ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘কত দিন আগে যে তিন বেলা ভাত খাইছি মনে নেই’

হাসিবুল ইসলাম মিথুন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ১১ মে ২০২১   আপডেট: ১৩:২৪, ১১ মে ২০২১
‘কত দিন আগে যে তিন বেলা ভাত খাইছি মনে নেই’

দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় কষ্টে আছেন শ্রমিকরা (ছবি: রাইজিংবিডি)

‘করোনার কারণে এক মাসেরও বেশি সময় দূরপাল্লার বাস বন্ধ। বাসের চাকা ঘুরলেই আমাগো পেটে ভাত হয়। এখন বাস বন্ধ, চাকা ঘোরে না তাই তিন বেলার জায়গায় এক বেলা খেয়ে আছি। কত দিন আগে যে তিন বেলা ভাত খাইতে পারছি তাই আমার মনে নাই।’ 

মঙ্গলবার (১১ মে) রাজধানীর গাবতলী থেকে কথাগুলো বলছিলেন পরিবহন শ্রমিক বাচ্চু হোসেন। 
বাচ্চু হোসেন কাজ করেন কমফোর্ড লাইন পরিবহনে। করোনার কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ। তাই বাচ্চুর মতো আরও অনেক শ্রমিক খেয়ে না খেয়ে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছেন। কষ্টে আছেন তাদের পরিবারের সদস‌্যরা। 

বাচ্চু হোসেন বলেন, ‘বাসের চাকা ঘোরে না, তাই আমাগোর ভাগ্যের চাকাও থেমে গেছে। সবাই ঈদের সময় আনন্দ করবো আর আমরা এই ফাঁকা বাস টার্মিনালে বাসের মধ্যে বা বাসের নিচে ঘুমিয়ে দিন কাটাবো। আমাগো কষ্ট কেউ দেখে না ভাই। মালিকও দেখে না সরকারও দেখে না। আমাগো থাকতে হয় বাসের মধ্যে।’ 

তিনি বলেন, ‘সংসার চালানোর জন্য অনেকের কাছ থেকে টাকা ধার করছি। কিছু টাকা বাড়ি পাঠাইছি যা দিয়া সংসার চালানো যায় না। আর আমি এইখানে যে কীভাবে দিন কাটাচ্ছি সেটা বলার মতো না। বাড়িতেও বলি না। বললে আমার জন্য তারা কষ্ট পাইবে। বেতন নেই। একটা সময় মেসে থাকতাম। সেটাও ছেড়ে দিছি। এখন এই গরমের মধ‌্যে বাসের নিচে ঘুমাই। এই কষ্ট কবে শেষ হইবে সেইটা জানা নাই।’

গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, কাজ না থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ তাস খেলছেন। কেউবা লুডু খেলে সময় পার করছেন। 

মোহাম্মদ আব্বাস নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, ‘লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ আছে। বাস চালানো ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। বাস চলছে না। তাই তাস খেলে সময় কাটাতেছি। কিছু একটা করার মধ্যে থাকলে পেটের ক্ষুধার কথা মনে থাকে না।’

দ্রুতি পরিবহনের শ্রমিক আক্কাস হোসেন বলেন, ‘আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নাই। সরকার বলে ত্রাণ দিচ্ছি, সহায়তা দিচ্ছি কিন্তু গাবতলীর কোনো পরিবহন শ্রমিক বলতে পারবে না এক টাকা পেয়েছে। সামনে ঈদ। অথচ ঈদ আমাদের কষ্টে পরিণত হয়েছে।’ 

সেন্টমার্টিন পরিবহনের মালিক ও কুমিল্লা জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘করোনার কারণে দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকলেও নানা উপায়ে মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। মার্কেট, দোকানপাট খুলে দিছে। সেখানে হাজার হাজার লোক ভিড় করছে, তাতে যদি সমস্যা না হয় দূর পাল্লার বাস চললে কী সমস্যা হবে বুঝতে পারছি না। দূর পাল্লার বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী ও তোলা হয় না। আমরা যারা পরিবহন মালিক শ্রমিক সবাই পথে বসে যাচ্ছি। এক কোথায় শ্রমিক মালিক কেউ ভালো নেই।’   
 

ঢাকা/হাসিবুল/ইভা    

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়