তাদের ঈদ আনন্দ যেন মিছে আশা
করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী। মহামারিতে অর্থহীন অবস্থায় আছে অনেক মানুষ। সবার অগোচরে অনেকটা অসহায় পবিত্র ঈদ উদযাপন করছেন তারা। তবে তাদের চেয়েও বহু কষ্টে দিনাতিপাত করছেন ভিটেমাটিহীন ছিন্নমূল মানুষজন। যাদের থাকার জায়গা নেই। দুবেলা ভাত খেতেই দিন যায়। তাদের ঈদ আনন্দ যেন মিছে অনুভূতি।
করোনা মহামারির মাঝে দ্বিতীয় বছরের মতো ঈদ উদযাপিত হচ্ছে সারা দেশে। শুক্রবার ঈদের দিন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, ছিন্নমূল মানুষজনের সেমাই, ফালুদাতো দূরের কথা। একটি সুন্দর পোশাকও তাদের জন্য আকাশের চাঁদের হাতে পাওয়ার মতো দুঃসাধ্য।
সারা দিন কাজ শেষে বাবা-মা ঘরে ফিরলে শিশুরা বলে ঈদের জামাকাপড় কিনে দিতে। কিন্তু তাদের মা-বাবার তো সে সাধ্য নেই। একমুঠো খাবার তুলে দিতে শ্রমজীবী মানুষদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। ঈদের দিনে অবলা শিশুদের জামাকাপড় কিনে দেবে কি করে। কারো কাছ থেকে কিছু একটা আসবে এটার আসায় ছাতক পাখির মতো চেয়ে থাকেন অপলক।
সাইফুল ও সাজাহান দুই সন্তানকে নিয়ে গৃহহীন মা জাহানারা বেগম। সাধারণ দিনের মতো সাদাসিদে পোশাকে তারা। জাহানারা বেগম বলেন, সাইফুলের বাবা নেই। আরেক বিয়ে করে চলে গেছে। আমাদের খোঁজ নেয় না। আমি টাকা পয়সা তুলে যা পাই ওটা দিয়ে বাচ্চাগুলো নিয়ে দিন যাপন করি। থাকার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। যখন যেখানে রাত সেখানে কাত এভাবে কাটছে।
দুই বছরের ছোট্ট শিশু সামিয়াকে নিয়েই মোমেনার জীবন চলা। ঠিকানাহীন মোমেনা জানান, অন্যান্য দিনের মতোই আমার আনন্দ। টাকা না থাকলে আনন্দ থাকে না। মানুষের কাছ থেকে খুজে যা পাই তা দিয়ে চলে খাবার। ঈদের আনন্দ দুরাসা। বরং ঈদ আসলে মানুষ গ্রামে চলে যায়। তাই টাকা কম পাই। আমার জীবনের কোনো আশা নেই। বাচ্চাটার জন্যই এখন সব আশা ভরসা বুকে নিয়ে বেচে আছি।
জসিমের বয়স ১৫। মা নেই। বাবা বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। এখন নিজেই নিজের যা উপার্যন তা দিয়ে তার দিনাতিপাত। টাকা জমিয়ে ঈদের দিন একটা পাঞ্জাবি কিনেছেন। তবে পরিবার পরিজন ও সমাজের লোকজনের সঙ্গে ঈদ ভাগাভাগির আনন্দটা কখনো অনুভবে আসেনি তার।
প্রতি বছরই ঈদ বলতে আলাদা কিছু থাকে না। ঈদের দিনেও সড়কের ধারে বসে চেয়ে থাকেন অন্যের হাতের দিকে। কখন তার হাতে আসতে দু-চারটি টাকা। এসব মানুষদের জন্য সরকারি সুপরিকল্পিতভাবে যাতে কিছু করে সে কামনা সংশ্লিষ্টদের।
ইয়ামিন/সাইফ
আরো পড়ুন