ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মজুদ ফুরাচ্ছে, টিকা পেতে চতুর্মুখী কূটনৈতিক তৎপরতা 

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ২২ মে ২০২১   আপডেট: ১৪:৫৭, ২২ মে ২০২১
মজুদ ফুরাচ্ছে, টিকা পেতে চতুর্মুখী কূটনৈতিক তৎপরতা 

দেশে মজুদ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দ্রুত শেষ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় কোভিড-১৯ টিকা পেতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। যুক্তরাজ্যের কাছে ১৬ লাখ টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। টিকা চাওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও। যুক্তরাষ্ট্র অনুদান হিসেবে টিকা না দিলে, কিনতে হলেও টিকা নিতে চায় সরকার।

বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ১৩ কোটির বেশি মানুষকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয় সরকার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করলেও টিকা স্বল্পতায় এপ্রিলে এসে প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করে সরকার। দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কার্যক্রম এখনও চলছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে করোনার টিকাদান বন্ধ রয়েছে।  এ কারণে নির্ধারিত সময়ে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৯৬৭ জন।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এখন টিকার ঘাটতি আছে ১৬ লাখ ডোজেরও বেশি। এই অবস্থায় মজুদ শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ডোজ অব্যাহত রাখতে টিকার সন্ধান করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আইটিবি নিউজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জরুরি চাহিদা মেটাতে যুক্তরাজ্যের কাছে ১৬ লাখ টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ভারত সরকার টিকা দিতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বর মাসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত তিন কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। এর মধ্যে চুক্তির ৭০ লাখ ডোজ টিকা বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ টিকা।

বর্তমানে টিকা সংগ্রহের বিষয়ে আলাপ চলছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মস্কো ও বেইজিংয়ের সঙ্গে।

দ্বিতীয় ডোজের চাহিদা পূরণে জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ টিকা দিতে কানাডার প্রতিও অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ সরকার জরুরি ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকারও অনুমোদন দিয়েছে। টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেই টিকা উৎপাদনের ব্যাপারে এই দুটি দেশের সঙ্গে কথা বলছে সরকার।

জানা গেছে, টিকা পাওয়ার বিষয়ে অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি।

এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন দূতাবাসের কাছে টিকার চাহিদার কথা জানানো হয়েছে।ওয়াশিংটনের কাছে ব্রিটিশ-সুইডিশ প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান মডার্নার টিকা চেয়েছে ঢাকা।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টকে লিখিতভাবেও চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দপ্তর ও ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে।

দূতাবাস সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এই টিকা অনুদান হিসেবে দিলে খুব ভালো হয়। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকার তা কিনতেও তৈরি আছে।

আর লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, টিকার জন্য তারা এরমধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, দ্য সেক্রেটারি অব স্টেটের কার্যালয় এবং দেশটির দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রীর দপ্তর বরাবর আবেদন জানিয়েছে।

এদিকে, গরিব দেশগুলোর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিতে গঠিত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (গ্যাভি) কাছ থেকে ফাইজারের তৈরি এক লাখ ছয় হাজার ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা জুনে পাওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার।

২ জুন গ্যাভির কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে ফাইজারের অন্তত এক লাখ ছয় হাজার কোভিড ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে পাঠাবে বলে একটি নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।

গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্বজুড়ে টিকার সংকট তৈরি হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়।

প্রাণঘাতী ও সংক্রামক ব্যাধি থেকে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের জীবনরক্ষায় টিকা প্রদানে ভূমিকা রাখা গ্যাভি বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশকে করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। গরিব দেশগুলোর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স।

সামগ্রিক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৬ লাখ ডোজ টিকা জরুরি প্রয়োজন, এটাই এখন বাংলাদেশের অগ্রাধিকার।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়