বর্ষবরণে ফিরছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, চারুকলায় চলছে প্রস্তুতি
ছবি: মেসবাহ য়াযাদ
করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। বর্তমানে সারা দেশে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিকে ঘিরে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল), মাঝে একদিন বাকি। তারপরই বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। নববর্ষে এবারের প্রতিপাদ্য ‘তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।
লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে এবারে সাজানো হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সরেজমিন মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় দেখা গেছে, এবারের শোভাযাত্রার জন্য টেপা পুতুল, পাখাওয়ালা মাছ, ঘোড়া ও পাখির প্রতিকৃতি প্রাধান্য পাচ্ছে। এর বাইরেও শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষের হাতে থাকবে বিভিন্ন রকমের পুতুল, মুখোশ, সরাচিত্র ইত্যাদি।
শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর (গত দুই বছর বাদে) চারুকলা থেকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয় তার প্রায় পুরো খরচটাই আসে চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে করা বিভিন্ন চিত্রকর্ম বিক্রির মাধ্যমে। এবারের পহেলা বৈশাখ রমজান মাসে হওয়ায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা তুলনামূলক কম। সঙ্গত কারণে সরাচিত্র, মুখোশ, পেইন্টিংসহ বিভিন্ন চিত্রকর্ম বিক্রিও হচ্ছে কম। তবে এতে মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা।
চারুকলা অনুষদ ভেতরে ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে চারুকলার জয়নুল আর্টস গ্যালারিতে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হয়েছে। গ্যালারির বাইরে বারান্দায় শিল্পীরা বিভিন্ন ছবি-সরা-মুখোশ আঁকছে। সেসব বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন কারু শিল্পের জিনিসও বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করছেন শিল্পীরা।
চারুকলার বাইরের পুরো প্রাচীরে বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভেতরে বাচ্চাদের স্কুলটির বাইরের দেয়াল জুড়ে নকশিকাঁথার লোকজ সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভেতরে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা সরা, মুখোশ, ছবি এসব আঁকছে এবং সেসব আবার বিক্রির জন্য বাইরে এনে টানানো হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখে চারুকলা আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্বিক কাজের দায়িত্ব প্রতি বছরই একটি করে ব্যাচকে দেওয়া হয়। গত দুই বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা সীমিত পরিসরে হওয়ায় চারুকলার ২২ ও ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্ব পেয়েছে।
২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও চারুকলা অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, দুই বছর পর এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন আমাদের চারুকলায় পুরোনো আমেজ নিয়ে আসছে। এখানে জুনিয়র-সিনিয়র সবাই মিলে দিন-রাত কাজ করছেন। আশা করছি, ১৩ তারিখ রাতের মধ্যে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার সব কাজ শেষ করে ফেলবো। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ কাজ শেষ। এখন কেবল ফিনিশিং চলছে।
চারুকলার সাবেক ছাত্র কনক বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের খরচ আমরা সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা নিজেরা বহন করি। রমজান মাসের কারণে মানুষের উপস্থিতি একটু কম। তাই বিক্রিও কম। আমাদের সবার ওপরে একটু চাপ বেশি পড়বে। আজকে নিয়ে এখনও দুদিন সময় আছে। আশা করছি, এর মধ্যে প্রচুর লোক সমাগম হবে। তাতে আমাদের চিত্রকর্মগুলো অন্তত বেচাবিক্রি হবে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার কার্যক্রম দেখতে এসেছেন চারুকলার সাবেক ছাত্রী ইসরাত। তিনি তার সন্তান ও ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ইসরাত বলেন, প্রতি বছর শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছি। নিজে দিন-রাত কাজ করেছি। গত দু’টি বছর করোনার কারণে করতে পারিনি। এবার করোনা তেমন নেই বিধায় আয়োজন করা হয়েছে। দু’বছর পর হলেও এবার যে হচ্ছে তাতে ভীষণ রকম আনন্দ হচ্ছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে কারুশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুমিন মিল্টন বলেন, গত দুই বছর অত্যন্ত সীমিত আকারে হলেও এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা আগের মতই হবে। যদিও আকার ও জায়গা একটু কম। মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে এবারের শোভাযাত্রা টিএসসি থেকে ঘুরে স্মৃতি চিরন্তন হয়ে আবার টিএসসি এসে শেষ হবে।
উল্লেখ্য, অন্য বছরগুলোতে চারুকলা আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে টিএসসি, বাংলা একাডেমি, হাইকোর্ট, রমনা, শাহবাগ হয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হতো।
ঢাকা/এনএইচ
আরো পড়ুন