ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘সবাই ভেবেছিলেন, আমি মারা গেছি’

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ২১ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১১:২৬, ২১ আগস্ট ২০২১
‘সবাই ভেবেছিলেন, আমি মারা গেছি’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন নাজমুল হাসান নাজিম। তিনি ওই সময় ভৈরব উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। বীভৎস সেই হামলায় চোখের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন আইভী রহমানকে। তাকে বাঁচাতে তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রেনেডের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যান নাজমুলও। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান রাস্তায়। সবাই মনে করেছিলেন, তিনি মারা গেছেন।

শরীরে শত শত স্প্লিন্টার নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন নাজমুল। তিনি বলেন, ‘আসলে স্প্লিন্টারের জ্বালা কী, কত কষ্টের, তা বলে বোঝানো যাবে না। যার শরীরে স্প্লিন্টার বিঁধেছে, সে-ই অসহ্য এই যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারে।‘

এখন শরীর কেমন, কীভাবে চিকিৎসা চলছে, জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘শরীরে অনেক স্প্লিন্টার আছে এখনো। শুধু আমার পেটেই ১০-১২টা অপারেশন হয়েছে। পরে পায়ে হয়েছে। আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বিদেশ থেকে উন্নত চিকিৎসা করিয়ে এনেছিলেন। পরে স্প্লিন্টারগুলো আর বের করা হয়নি।’

‘২০০৪ থেকে খুব কষ্টে আছি। এসব চিকিৎসা দেশের বাইরে ছাড়া হবে না। সবগুলো স্প্লিন্টার বের করা যাবে না। যার শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ঢুকেছে, সেই বোঝে কী কষ্ট। মাঝে মাঝে শরীর অবশের মতো হয়ে যায়। যেখানে স্প্লিন্টার আছে, গরমকালে সেখানে খুব চুলকায়।’

ব্যথার ওষুধ খেতে খেতে কিডনিতে সমস্যা হয়েছে, জানিয়ে নাজমুল হাসান নাজিম বলেন, ‘ওষুধ না খেলে আর চলা যায় না। ডাক্তার বলেছে যে, এ ট্যাবলেট আর খাওয়া যাবে না। আমি এখন কিডনি নিয়ে বড় সমস্যায় আছি।’

চিকিৎসা করতে করতে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছেন, জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অধৈর্য হয়ে গেছি… আসলে কী দিয়ে কী করব। আপা আসলে অনেক চেষ্টা করেছেন, আমাদের জন্য অনেক করেছেনও তিনি। উনি ওই সময়ে উন্নত চিকিৎসা না করালে আজকে আমি হয়তো এই অবস্থায় থাকতাম না। গুরুতর আহত ২২ জনের মধ্যে সবাই জানত, আমি মারা গেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেঁচে আছি।’

সেদিনের ঘটনার ভয়াবহতা স্মরণ করে নাজমুল বলেন, ‘মঞ্চের একেবারে কাছে আমি গিয়েছিলাম। নেত্রীর বক্তব্য শেষে যখন বললেন, এখন র্যালি হবে, তখনই বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরণ। আমি একেবারে ট্রাকের কাছে ট্রাক ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যখন আপা নামতে যাবেন, তখনই এই ঘটনা। আইভি আপা নিচে ছিলেন। বিকট শব্দের পরপরই তিনি পড়ে গেলেন। তাকে সেভ করার জন্য তার কাছে যেতে যেতে আমিও গ্রেনেডের আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর আমি কিছু বলতে পারি না।’

‘গ্রেনেডের আঘাতে আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়, ভুড়ি বের হয়ে যায়, পায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এখনও পা প্লাস্টার করা। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাংস এনে পায়ের ক্ষতগুলো পূরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।’

স্প্লিন্টারের কারণে চলাফেরা ঠিকমতো করতে পারেন না, জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১০০-২০০ হাত হাঁটলেই আর পা চলে না।’

গ্রেনেড হামলার পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যেভাবে খোঁজ-খবর রাখছেন, অন্য নেতারা তার ছিটেফোঁটাও করেননি বলেও অভিযোগ করেন নাজমুল।

তিনি বলেন, ‘মা-বাবা যেভাবে সন্তানকে দেখেন, আপা সেভাবে আমাদের দেখেছেন। আপার মতো করে সেভাবে কেউ হয়তো দেখে না বা চিন্তাও করে না। তিনি একা কত দেখবেন। অন্যরা ওনার মতো তো দায়িত্বশীল না। শ্রদ্ধেয় প্রয়াত জিল্লুর রহমান সাহেব আমাদের দিকে নজর রেখেছিলেন। ২১ আগস্টে আহতদের দেখভালোর জন্য একটি কমিটি করা হয়েছিল। এর সভাপতি করা হয়েছিল আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যারকে। এখনও উনি সভাপতি হিসেবে আছেন।’

পারভেজ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়