ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার সতর্ক: প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২৩ মে ২০২১  
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার সতর্ক: প্রধানমন্ত্রী

সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যথেষ্ট সতর্ক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার (২৩ মে) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২২৫টি স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।  গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বান্তকরণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা, সম্পদ চলে গেলে সম্পদ পাওয়া যায়, কিন্তু জীবন চলে গেলে আর পাওয়া যায় না। এজন্য জনসচেতনতা বেশি প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর একটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। আমরা আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অনেক আগে থেকেই জানতে পারি। আর এসব বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা আমরা ইতোমধ্যে নিতে শুরু করেছি।  ইনশাল্লাহ আমরা সতর্ক থাকবো এবং ঝুঁকি হ্রাস করতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা, টর্নেডো, বজ্রপাত, ভূমিধ্বস অথবা ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড সবকিছুতেই মানুষকে রক্ষা করা বা সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা করণীয় সে ব্যবস্থাগুলো আমরা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে প্রযুক্তির ব্যবহার জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস করলেও জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

‘মনে রাখতে হবে এটা ব-দ্বীপ। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে।  তাছাড়া, বাংলাদেশে মাঝে মাঝে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও আসে। সব মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।  আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা এগিয়ে যাব’, বলেন শেখ হাসিনা।

মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র ও পাঁচটি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।  তিনি একইসাথে ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর ও স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ উদ্ধৃত করেন এবং বলেন, ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, সঠিক দিক নির্দেশনা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, আদর্শ নিয়ে চললে বাংলাদেশের মানুষকে কেউ কখনও দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সেভাবেই দেশকে গড়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে তিনি করোনাভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে পুনরায় সতর্ক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সকলে মিলে এই দুর্যোগকেও আমরা প্রতিহত সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ।

দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের কাজ নিজে করা, বিশেষ করে যুবসমাজ যাতে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে তার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন স্বাগত বক্তৃতা করেন।  অনুষ্ঠানে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিও চিত্র ও প্রদর্শিত হয়। গণভবন থেকে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বরিশালের উজিরপুর এবং গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে পরে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলায় যে সক্ষমতা তা আজকে সারাবিশ্বে সমাদৃত। যে কারণে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘গ্লোবাল এডাপটেশন সেন্টারে’র কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একটা ছোট্ট ভূখণ্ডের মধ্যে প্রতি নিয়ত দুর্যোগ মোকাবিলা করেও আমরা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছি। সে কারণে আমরাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছে সারাবিশ্বে কিভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যেতে পারে তার পরিকল্পনা নেওয়ার, বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং করার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নানা সময়ে নানাভাবে আসে সে বিষয়ে কাজ করার জন্যই এই গ্লোবাল এডাপটেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশকে দুর্যোগ মোকাবিলায় একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে। যেটা বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক।

দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে তার সরকার নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা এবং অবকাঠামোর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই ২৩০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ৩২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।  তাছাড়া, ১৬টি জেলার ৮২টি উপজেলার ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ২৬৭টি উপজেলা ৪২৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান আছে। ৬৩টি জেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাম তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন মানুষের কাছে খাদ্য সাহায্য দ্রুত যাতে পৌঁছানো যায় এজন্য সরকার পরিকল্পনা করে এই উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় সরকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করে দিচ্ছে যাতে যেকোনো দুর্যোগে দমকলকর্মীরা দ্রুত সেখানে পৌঁছে ব্যবস্থা নিতে পারে।

পারভেজ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়