ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাংলাদেশে ইফাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
বাংলাদেশে ইফাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় তিনি বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইফাদ-এর ৪৪তম গভর্নিং কাউন্সিলের সভা উপলক্ষে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট গিলবার্ট এফ. হউংবোর সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় অর্থমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। 

সভায় বাংলাদেশের ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।  তাদের মধ্যে ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মিজ্ ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সমন্বয় ও নরডিক অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্টদূত এবং ইকনমিক কাউন্সিলর।

আজ শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) এর ৪৪তম গভর্নিং কাউন্সিল ভার্চুয়াল সভা। এ সভা শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি। উল্লেখ্য প্রতি বছর গভর্নিং কাউন্সিলের সভা ইতালির  রোমে ইফাদের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়।  কিন্তু এবারই করোনার কারণে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইফাদ-এ মোট এগারটি পরিপূরণে চাঁদা দিয়েছে। ১২তম পরিপূরণে বাংলাদেশের চাঁদার পরিমাণ ১১তম পরিপূরণের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য ইফাদের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানান।  তিনি নতুন মেয়াদে আগামী ৪ বছরের জন্য ইফাদ প্রেসডেন্টকে পুনঃনির্বাচন বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) সদস্য পদ পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে ইফাদের মোট ক্রমপুঞ্জিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য ইফাদের গুরুত্বপূরণ ভূমিকা রয়েছে।  বাংলাদেশে ইফাদের  কান্ট্রি প্রোগ্রামে অর্থায়নের পরিমাণ ৯৮৮.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এর মধ্যে ইফাদের অবদান ৪১৫.৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; জিওবির অবদান ১৩৫.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অবশিষ্ট অন্যান্য দাতা সংস্থার।

ইফাদ এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৪টি প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিয়েছে। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি বা ১১.৭ মিলিয়ন পরিবার উপকৃত হয়েছে।  ৩৪টি প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭টি প্রকল্প শেষ হয়েছে এবং বাকি ৭টি প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পগুলোতে ইফাদ বিভিন্ন সহ-অর্থায়নকারী দাতাসংস্থা যেমন- বিশ্বব্যাংক, এডিবি, নেদারল্যান্ড, স্পেন এবং ডেনমার্কের মতো দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ইফাদের রুরাল পুওর স্টিমুলাস ফ্যাসিলিটি (আরপিএসএফ) এর আওতায় অনুদান সহায়তা প্রাপ্ত  প্রথম ৮টি দেশের মধ্যে একটি। কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ইফাদের আরপিএসএফ এর আওতায় বাংলাদেশের ২৬,০০০ কৃষক পরিবারকে বাড়ির উঠোনে সবজি বাগান করার লক্ষ্যে  ৯১৫,০০০ মার্কিন ডলার অনুদান সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এজন্য অর্থমন্ত্রী ইফাদের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। তিনি পাঁচ বছর মেয়াদী ৮ম পঞ্চবার্ষিক  পরিকল্পনা, এসডিজি এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ইফাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে ইফাদ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সভায় অর্থমন্ত্রী বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরেন।  গ্রামীণ অর্থনীতি তথা কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ও ক্ষমতায়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ইফাদের অনুদান সহায়তা তথা সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, ভবিষ্যতে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জিইএফ, জিসিএফ এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী তহবিল হতে বাংলাদেশে অর্থায়নের জন্য ইফাদকে অনুরোধ জানানো হয়।  ঢাকাস্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি অফিসের সাংগঠনিক কাঠামো কলেবর বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে ইফাদের প্রকল্প সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।  

ইফাদ প্রেসিডেন্ট আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন।  এসডিজির গোল-১ এবং গোল-২ এর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো তথা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, ইফাদের গৃহীত কার্যক্রমের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, জেন্ডার, পুষ্টি, আদিবাসী জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন ইত্যাদি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইফাদ-এর কারিগরি জ্ঞান, উদ্ভাবনী চিন্তা ও অভিজ্ঞতার আলোকে দরিদ্র ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের কাজে লাগিয়ে কৃষি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং গ্রামীণ এলাকায়  কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ইফাদের ১২তম পরিপূরণে বাংলাদেশের চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সহযোগিতা চান।

১২তম পরিপূরণ বাস্তবায়নে আগামী ৩ বছরে (২০২২-২০২৪ সাল) মোট ঋণ ও অনুদান বাবদ ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রেক্ষাপটে ইফাদের সদস্য দেশ থেকে ১.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহের জন্য সদস্য দেশগুলো চাঁদা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

হাসনাত/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়