বিশ্ব গণমাধ‌্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত‌্যার সেই রাতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৭ মার্চ তা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে বিশ্বের বড় সব গণমাধ‌্যম।

এতে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণকে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।

আ. ফ. ম. সাঈদের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা : ফ্যাক্টস অ্যান্ড উইটনেস’ বই এবং বিবিসির একটি প্রতিদেনে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কলকাতা থেকে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের খবরে প্রকাশ যে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।’

ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছিল ‘ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।’

দিল্লির স্টেটসম্যানের খবর ছিল এ রকম- ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপ। একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।’

ডেইলি টেলিগ্রাফ, লন্ডনের ‘সিভিল ওয়ার ফ্লেয়ারস ইন ইস্ট পাকিস্তান : শেখ এ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়।

গার্ডিয়ানের ২৭ মার্চ সংখ্যায় বলা হয়, ‘২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশে রেডিওতে ভাষণ দেওয়ার পরপরই ভয়েস অব বাংলাদেশ নামে একটি গোপন বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে।’

আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ারস হেরাল্ডের ২৭ মার্চের সংখ্যার একটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘বেঙ্গলি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডিক্লেয়ার্ড বাই মুজিব।’ নিউইয়র্ক টাইমসে শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপিয়ে বলা হয় ‘স্বাধীনতা ঘোষণার পর শেখ মুজিব আটক’। 

বার্তা সংস্থা এপির এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয, ‘ইয়াহিয়ার পুনরায় মার্শাল ল ঘোষণা ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে।’
 
নিউইয়র্ক টাইমসে শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপানো হয়। পাশেই লেখা হয় ‘স্বাধীনতা ঘোষণার পরই শেখ মুজিব আটক।’ আয়ারল্যান্ডের আইরিশ টাইমসের শিরোনাম ছিল-‘পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা’ আর সঙ্গে  ছিল শেখ মুজিবের ছবি। 

দিল্লি থেকে রয়র্টাসের খবরে ‘১০ হাজার মানুষের নিহত হওয়ার ও স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুজিবকে সম্ভবত আটক করা হয়েছে’- এমন কথা বলা হয। ব্যাংকক পোস্টের খবরে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নাম দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তনে গৃহযুদ্ধের আশংকা।’

এর বাইরে ভারতের বহু সংবাদপত্র এবং আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, হংকং, নরওয়ে, তুরস্ক, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের খবরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর স্থান পায়।