ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনা পরিস্থিতিকে ‘তৃতীয় ওয়েভ’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২১, ১৯ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:২২, ১৯ জুন ২০২১
করোনা পরিস্থিতিকে ‘তৃতীয় ওয়েভ’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

লকডাউন ঠিক মতো না মানা, গণপরিবহনে মাস্ক না পরাসহ সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে অবহেলা, গত ঈদের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মার্কেটে লাখো মানুষের হুড়োহুড়ি, বিধিনিষেধ তোয়াক্কা না করে গাদাগাদি করে রাজধানী ছেড়ে যাওয়াসহ নানাবিধ কারণে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনার বর্তমান অবস্থাকে ‘তৃতীয় ওয়েভ’ বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার (১৮ জুন) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জ গড়পাড়া নিজ বাসভবনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের অনেক হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীতে ভরে গেছে। যেভাবে রোগী বাড়ছে, এই পরিস্থিতিতে রোগী সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ঢাকায় করোনা আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশের নমুনায় ভারতীয় ধরন পাওয়া গিয়েছে বলে আইসিডিডিআরবি’র গবেষণা তথ্যে জানা গেছে। যদিও সম্প্রতি ঢাকায় করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সম্প্রতি রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনা, যশোরসহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। যার কারণে একে করোনার তৃতীয় ওয়েভ বলে সন্দেহ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীতে শনাক্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের নমুনায় ভারতীয় ধরন পাওয়া, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অত্যধিক আক্রান্তের কারণে মনে হচ্ছে এটা করোনার তৃতীয় ওয়েভ। এ ব্যাপারে সবাইকে আরও বেশি করে সতর্ক এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে বড় ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘সামনে কোরবানীর ঈদ আসছে। কোরবানীর হাট, বিভিন্ন গণজমায়েত, সমাবেশ, মার্কেটে ভিড় করা যাবে না। ঈদের সময় কোনোভাবে রাজধানী ছেড়ে মানুষ যাতে বের হতে না পারে, সেদিকে প্রশাসনকে কার্যত সতর্ক থাকতে হবে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘বিধিনিষেধ আর লকডাউন স্বত্ত্বেও বিপজ্জনক হারে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। ভারতে নির্বাচন, রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। বর্ডার খোলা থাকার কারণে অনেকে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট নিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। যার ফলে বর্ডার এলাকার কয়েকটি জেলায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। আমাদের সবাইকে আরও অনেক বেশি সচেতনভাবে চলাফেরা করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে মাস্ক পরাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে সাধারণের মধ্যে চরম উদাসীনতা রয়েছে।’ 

শিক্ষাবিদ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘বেশ কমে গিয়েছিল করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কিন্তু গত রোজায় লকডাউনের তোয়াক্কা না করে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে, রাজধানী ছাড়া মানুষেরা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সেখানে করোনা ছড়িয়েছেন। যার কারণে ইদানীং রাজধানীর বাইরে আক্রান্ত এবং মৃতেও সংখ্যা বাড়ছে। সবাইকে আরও বেশি সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, গত মে মাসের ১০ তারিখ থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহের তুলনায় জুন মাসের একই সময়ে সারাদেশে করোনায় মৃত্যু এবং আক্রান্তের হার অনেক বেশি। মে মাসে ১০ থেকে ১৭ তারিখে প্রতিদিন গড় মৃত্যু ছিল ৩০.৮৭ জন, আর জুনে এসে একই সময়ে গড় মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৯.৫০ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিনের হিসাব মতে, ১০ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৪৭ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৪৪। প্রতিদিন গড় আক্রান্ত ৯১৮ জন। অপরদিকে জুনের একই সময়ে করোনায় মারা গেছেন ৩৯৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৮ জন। প্রতিদিন গড় আক্রান্ত ২ হাজার ৯০৮.৫০ জন।

ঢাকা/মেসবাহ/এমএম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়