ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাহাড় পর্যটন নীতির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ১১ ডিসেম্বর ২০২১  
পাহাড় পর্যটন নীতির তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

পাহাড়ের ইকোসিস্টেম রক্ষার্থে পাহাড় কাটা ও গাছ কাটা বন্ধ করা এবং টেকসই পাহাড় পর্যটন নীতি জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) আয়োজনে ‘পাহাড়ের ইকোসিস্টেম রক্ষার্থে পাহাড় কাটা ও গাছ কাটা বন্ধ কর’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এ মতামত দেন। অনুষ্ঠানে পবার পক্ষ থেকে ১১টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পাহাড় বা পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। পাহাড়ের পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরাই এই দিবসের উদ্দেশ্য।

পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও পবা’র সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক ড. একেএম খোরশেদ আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. নুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন, গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাভেল পার্থ, গ্রিনফোর্সের সমন্বয়ক ও পবা’র সম্পাদক মেসবাহ সুমন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের একটা বড় অংশের পর্যটন এবং বিনোদন ভ্রমণ শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়। রেমাক্রী, তাজিংডং, চিম্বুক, ডিমপাহাড়, সাফাখুম, দেবতা পাহাড়, ক্রেওক্রাডং, বগালেক, সাজেক, সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে ভ্রমণের অজস্র ভিডিও আছে ইউটিউবে। বোঝা যায় পাহাড়ে পর্যটনের একটা দ্রুত বিকাশ ঘটেছে, কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট সুরক্ষা নীতিমালা বা প্রাথমিক কোনো পাহাড়ি-পর্যটন শিক্ষা ছাড়াই। এমনকি যারা স্রেফ মুনাফা বাড়াতে এসব পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে নানা স্থাপনা গড়ে তুলছেন তা স্থানীয় প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য’র জন্য কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ এসব মূল্যায়নও আমরা করিনি। পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্র এবং আদি সাংস্কৃতিক জীবন কিংবা টেকসই পাহাড়-পর্যটনের প্রসঙ্গকে বিবেচনা না করেই বান্দরবানের চিম্বুকে শোংনামহুং পাহাড়ে প্রশ্নহীনভাবে বিলাসবহুল ম্যারিয়ট হোটেল নির্মিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্র, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং পাহাড় সুরক্ষায় বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় নীতিকে বিশ্লেষণ করে পাহাড়বান্ধব পর্যটন বিকশিত করা জরুরি। সকলের অংশগ্রহণে ও জাতীয় পাহাড় সুরক্ষা নীতি গ্রহণ ছাড়া কোনোভাবেই এই টেকসই পাহাড়-পর্যটন সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে ১১ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- প্রকৃতি প্রদত্ত পাহাড়সমূহ জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা। টেকসই পাহাড় পর্যটন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। পাহাড়ের গঠন প্রকৃতি, বৃষ্টিপাতের মাত্রা ও পরিমাণের ভিত্তিতে পাহাড়গুলোকে সতর্ক, ঝুঁকিপূর্ণ, চরম ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীতে বিন্যাস করা এবং তার আলোকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। পাহাড় কাটা ও পাহাড়ের বৃক্ষ নিধন প্রতিরোধে অবিলম্বে সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা। পাহাড়ের অবৈধ দখলদার, ভূমিদস্যুসহ পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ও সহযোগিতাকারীদের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ইমারত নির্মাণ আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ জায়গায় বসবাসের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। প্রতিবেশের হুমকি ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সাইট নির্ধারণ এবং ইকোটুরিজম ও কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করা। পাহাড়ের গাছপালা ও মাটি কাটা বন্ধ করা। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ পাহাড় প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং বনভূমি ধ্বংস করে পাহাড়ে তাদের বসতি স্থাপন ও বন নির্ভর জীবনযাপনের ফলে পরিবেশের ইতোমধ্যে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে তা মূল্যায়নের জন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করা আবশ্যক। এ মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরিবেশ ও জীববেচিত্র্য সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাহাড় প্রতিবেশ ব্যবস্থার বিপর্যয় মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়