ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মদ-জুয়া-ক্লাব নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা

সংসদ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৭, ১৭ জুন ২০২১   আপডেট: ১৭:০৫, ১৭ জুন ২০২১
মদ-জুয়া-ক্লাব নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা

চিত্রনায়িকা পরীমনির ঘটনায় সূত্র ধরে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব, মদ ও জুয়া নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনায় হয়েছে জাতীয় সংসদে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বাজেট অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সূত্রপাত ঘটালেও তাতে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য দলের এমপিরা অংশ নেন।  এ সময় মদের অনুমোদন নিয়ে পরস্পরের ওপর দোষারোপ করা হয়। এর প্রেক্ষাপটে আলোচনায় কিছুক্ষণের জন্য সংসদ সরব হয় ওঠে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতে জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা বোট ক্লাব। কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হয়? শুনেছি, ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে এ ক্লাবের সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা ক্লাবের সদস্য হন? আমরা তো ভাবতেই পারি না।’

মুজিবুল হক বলেন, এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন–গ্যালন মদ বিক্রি হয়।  লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এত মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে এসব ক্লাবের সদস্য হন? এত টাকা কোথা থেকে আসে?

তিনি আরও বলেন, ‘গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়। সেখানে ড্যান্স হয়। নেশা করা হয়। মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন, কেন এসব হচ্ছে? কেন এগুলো বন্ধ করা হবে না? ওই সব ক্লাবের সদস্য কারা হয়?’

সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম  বলেন, এ তো বোট ক্লাব। জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার দিয়েছিলেন। হিজবুল বাহার করেছিলেন। যারা অপরাধের শুরু করেছেন, তাদের আগে বিচার করা উচিত।  ওখান থেকে ধরতে হবে।

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের বিরোধীদলের এক সংসদ সদস্য (মুজিবুল হক) একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বিদেশি কূটনীতিক, ডোম ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের জন্য জিয়াউর রহমান মদের বৈধতা দিয়েছিলেন। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে জিয়াউর রহমান মুসলমানদের জন্য মদের লাইসেন্স দিয়েছেন, তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপিরা নন, সব থানার পুলিশ এসব ক্লাব থেকে টাকা নেয়। ’ এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এরপর ফ্লোর নেন শেখ সেলিম। তিনি বলেন, ‘লাকী খানের নাচের কথা কি ভুলে গেলেন? হিজবুল বাহার? জিয়াউর রহমান এগুলো করেছিলেন। এসবের জন্য বিএনপি দায়ী। সত্যকে স্বীকার করে নিতে হবে।’

এরপর তরিকত ফেডারেশনের সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘হারুন সাহেবের সদস্যপদ আজই ছেড়ে দেওয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে, মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।’

জাতীয় পার্টির সদস্য ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। তারপর আইনটার অপব্যবহার হচ্ছে। একজন চিকিৎসক দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, জীবন বাঁচানোর জন্য প্রতিদিন মদ খেতে হবে। তারপর লাইসেন্স নেওয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল।’

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিষয়ে রাঙ্গা বলেন, ‘পরীমনি অভিযোগ করেছেন।  প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচার হবে। দোষী হলে শাস্তি হবে।’

/আসাদ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়