ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অন্যরকম ‘মেহমানখানা’

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ২ মে ২০২১   আপডেট: ১৯:৩৯, ২ মে ২০২১

ভিন্নরকম এক মেহমানখানার গল্প। রাজধানীর লালমাটিয়ায়, ৪/৮ ব্লক ডি। এলাকার ১১ জন তরুণ মিলে শুরু করেন এই মেহমানখানার।  এখানে ইফতার করার জন্য অতিথিরা রমজানের প্রতিদিনই আসেন। তাও আবার এক দুজন নয়, হাজারেরও বেশি।  তাদের আপ্যায়নেরও কোনো কমতি হয় না। ইফতারের কিছু সময় আগেই তাদের প্রত্যেকের হাতে পরম যত্ম নিয়ে ইফতার পৌঁছে দেন, উদ্যোক্তা-স্বেচ্ছাসেবীরা। একদল তরুণ মিলে মহামারির এই সময় এমন মেহমানখানার মাধ্যমে তৈরি করেছেন, মানবতার এক অনন্য উদাহরণ।

মূলত গত বছর রমজান মাসে কয়েকজন তরুণ মিলে অসহায় মানুষের জন্য ইফতার ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়। রমজানের পুরো মাসজুড়ে ছিল তাদের এই কার্যক্রম। রমজানের পরও প্রায় ৪ মাস ধরে প্রতিদিন একবেলা করে হাজার মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে আসছেন তারা। তারপর আর কুলোতে পারছিলেন না। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় হচ্ছিল না। পরে সপ্তাহে ১দিন করে চলছিল তাদের এই কর্মকাণ্ড।  হাজার খানেক মানুষকে দিচ্ছিল শুকনো খাবার।

এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।  নিজেদের সঞ্চিত অর্থ, বন্ধু-স্বজনের সহায়তা নিয়ে সেসব তরুণরা রোজার শুরু থেকে আবার শুরু করেছেন ‘মেহমানখানা’। প্রতিদিন এই মেহমানখানায় ইফতার করতে আসা প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, ছোলা-মুড়ি-খেজুর-জিলাপির প্লেট।  সাথে লেবু শরবত।  বিকেল ৫টা থেকে আসতে থাকেন মেহমানরা। নিজেদের পাত্রে করে নিয়ে যাচ্ছেন ইফতার, নিজের জন্য। পরিবারের অন্যদের জন্য।

এখানে প্রতিদিন ইফতার করতে আসেন বিভিন্ন বাড়ির দারোয়ান, গৃহকর্মী, নিম্ন আয়ের মানুষ, রিকশা-অটো চালক, সবজি বিক্রেতা এবং ছোট ছোট বিভিন্ন পেশার মানুষেরা। প্রথমত আশে-পাশের লোকজন আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মেহমানদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এখন প্রতিদিন হাজারেরও বেশি মেহমান এখানে ইফতার করতে আসেন।  আর এসব মেহমানদের হাতে ইফতার তুলে দিতে পেরে, দিনশেষে তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরে যান মেহমানখানার উদ্যোক্তা তরুণরা।

এসব তরুণদের মধ্যে আছেন শোভন, লিজা, জ্যোতি, মোতাহার, তারা, আশরাফুল, মীম, জেসমিন, সাদী, জয়নাল, আসমাসহ ২০/২৫ জনের দল।  দলের মধ্যে রয়েছে ছাত্র, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, গৃহিণী, ডাক্তার, শিক্ষক।  তারা সবাই বন্ধু-স্বজন। 

মূল কাজের শুরুটা করেন দুই ভাই-বোন। আসমা আক্তার লিজা ও সৈয়দ সাইফুল ইসলাম শোভন। লালমাটিয়ার ডি ব্লকের নিজেদের দুতলা বাড়িতেই কিছু মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার বীজ বোনে ওরা। মানুষের জন্য, ভালো কিছু করার তাড়না থেকেই ওদের দুই ভাই-বোনের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কিছু বন্ধুরা।  সকলে মিলে আলোচনা করে শুরু করেন এই মেহমানখানার। নিজেদের সঞ্চিত টাকা, আত্মীয়-পরিজনদের সহযোগিতা দিয়ে চলে এদের এই কাজ। আর এই কাজটি লম্বা সময় ধরে করতে চান এসব তরুণেরা।

সরকারের পাশাপাশি সারা দেশের বিত্তবানদেরও নিজেদের সামর্থ মতো নিজ নিজ এলাকায় মানেষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান এসব তরুণদের।  তারা বলেন, দুর্যোগের এই সময়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।  টাকার বিনিময়ে হলেও যেসব মানুষেরা আমাদের সেবা করে আসছেন, এখন আমাদের দায়িত্ব সেসব মানুষের সেবা করা। তাদের পাশে দাঁড়ানো। একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেও জীবন হবে আনন্দময় বলে মনে করেন এসব তরুণরা।

মেসবাহ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়