ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সন্তানকে ফেরত চান অসহায় মা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২২ জুন ২০২১   আপডেট: ২০:০৫, ২২ জুন ২০২১

২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় নীলা আর মোয়াজের। বছর খানেক বেশ ভালোই সংসার চলছিল তাদের। সংসারে প্রেম-ভালোবাসা-ছন্দ সবই ছিল।  যখন তাদের প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, সমস্যার শুরু হয় এরপরই। ছন্দপতন ঘটে নীলা-মোয়াজের সংসারে।  

নীলা-মোয়াজের ঘর আলো করে মেয়ে শিশুটির জন্ম হয় ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।  মেয়ের নাম রাখা হয় ‘মাইরিন’।  সেই মাইরিনকে ৫ মাস বয়সে মায়ের কাছ থেকে নীলার ননদকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব শুনে নীলার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।   মা তার সন্তান অন্যকে (ননদ) দিতে চান না।  আর সে থেকেই শুরু হয় নীলার সংসারে অশান্তি।

নীলার স্বামী মেয়াজরা এক ভাই, এক বোন। আদরের ছোট বোনটির বিয়ে হয়েছে প্রায় ১১ বছর ধরে। বোনের কোনো সন্তান নেই। তাই বোনের প্রতি ভালোবাসায় নিজের একমাত্র সন্তানকে দিয়ে দিতে চায় বোনকে।  স্ত্রী নীলা সেটা মানতে চায় না।  এই না দেওয়ার কারণেই নীলার সংসারে শুরু হয় ঝড়।

শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ এবং স্বামীও তার ওপর অত্যাচার করা শুরু করেন। প্রথমদিকে সেই অত্যাচার মানসিক পর্যায়ে থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা শারিরীক অত্যাচারে পরিণত হয়। প্রায় প্রতিদিনই চলে সদ্য মা হওয়া একজন তরুণীর ওপর পরিবারের অত্যাচার। এতকিছুর পরও নিজের সন্তানকে না দেওয়ার বিষয়ে অটল থাকেন নীলা।

নীলা জানান, এসবের মধ্যে আবারও দ্বিতীয় বারের মতো মা হন তিনি। প্রথম সন্তান হারানোর ভয়, শারিরীক-মানসিক অত্যাচার, আরেকটি সন্তান আসা- সবমিলিয়ে খুব খারাপ সময় যাচ্ছিল তার।  এ সময় স্বামীর কোনো ভালোবাসা, সহমর্মিতা পাননি তিনি। উপরন্ত কোলের মেয়েটিকে দিয়ে দেওয়ার জন্য মানসিক চাপ চলতেই থাকে।  এসব নিয়ে কথা কাটাকাটির মধ্যে একদিন স্বামী নীলার পেটে লাথি মারেন।  সে লাথির আঘাতে তার পেটের বাচ্চাটি মারা যায়।

নীলা আরও জানান, সন্তান হারানোর ভয়ে মা একদিন নিউমার্কেট থানায় জিডি করেন। থানা জিডি নিলেও এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।  এরপরও কয়েকবার নীলা নির্যাতন এবং সন্তানকে কেড়ে নিতে চায় মর্মে নিউমার্কেট থানায় একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাননি।

গত ২৮ এপ্রিল নীলার প্রতি শারিরীক অত্যাচার করে, তখন নীলা অন্তঃসত্ত্বা। অমানুষিক অত্যাচারের পর নীলা যাতে থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করতে না পারে, সেজন্য তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় ৩০৬ ও ৩২৬ ধারায় মামলা করে গত ২৯ এপ্রিল।  সেদিনই নীলাকে নিউমার্কেট থানা পুলিশ এলিফেন্ট রোডের শ্বশুরের ফ্ল্যাট থেকে ধরে নিয়ে যায়।  তার শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ থাকায় তাকে পুলিশের তত্বাবধানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরেরদিন নীলাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

৩০ এপ্রিল থেকে ১ মাস ৭ দিন তিনি কারাগারে ছিলেন।  সেই সময় তার সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় হলে নীলাকে কারাগার পুলিশের তত্বাবধানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৬ জুন তার তৃতীয় সন্তান জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পরেরদিন ৭ জুন নীলার জামিন হয়।  এরপর থেকে নীলা বার বার চেষ্টা করেও তার শ্বশুর বাড়ির কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।  ৭ জুন থেকে বাবা-মায়ের তত্বাবধানে আছেন।

নীলারা ৬ ভাই বোন। তার বাবার বাসা রাজধানীর মিরপুরে।  গত ২৯ এপ্রিল থেকে এখন (২২ জুন) পর্যন্ত নীলার শ্বশুরবাড়ির কেউ তার খোঁজ নেয়নি। এমন কী নীলার আড়াই বছরের মেয়েটি ওই পরিবারে কী অবস্থায় আছে, সেটাও তিনি জানেন না। সন্তানটি ওই পরিবারে আছে না তাকে নীলার ননদকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে- সেটাও জানেন না মা নীলা।

তিনি শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকতে চান।  আর যদি তারা নীলাকে গ্রহণ করতে না চান, সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদেও তার আপত্তি নেই।  তিনি এর একটা সমাধান চান। তার আগে একজন মা হিসেবে, শ্বশুর বাড়িতে থাকা তার আড়াই বছরের সন্তানকে নিজের কাছে ফেরত চান নীলা। এই বিষয়ে তিনি তার শ্বশুর  সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের কাছে সন্তানকে ফেরত দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২২ জুন) এ বিষয়ে নীলার স্বামী মোয়াজ আরিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

/মেসবাহ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়