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৪,৫৯৪ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতে জরুরি ভিত্তিতে ভাড়াভিত্তিক গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কুমারগাঁও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩ বৎসর মেয়াদে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং অ্যানার্জী প্রিমা লিমিটেড-এর মধ্যে গত ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি চুক্তি হয়। কুমারগাঁও প্ল্যান্ট একই বছরের ২৩ জুলাই ৪৭.৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতায় সিওডি অর্জন করে।  বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চুক্তির মেয়াদ শেষে  ৩ বার ৮ বছর বাড়ানো হয়।  যা গত বছরের ৩ জানুয়ারি উত্তীর্ণ হয়েছে।  মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

সূত্র জানায়, স্পন্সর কোম্পানি কুমারগাঁও ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চুক্তির মেয়াদ চলমান ট্যারিফ অপরিবর্তিত রেখে আবার ৫ বছর বাড়ানোর জন্য  ২০১৯ সালের ১০ জুলাই আবেদন করে। স্পন্সর কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তির মেয়াদ ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে ট্যারিফ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এক বছর বাড়ানোর জন্য বাবিউবো ১৮২৮ তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাব পাঠায়।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০১৮) প্রণয়ন করা হয়েছে।  ওই আইনের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে ২০১০ সালে কমিটি করা হয়।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন অনুযায়ী আলোচ্য রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে মেয়াদ ১ বছর বা সুবিধাজনক সময়ের জন্য ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করার বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত সম্মতি নেওয়া হয়েছে।

স্পন্সর কোম্পানির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সভা হয়।  সভায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখলে থাকা বাবিউবোর ভূমি পিজিসিবির জিআইএস সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য জানুয়ারি ২০২২ সাল নাগাদ প্রয়োজন হবে, এজন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।  এ পরিপ্রেক্ষিতে স্পন্সর কোম্পানি তাদের চূড়ান্ত দরপ্রস্তাব দাখিল করে।

সূত্র জানায়, নেগোসিয়েশন সভায় স্পন্সর সংস্থাকে বেশ কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়। সংস্থাটি সেসব শর্তে সম্মতি দেওয়ার পর কমিটি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনার সুপারিশ করে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ৩৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে বা তারচেয়ে বেশি বিদ্যুতের ডিসপাচ দেওয়া হলে সমপরিমাণ ডিসপাচ-এর তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা যাবে। ফলে আলোচ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গ্যাসভিত্তিক হওয়ায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য বর্তমান ফুয়েল কস্ট হিসেবে (৭.৯-১.২৮)= ৬.৬২ টাকা সাশ্রয় হবে। সে হিসেবে ৩৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিলে মাসিক সর্বোচ্চ ২৪.১৬ টাকা কোটি থেকে ১ বছরে ২৮৯.৯২ সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, বৃহৎ আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্রমান্বয়ে অবসর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এইচএসডি ভিত্তিক মোট ৩৯৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৬টি, এইচএফও ভিত্তিক মোট ৩৭৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪টি এবং গ্যাস ভিত্তিক মোট ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩টি সহ সর্বমোট ১০০১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩ টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসর দেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এইচএফও ভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না। তবে সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা এবং মূল্য কম হওয়ায় কিছু কিছু গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ প্রয়োজন অনুযায়ী ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে বাড়ানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে কুমারগাঁও ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হাসনাত/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়