ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বায়ুদূষণে শীর্ষে গাজীপুর, দ্বিতীয় ঢাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২  
বায়ুদূষণে শীর্ষে গাজীপুর, দ্বিতীয় ঢাকা

ফাইল ফটো

বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বায়ুদূষণে শীর্ষে গাজীপুর। ঢাকা দ্বিতীয় ও নারায়ণগঞ্জ তৃতীয় অবস্থানে আছে।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষণার ফল অনুযায়ী, সবচেয়ে কম দূষিত শহরের শীর্ষে আছে মাদারীপুর। এর পরেই আছে যথাক্রমে পটুয়াখালী এবং মেহেরপুর।

‘দেশব্যাপী ৬৪ জেলার বায়ুমান সমীক্ষা-২০২১’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদন তুলে ধরেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও গবেষক দলটির প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

তিনি জানান, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জেলার বায়ুর মান বিশ্লেষণ করা হয়। এ সময় সাত ধরনের ভূমির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের বস্তুকণার মান পরীক্ষা করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সময়ে ৬৪ জেলার ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০২ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম, যা দৈনিক আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৫৭ গুণ বেশি।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ জেলার বিষয়ে বলা হয়, এ দুই জেলার বায়ুমান ছিল যথাক্রমে ২৫২ দশমিক ৯৩ এবং ২২২ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রাম। সবচেয়ে দূষিত তিনটি শহরের বায়ুমান ছিল বাংলাদেশের আদর্শমানের চেয়ে প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি। এর পরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম এবং কিশোরগঞ্জ।

অপরদিকে প্রচুর পরিমাণ গাছ ও জলাধার থাকায় সবচেয়ে কম দূষিত শহরের শীর্ষে আছে মাদারীপুর। যার বায়ুমান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ মাইক্রোগ্রাম। এরপরের অবস্থানে রয়েছে পটুয়াখালী এবং মেহেরপুর।

গবেষণা প্রতিবেদনে ৬৪ জেলার মধ্যে ১০টি জেলায় বায়ুমান ভালো, ৩৬টি জেলার বায়ুমান মধ্যম মানের এবং ১৮টি জেলার বায়ুমান অতিরিক্ত দূষিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ভালো বায়ুমানের জেলা: কুড়িগ্রাম, নাটোর, জয়পুরহাট, রাজবাড়ী, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, পটুয়াখালী এবং মাদারীপুর।

মধ্যমমানের দূষিত বায়ুর জেলা: যশোর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা, বরগুনা, খাগড়াছড়ি, সিলেট, গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, ঠাকুরগাঁও এবং জামালপুর।

অতিরিক্ত দূষিত বায়ুর জেলা: গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ফেনী, ঠাকুরগাঁও এবং জামালপুর।

ক্যাপসের গবেষণা থেকে উঠে আসে ৮টি বিভাগীয় শহরের মধ্যে বায়ু দূষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা শহর, সেখানে গড়ে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতির পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২৫২ দশমিক ৯৩ মাইক্রোগ্রাম। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণের তালিকায় সর্বনিম্নে আছে রাজশাহী শহর, সেখানে গড়ে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৫৬ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম।

দূষণ অনুযায়ী বিভাগীয় জেলা শহরগুলোর ক্রম হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, খুলনা ও রাজশাহী।

এছাড়া, গবেষণা প্রতিবেদনে দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলা এবং পাহাড়ি এলাকার বায়ুদূষণের কথাও আলাদা করে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণা থেকে দেখা যায়, উপকূলীয় এলাকার মধ্যে শুধু পটুয়াখালী জেলার বায়ুমান ভালো বায়ুমানের পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী এলাকার বায়ুমান অতিমাত্রার দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অপরদিকে, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, শরিয়তপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বরগুনা, এবং যশোর জেলা মধ্যম পর্যায়ের দূষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত।

পাহাড়ি এলাকার মধ্যে হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার জেলায় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ ২২০ দশমিক ১১ এবং ১৫৮ দশমিক ৮১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। যা নির্ধারিত মান মাত্রার ৩ দশমিক ৩৮ এবং ২ দশমিক ৪৪ গুণ বেশি।

বায়ুদূষণের কারণ—রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সংস্কার কাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্পকারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো।

বায়ুদূষণ রোধে ১৫ দফা সুপারিশ
১. শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি দিন ২-৩ ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানো।

২. নির্মাণকাজের সময় নির্মাণস্থান ঘেরাও করে রাখা ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

৩. রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাক ব্যবহার।

৪. অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন।

৫. ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা।

৬. সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর গাছ লাগানো এবং ছাদবাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা।

৭. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করা।

৮. দূষিত শহরগুলোর আশপাশে জলাধার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৯. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সেন্ড ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ানো।

১০, সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করা।

১১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

১২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো।

১৩. গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

১৪. গণমাধ্যমে বায়ুদূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করা।

১৫. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকরের ব্যবস্থা করা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘গবেষণাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা নয়। সরকার এলাকাগুলো ক্যাটাগরি করে রেখেছে। সেটা মাথায় রেখেই ডাটা নেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এটা বেজলাইন স্টাডি। এটি নিয়ে আরও কাজ করা উচিত।’

হাসান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়