ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাবা মারা গেছেন আগুনে পুড়ে, অভাবে বিপথে ছেলে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:০৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
বাবা মারা গেছেন আগুনে পুড়ে, অভাবে বিপথে ছেলে

৫ সদস্যের সংসার শাহাবুদ্দিনের। অভাব যেন পিছু ছাড়ে না। অভাব ঘোচাতে আসেন ভোলা থেকে ঢাকায়। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। অভাবের কারণে নিজে পড়ালেখা করতে পারেননি। আশা ছিল সন্তানদের শিক্ষিত করে মানুষ করে তুলবেন। কিন্তু তা আর দেখে যেতে পারলেন না। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান তিনি।

এদিকে, অভাবের সংসারে ঠিকমত খাবার জোটে না। অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে শাহাবুদ্দিনের বড় ছেলে শান্তর। চুরি করতে পর্যন্ত তার বুক কাঁপছে না। সম্প্রতি মোবাইল চুরি করে আটক হয় সে। তাকে পাঠানো হয় যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। সপ্তাহখানেক আগে সেখান থেকে পরিবার তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।

নিহত শাহাবুদ্দিনের খালা শাশুড়ি ঝিনু বেগম বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ‘এই বয়সে ওর দরকার ভালো খাবার, কাপড়চোপড়, খরচের জন্য ১০টা টাকা। কিন্তু কিছুই তো সে পায়নি। পেটে ভাত না থাকলে কি আর মাথা ঠিক থাকে। অভাবের তাড়নায় একটা অপরাধ করে ফেলে। কতগুলো টাকা খরচ করে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থেকে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।’

এদিকে, অভাবে টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ও তার তিন ছেলের। সাহায্য উঠাতে পারলে খাবার জোটে। না হলে অনাহারে থাকতে হচ্ছে। এরবাড়ি ওর বাড়ি কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন তারা। না ভালো শ্বশুবাড়ির অবস্থা, না বাপের বাড়ির। তার কপালই খারাপ।

ঝিনু বেগম বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন কামরাঙ্গীর চরে থেকে কখনও রিকশা আবার কখনও ভ্যান চালাতো। বেশির ভাগ রাতেই রিকশা/ভ্যান চালাতো সে। ওইদিন শাহাবুদ্দিন কামরাঙ্গীর চর থেকে মাল বোঝায় ভ্যানে মালামাল নামাতে যান চকবার এলাকায়। ওখানে যাওয়ার পর থেকে আর শাহাবুদ্দিনের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জানতে পারলাম আগুনে পরে মারা গেছে সে।’

ঝিনু বেগম আরও বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন ছিলো তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছোট ছেলের যখন সাত মাস বয়স তখন শাহাবুদ্দিন মারা যায়। বড় ছেলে ক্লাশ সিক্সে আর ও মেঝ ছেলে ফোরে পড়াশোনা করছে। পেটে ভাত না থাকলে কি আর পড়ালেখা করা যায়। সাহায্য চেয়ে চেয়ে খাচ্ছে। সাহায্য উঠাতে পারলে খায় আর। না পারলে অভুক্ত থাকে। অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো ধরনের সাহায্য তারা পাচ্ছে না।’

ঝিনু বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে দিকে শাহাবুদ্দিন ছকিনাকে বলে মোবাইল খোলা রাইখো। বিকাশে এক হাজার টাকা পাঠাবো। কিন্তু সেই টাকা আর পাঠাতে পারেনি। পরে তার ফোন বন্ধ পায়। গ্যারেজের মালিক ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানায়। পরে ছকিনা, তার মা-বাবা, ভাই ঢাকা যায়। মেডিক্যালসহ বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও শাহাবুদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়নি। তিন দিন পর তারা আবার গ্রামে চলে আসে। এরপর আমি ওদের নিয়ে ঢাকা যায়। জানতে পারি ওর লাশ কুঁড়িগ্রাম পাঠানো হয়েছে। চার মাস ২২ দিন পর সেই লাশ আমরা পাই।’

সরকার যেন এ অসহায় পরিবারকে সাহায্য করে এবং মামলার বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় এ আশা করেন ঝিনু বেগম।

ঢাকা/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়