ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জঙ্গিবাদ থেকে যুবসমাজকে দূরে রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ১০ জুন ২০২১   আপডেট: ১৬:৩১, ১০ জুন ২০২১
জঙ্গিবাদ থেকে যুবসমাজকে দূরে রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

মডেল মসজিদের মাধ্যমে সঠিক ধর্মচর্চায় ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ থেকে যুবসমাজকে দূরে রাখতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

আরও পড়ুন: মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

ইসলামের আদর্শের সাথে মিল রেখে এবং জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের কথা চিন্তা করেন।  প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন কিভাবে ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা হয়েছে।  কিছু লোক….শুধু আমাদের দেশে না বিশ্বব্যাপী দেখেছি, ধর্মের নামে মানুষ খুন করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, মানুষকে খুন করে নাকি বেহেশতে চলে যাবে।  আমার প্রশ্ন যারা এই পর্যন্ত খুন-খারাবি করেছে তারা কে কে বেহেশতে গেছে? এটা কি কেউ বলতে পারবে? বলতে পারবে না।  সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে গেছে ইসলাম ধর্মের।’

‘যে ধর্ম শান্তির ধর্ম, যে ধর্ম মানুষকে অধিকার দিয়ে গেছে; আমি মনে করি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের কিছু লোক এই জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, মানুষ হত্যা করে, বোমা মেরে, খুন-খারাবি করে আমাদের এই পবিত্র ধর্মের নামে বদনাম সৃষ্টি করছে।  যেটা আমাদের ধর্মের শুধু পবিত্রতাকে নষ্ট করছে না, ইমেজটাও নষ্ট হচ্ছে সারা বিশ্বে।’

 কতিপয় লোকের খারাপ কাজের জন্য ধর্মের ওপর দায় পড়তে পারে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব সময় দেখা যাচ্ছে যে, জঙ্গিবাদ হলেই ইসলামিস্ট জঙ্গি এই ধরনের নাম দেওয়া।  আমি আন্তর্জাতিকভাবে যে যে সম্মেলনে গিয়েছি, যখনই কেউ এই ধরনের কথা বলেছে আমি সব সময় তার প্রতিবাদ করেছি যে, মুষ্টিমেয় লোকের জন্য একটা ধর্মকে এভাবে কোনো সময় অপবাদ দেওয়া যায় না।’

‘যারা এই জঙ্গিবাদ বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত আমাদের ওলামা এখানে আছেন, আমাদের অভিভাবক-শিক্ষক রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সবাইকে আহ্বান জানাবো এই সর্বনাশা পথ থেকে আমাদের যুবসমাজ যেন দূরে থাকে। এজন্য সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে।’

ধর্মের সঠিক চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ধর্মচর্চা করতে হলে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।  নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে, তার কল্যাণ করতে হবে। মানুষের অকল্যাণ করে একটা মানুষকে হত্যা করে একটা পরিবারকে ধ্বংস করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না।  এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা।’

আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত গড়লেন শেখ হাসিনা

সারাদেশে মসজিদ করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই ছিলো জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এটা নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিলো।   সেই সাথে সাথে এই মসজিদের মাধ্যমে আমাদের ইসলাম, সংষ্কৃতি, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দীনি দাওয়াতি কার্যক্রম সেগুলো যাতে সহজভাবে প্রচার-প্রসার করা যায় এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এগুলো থেকে যাতে মানুষ দূরে থাকে।  ইসলাম ধর্মের যে মূল প্রতিপাদ্য সেটা যেন মানুষ সঠিকভাবে জানতে পারে, ধর্ম চর্চাটার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যাতে জানতে পারে।

এ সময় মডেল মসজিদের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরে পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী।

ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তরিকতা ও নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম প্রচার-প্রসারের জন্যই তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন গড়েছিলেন, যাতে এর মর্মবাণী মানুষ জানতে পারে। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি রেসকোর্স ময়দানে রেসকোর্স খেলা নিষিদ্ধ করেন।  মদ নিষিদ্ধ করেন।  বিশ্ব ইজতেমা যাতে বাংলাদেশে হয় এটা একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে  ছিলা যে এটা কোথায় হবে। তার উদ্যোগে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং এজন্য টঙ্গীতে বিশাল এলাকা জায়গা দিয়ে দেন।  কাকরাইলে একটা ছোট মসজিদ ছিলো সেখানেও মসজিদের জন্য জায়গা দিয়েছেন তাবলিগের জন্য।  মুসলিম বিশ্বের সাথে একটা সম্পর্ক স্থাপন করেন। ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেন এবং বাংলাদেশকে ওআইসি সদস্য করেন।

এ সময় বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্য কোড করে তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে ব্যবসা আর নয়। ধর্মের নামে শোষণ-উৎপীড়ন আর চলবে না। রাজনীতির ক্ষেত্রে ধর্ম টেনে এনে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা আর কেউ করতে পারবে না।  এরপরও যদি কেউ ধর্মকে মূলধন করে ব্যবসায় নামেন তবে তাকে সমুচিত ফল ভোগ করতে হবে।  এদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সবাই নিজ নিজ অধিকার পূর্ণভাবে ভোগ করতে পারবে।  কারো ধর্মীয় অধিকারে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’

৯৬ সালে সরকারে এসে বায়তুল মোকাররম উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময়ে মসজিদের মিনার তৈরি করি। মসজিদ উনন্নয়নের ব্যবস্থা নেই। আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থায় কোরআন পড়ার জন্য আরবি সঙ্গে বাংলা ও ইংরেজিতে উচ্চারণ ও তর্জমাসহ এই ডিজিটাল কোরআন শরীফ আমরা তৈরি করি।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছেন। কিন্তু জেলায় জেলায় কোনো অফিস ছিলো না।  আমরা তা প্রতিষ্ঠা করি।

অতীতে সবকিছুতেই মুসলমানরা নেতৃত্বে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিকিৎসা শাস্ত্র বলি বা অষ্ট্রোনোলজি বলি, বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে ছিলো। এখন কেন তারা পিছিয়ে থাকবে সেটাই আমার প্রশ্ন।  আমরা এই মসজিদগুলো করেছি।

এ সময় মডেল মসজিদের সুযোগ-সুবিধার বর্ণনা দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, মসজিদগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে, অসুস্থ বা প্রতিবন্ধি তারা যেন মসজিদে উঠতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে হিফজাখানা, হজযাত্রী এবং ইমামদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুসল্লিদের জ্ঞান আহরণের জন্য পাঠাগার থাকবে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই পুস্তক সেখানে রাখা থাকবে, সেখানে ইসলামিক সংষ্কৃতিক কেন্দ্র, ট্রেনিং এবং সবধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও উপজেলার পর্যায়ের অফিস, কনফারেন্স হল, গবেষণা কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী বর্ণার, হজ যাত্রীদের প্রাক নিবন্ধন এবং দেশি-বিদেশি পর্যটক আসলে সেখানে যাতে থাকতে পারে।

দেশ থেকে মাদক নির্মূলেও এই মডেল মসজিদ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মাদক আমাদের সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাদকের হাত থেকে যাতে মানুষ মুক্ত হতে পারে। এজন্য সবাইকে অনেক সচেতন হতে হবে।  সব ধর্ম-বর্ণ-পেশার মানুষকে নিয়ে কমিটি করে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি আমাদের মাদক, শিশু ও নারী নির্যাতন বা পাশবিকতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই মসজিদ আমরা সেভাবেই তৈরি করেছি যেখানে সব ধরনের প্রচার এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা যাতে আরও বৃদ্ধি পায়।

এ সময় হ্জ যাত্রীদের হজ পালন ও যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনারভাইরাসের সময়ে মসজিদ-মাদ্রাসায় সরকারের দেওয়া সহযোগিতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ইসলাম প্রচার-প্রসারে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’ এ সময় কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

 পারভেজ/এসবি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়