ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মাকে খুঁজে পাচ্ছে না ছোট্ট পাখি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১০ জুলাই ২০২১  
মাকে খুঁজে পাচ্ছে না ছোট্ট পাখি

খালার সাথে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে পাখি

মা, পরম মমতায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সন্তানকে আগলে রাখেন। কিন্তু সেই মা যখন হারিয়ে যান বা নিখোঁজ থাকেন, তখন সন্তানের দুঃখের সীমা থাকে না। মায়ের মমতার অভাব তাকে পাগল করে তোলে। 

অনিশ্চয়তার দোলায় দুলে বুক ভরা ব‌্যাথা নিয়ে ৬ বছরের অবুঝ পাখিও খুঁজতে এসেছে মা নাজমা বেগমকে (৩৮)। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন নাজমা বেগম। 

শনিবার (১০ জুলাই) সকাল থেকেই খালা মমতাজ বেগমের সঙ্গে মাকে খুঁজতে ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে আসে পাখি। মাকে খুঁজে না পেয়ে বারবার খালাকে জিজ্ঞেস করছিল সে- ‘‘মা কোথায়?’ কখন আসবে? আমি মা’র কাছে যাবো।’ 

অবুঝ শিশুর এ আকুতি দেখে নিজেকে কোনোভাবে সামাল দিতে পারছিলেন না খালা। অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছিলেন।

রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘নাজমা কারখানার চার তলায় নেসলে শাখায় চাকরি করত। স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম। দুই সন্তানসহ চার জনের পরিবার তার আয়ের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। ঘটনার দিন রাত ৮টা পর্যন্ত নাজমার মোবাইলে রিং হয়। তবে সে ফোন ধরেনি। রাত ১২টার পর মোবাইলে আর কল যায়নি। কেন যেন তখনই মনে হয়েছিল, তার মোবাইলটিও আগুনে পুড়ে গেছে। বোনকে খুঁজতে প্রথমে ঘটনাস্থলে যাই। এরপর নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল। সর্বশেষ ঢামেক হাসপাতালে খোঁজ করছি। রক্ত দিলাম, বোনের লাশটি যেন পাই। সন্তানরা মায়ের মুখখানি শেষবারের মতো হলেও যেন দেখতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন নাজমা। প্রতিমাসে যে বেতন পেতেন তা দিয়েই পরিবারের ভরণ পোষণ চলতো। এখন নাজমা চলে গেল, তার স্বামীও অক্ষম। তার দুই অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছি।’ 

সরেজমিন ঢামেক হাসপাতাল ঘুরে আরও দেখা গেছে, ৪৯ জনের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। কয়েকশ’ স্বজন ভিড় করেছেন মর্গোর সামনে। তাদের কারও মা-বোন, কারও বা ভাই নিখোঁজ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি পরিকল্পনামাফিক কি না সেটা জানতে হাসেম বেভারেজের স্বত্বাধিকারী ও সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম ও তার দুই ছেলেসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর পরিষ্কার তথ‌্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (১০ জুলাই) রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘটনার পারিপার্শ্বিক এবং প্রাপ্ত বেশকিছু তথ্য নিয়ে আমরা তদন্তে নেমেছি। আশা করছি আগুনের প্রকৃত কারণ দ্রুত বেরিয়ে আসবে।’

অন্যদিকে ঘটনার পর শ্রমিক ও আশপাশের লোকজন অভিযোগ করছেন, ভয়াবহ আগুনের এ ঘটনার কয়েকদিন আগেও কারখানাটিতে আরেকবার আগুন লাগে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) কারখানায় ভয়াবহভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় বের হওয়ার গেট তালা মারা ছিল। শ্রমিকদের আত্মচিৎকারেও কর্তৃপক্ষ সেটি খুলে দেয়নি। আটকে পড়া শ্রমিকদের অনেকেই জীবন বাঁচাতে ছাদের ওপর উঠে যান। কেউ কেউ বাঁচার আশায় লাফিয়ে নিচে পড়ে জীবনও দিয়েছেন। অনেকেই আহত হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। 

এসব দায় কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এ কারণেই পুলিশের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও আগুনের প্রকৃত কারণ এবং কারো কোনো গাফিলতি কিংবা দায় আছে কি না তাও খুঁজে বের করছে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ৬ তলা ওই কারখানাটিতে হঠাৎ আগুন লেগে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। এ সময় ভেতরে কর্মরত শ্রমিকরা আটকে পড়েন। এ ঘটনায় ৫২ জনের মৃত‌্যু হয়।

ঢাকা/মাকসুদ/বুলবুল/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়