দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো : প্রধানমন্ত্রী
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সারাদেশ ঘুরে মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখে তাদের জন্য কিছু করার শপথ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২০ জুন) অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল আশ্রয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০টি ভূমিহীন পরিবারকে নতুন ঘর ও জমি উপহার দেওয়া উদ্বোধন করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। সকাল সাড়ে ১০টার পর ঘর ও জমি প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন কষ্ট করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার একটাই চাওয়া ছিল, বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে।
‘যখন দেশে আসলাম সেই থেকেই চেষ্টা ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো। সারা দেশ ঘুরে মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখেছি। তখন শপথ নিয়েছিলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সব দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করবো।আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের পাশে ছিল।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। একটা ঘর যখন পায়, যখন মানুষের ভিতরে যে আনন্দ, তার মুখে যে হাসি, এর থেকে বড় পাওয়া তো আর কিছু না। আমি মনে করে করি এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু না।’
তিনি বলেন, ‘যার ঘর নাই বাড়ি নাই তাকে ফুটপাতে পড়তে হয়। রাস্তার পাশে, রেললাইনের পাশে বা বিভিন্ন জায়গায় ঝড় বৃষ্টি বাদলা সবকিছু মাথায় নিয়ে থাকে জীবনযাপন করতে হয়। সে যখন একটা ঘর পায়, তার জীবনটাই বদলে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য মানুষ। মানুষের জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ, এটিই তো সব থেকে বড় কথা।’
দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ককে অনুসরণ করেই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা আজকে আশ্রয়ণের মাধ্যমে এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ ঘর পাবে সেই সঙ্গে তাদেরকে কিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়, ঋণ দেওয়া হয় এবং নগদ টাকা দেওয়া হয়, তাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। যেন ভালোভাবে মানুষ বাঁচতে পারে, কিছু করে খেতে পারে।
বস্তিবাসীর জন্য সরকারের ফ্ল্যাট নির্মাণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ভাড়া দিয়েই যখন থাকবে তখন ভালোভাবে থাকুক। আমরা তাই বস্তিবাসির জন্য ভাড়ায় থাকায় জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। তাদের ভাড়া দিয়েই থাকতে হবে। যে টাকাটা তারা ভাড়া দেয় একটা বস্তির ঘরের জন্য ঠিক সেই টাকাটাই তারা ভাড়া দেবে কিন্তু তারা থাকবে একটু ভালো পরিবেশে। সে প্রকল্পটাও আমরা নিয়েছি, খুব শিগগিরই পুনর্বাসন শুরু করে দেব।
‘এভাবেই সমাজের একেবারে নিম্মস্তরে পড়ে থাকা মানুষগুলো তাদেরকে টেনে তোলা তাদেরকে মানে অন্তর্ভুক্তি করা, মূল জনগণের সঙ্গে। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। অর্থ সংগ্রহ করা জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করা, তাদের বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা এই নীতিমালাটিই হচ্ছে আমাদের আওয়ামী লীগের নীতি। এটিই আমাদের জাতির পিতা শিক্ষা দিয়েছেন এবং সেই নীতিমালা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিহীনদের খাসজমি দেওয়া এবং তাদের জন্য গৃহনির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন, সেই থেকে যাত্রা শুরু।
ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে স্থায়ী ঠিকানা করে দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়ে তহবিল চালু করা হয়। পরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে আসেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা সরকারের প্রথমবার পাঁচ বছর, আর তারপর দ্বিতীয়বার এবং আজকে আমরা সরকারে আছি একটানা তৃতীয়বার। এর মধ্যে আমরা প্রায় ১০ লক্ষের উপর মানুষকে গৃহনির্মাণ করে দিতে সক্ষম হয়েছি। জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমাদের লক্ষ্য তার সৃষ্ট এই বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ‘আশ্রয়ন-২’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এর আগে দুই শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছে ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার।
রোববার দ্বিতীয় ধাপে আরও সাড়ে ৫৩ হাজার অসহায় ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারকে নতুন ঘরের দলিলসহ চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হলে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১ লাখ পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
/পারভেজ/সাইফ/
আরো পড়ুন