শেষ ২৪ দিনে মৃত্যু ৫ হাজার, প্রাণহানি ২০ হাজার ছাড়ালো
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
মাত্র ২৪ দিনে ৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর বুধবার (২৮ জুলাই) করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।
করোনায় দ্রুততম সময়ে এত সংক্রমণ ও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে, এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, 'সংক্রমণ বেশী হলে সঙ্গত কারণে মৃত্যুও বেশী হবে। এটাই এই রোগের নিয়ম। এর প্রতিকার, সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ভ্যাকসিন নেওয়া। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও সবসময় মাস্ক পরতে হবে। লকডাউন মেনে বাসায় থাকতে হবে। নইলে এই করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।'
তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, 'হিসেব জানাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে সময় লেগেছে ৬ মাসেরও বেশি। মৃতের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ হাজার হতে সময় লেগেছে প্রায় ৭ মাস। মৃত্যু সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার যেতে সময় লেগেছে ২ মাস ১৯ দিন। আর ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজারে পৌছেছে মাত্র ২৪ দিনে। এবারের দ্রুততম সময়ে মানুষের সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক আক্রান্তদের প্রায় ৭৮ শতাংশের নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে আবার ৬৯ শতাংশ তরুণ যুবকরা সংক্রমিত হচ্ছে। আগের সংক্রমণের সঙ্গে বর্তমানের অনেক পার্থক্য রয়েছে।'
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পরে ৭০ বছর বয়সি প্রথম পুরুষ রোগী মারা যান ১৮ মার্চ ২০২০ সালে। প্রথম রোগী মারা যাওয়ার ২ মাস ২২ দিন পরে, ১০ জুন ২০২০ সালে মৃতের সংখ্য দাঁড়ায় ১ হাজার জনে। এই সময়ে গড় মৃত্যু ছিল দিনে ১২ জন।
এরপর ১ হাজার থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ মাস ১২ দিন। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭ জনে। এই সময়ে দিনে গড় মৃত্যু ছিল ৩৯ জন।
৫ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পর সেই সংখ্যা ১০ হাজারে যেতে সময় লাগে ৬ মাস ২২ দিন। এ সময় করোনায় শনাক্ত এবং মৃতের হার ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল করোনায় অক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮১ জনে। এই সময়ে গড় মৃত্যু দৈনিক ২৫ জন।
এরপর রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাওয়ার আন্তঃজেলা গণপরিবহন। পাশাপাশি সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বন্ধ করার জন্য আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি ট্রেন এবং সকল ধরণের যাত্রীবাহী নৌযানও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দুই ঈদে মানুষজনের রাজধানী ছেড়ে যাওয়া বন্ধ করা যায়নি। বিকল্প উপায়ে মানুষ রাজধানী ছেড়েছে এবং রাজধানীতে ফিরে এসেছে। অপরদিকে ভারতের বর্ডার বন্ধ থাকলেও বৈধ-অবৈধ উপায়ে মানুষ ভারতে যাওয়া-আসার মাধ্যমে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শরীরে বহন করে তা ছড়িয়েছে সারা দেশে। যার কারণে ঢাকায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কমে গিয়ে সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে তা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এক পর্যায়ে রাজধানীর বাইরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। সে ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল যেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮১ জন, সেখানে মাত্র ২ মাস ১৯ দিনে (৭৯ দিনে) ১০ হাজার থেকে বেড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৫ জন। এ সময় দিনে গড়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৩ জন।
সব চেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ১৫ থেকে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার হতে সময় লেগেছে মাত্র ২৪ দিন। ৪ জুলাই থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) মাত্র ২৪ দিনে আরও ৫ হাজার মানুষ মারা গিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে। এই সময়ে গড়ে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৯ জনেরও বেশি।
এক দিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ২৫৮ জন। এনিয়ে মোট ২০ হাজার ১৬ জন মারা গেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। আক্রান্তের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে বুধবার (২৮ জুলাই) ১৬ হাজার ২৩০ জন। আজ (২৮ জুলাই) পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জন।
ঢাকা/ মেয়া/ এমএম
আরো পড়ুন