ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

করোনা সংকট মোকাবিলায় টিআইবির ১৯ সুপারিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২০, ৮ জুন ২০২১   আপডেট: ১৬:২১, ৮ জুন ২০২১
করোনা সংকট মোকাবিলায় টিআইবির ১৯ সুপারিশ

করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সরকারের কাছে ১৯টি সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।  ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারে পক্ষ থেকে গৃহীত কার্যক্রম তথা কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা সুশাসনের আলোকে পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে টিআইবি এই তৃতীয় দফা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। মঙ্গলবার (৮ জুন) সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণাটি মিশ্র পদ্ধতিনির্ভর। গুণগত ও পরিমাণগত এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় ধরনের তথ্য এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে।

টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ তথ্যের মধ্যে টিকা গ্রহীতা, টিকা কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ, টিকা গ্রহণে ১২ ধরনের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠা এবং তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে।  পরোক্ষভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে।

গবেষণার পর্যবেক্ষণে টিআইবি বলেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত   গ্রহণ না করা, নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা বিতরণে যথাযথ উদ্যোগের ঘাটতিসহ সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।

এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের কাছে টিকা কার্যক্রম সম্পর্কিত ১৯টি সুপারিশ করেছে টিআইবি। এগুলো হলো: 
১।  দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে কীভাবে কত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।

২।  সম্ভাব্য সব উৎস হতে টিকা প্রাপ্তির জন্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।

৩। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সুযোগ দিতে হবে।

৪।  সরকারি ক্রয় বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি প্রদান করতে হবে।

৫।  রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ছাড়া টিকা ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সকল তথ্য সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

৬।  পেশা, জনগোষ্ঠী ও এলাকাভিত্তিক সংক্রমণের ঝুঁকি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সমভাবে বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকা হতে যারা বাদ পড়ে যাচ্ছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৭।  সুবিধাবঞ্চিত ও প্রত্যন্ত এলাকা বিবেচনা করে টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও টিকা দান কার্যক্রম সংস্কার করতে হবে; ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন ও তৃণমূল পর্যায়ে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

৮।  সব কারিগরি ত্রুটি দূর করাসহ সবার জন্য বিভিন্ন উপায়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিতে হবে (যেমন এসএমএস এর মাধ্যমে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে); সকলের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন কার্ড প্রিন্ট করার নিয়ম বাতিল করতে হবে।

৯। এলাকাভিত্তিক চাহিদা যাচাই করে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

১০। টিকা প্রদান কার্যক্রমে টিকা কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

১১। টিকা কেন্দ্রে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে; অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে হবে ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলার অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত সুপারিশ

১২। কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে তদন্ত ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৩। কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পসমূহ দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এর অগ্রগতির চিত্র প্রকাশ করতে হবে।

১৪। স্টোরে ফেলে রাখা আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অতি দ্রুততার সাথে ব্যবহারযোগ্য করতে হবে এবং সংক্রমণ হার বিবেচনা করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে হবে।

১৫। সকল জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে।

১৬।  বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউসহ কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সর্বসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে চিকিৎসা ফি’র সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

১৭। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি পালন করাতে বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আচরণ পরিবর্তনমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে হবে। মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে বলবতকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

১৮।  সকল জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পূর্বে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবন-জীবিকার সংস্থান করে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউন’ দিতে হবে; সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাসহ নিষেধাজ্ঞার আওতা নির্ধারণ করতে হবে।

১৯। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা অতি দ্রুততা ও স্বচ্ছতার সাথে বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে।
 

শিশির/এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়