১১৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকায় ১১ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

এক হাজার ১৪৬ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩৯ টাকা ব্যয়ে ১১ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়।  সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন। 

অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১২টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।  এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ২টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ২টি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১টি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ১টি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ৪তলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব ফেরত দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবর বিস্তারিত জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো.সামসুল আরেফিন।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১,ডেভেলপমেন্ট অব শ্যাওলা,ভোমরা,রামগড় ল্যান্ডপোর্টস অ্যান্ড আপ-গ্রেডেশন অব সিকিউরিটি সিস্টেম অব বেনাপোল ল্যান্ড পোর্ট  প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় রামগড় স্থল বন্দর উন্নয়নের পূর্ত কাজ সম্পাদনের জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৫টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়।  দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মোনিকো লিমিটেড, ঢাকা এর কাছ থেকে ১২৩ কোটি ৯১ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৩ টাকায় ডেভেলপমেন্ট অব রামগড় ল্যান্ড পোর্ট প্যাকেজের পূর্ত কাজ ক্রয়ের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সভায় কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের বাস্তবায়ন তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল ইস্যু করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠানই প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হয়।  প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে(১) ডব্লিউওওজেওও এবং (২) কোরিয়ার সানজিন কে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।  এজন্য ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৩০ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়ে কোনো সুপারিশ না করায় বর্ণিত ক্রয়ে নেগোসিয়েশন সম্পন্ন করে পিইসির সুপারিশসহ ক্রয় প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশনার জন্য উপস্থাপন করা হয়।  কমিটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।

সামসুল আরেফিন বলেন, গত ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর তারিখের সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে ‘কোষ্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, ফেজ-১’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) রয়্যাল হাসকোনিং ডিএইচভি, নেদারল্যান্ড বি.ভি (২) ডিএইচআই, ডেনমার্ক (৩) ডেভকন বাংলাদেশ (৪) ডিপিএম বাংলাদেশ এবং (৫) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, বাংলাদেশকে নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  এতে ব্যয় হবে ১৪০ কোটি ৯২ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ টাকা।  নিয়োগ দেওয়া হয়।  যার মেয়াদ গত ২০ জানুয়ারি শেষ হয়েছে।  কিন্তু জমি অধিগ্রহ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত (১৭ মাস) বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ টাকার ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীর কাছে তাদের কাঙ্খিত পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯৮টি লটের মধ্যে ৪৬টি লটে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১৯০ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত পুন:দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩০১টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ২৮৬টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ৪৬টি লটে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৭৩ কোটি ৮২ লাখ ৮১ হাজার ১৪০ টাকায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১৯০ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি।  প্রতিটি পাঠ্যপুস্তক গড় দাম ২২.১৫ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ১২.৫ শতাংশ প্রোটিন মাত্রার ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হলে ১টি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়।  দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ করা রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল এর কাছ  থেকে এই গম সংগ্রহ করবে। প্রতি মে.টন ৪২১.৩৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ৫০ হাজার মে.টন গমের জন্য খরচ হবে ২ কোটি ১০ লাখ  ৬৯ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭৯ কোটি ৫০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮০০ টাকা। খাদ্য অধিদপ্তরের এই প্রস্তাবটিতে প্রত্যাশামূলক অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

তিনি বলেন, শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-জি-৩৮জিআই লট-১ এর আওতায় ১৩ হাজার ৪০টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার কেনার জন্য অভ্যন্তরীণ উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (এক ধাপ এক খাম) দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপত্র জমা পড়ে যার সবগুলি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যান্স ইলেক্ট্রিক লিমিটেড, ঢাকা ট্রান্সফরমার গুলো সংগ্রহ করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৮৪ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ প্রকল্পের আওতায় ৫১ হাজার ৩৫৯টি এসপিসি পোল কেনার জন্য অভ্যন্তরীণ উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (এক ধাপ এক খাম) দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপত্র জমা পড়ে যার সবগুলি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড এর কাছ থেকে পোলগুলো কেনার প্রস্তাবে অনুমোদদন দিয়েছে কমিটি।  এতে ব্যয় হবে ৭১ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ১৯২ টাকা।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা’ স্থাপন প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণকৃত ভূমি উন্নয়ন কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অধিগ্রহণকৃত ৪৯৮.৪৫ একর ভূমি উন্নয়ন কাজ সম্পাদনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে।  তার মধ্যে ২টি টেকনিক্যালি রেসপনসিভ হয়।  দরপত্রের সব সবক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরুজ্জামান খান, ঢাকাকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  এজন্য ব্যয় হবে ২৩৯ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩২ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ২য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন  বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির  একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি মে.টন ইউরিয়া সার মার্কিন ডলার ৪৫০.৮৩৩ হিসেবে ৩০ হাজার মে.টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৩৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৫ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৮ টাকা।

সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মুনতাজাত, কাতার থেকে ৩য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অপর একটি ক্রয় প্রস্তাবেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি মে.টন ৪৩৬.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মে.টন  ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনতে  মোট মূল্য ১ কোটি ৩১ লাখ ৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১১ কোটি ৭১ লাখ  ৯২ হাজার ৭২৫ টাকা ব্যয় হবে।

এছাড়াও সভায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি বেসিক ইন্ডাষ্ট্রিজ করপোরেশন (সাবিক) সৌদি আরব থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মে.টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মে.টন ৪২৫.৮৩ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৮ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার ২২৫ টাকা ব্যয় হবে।