তামাকপণ্যের দাম বাড়ালে মৃত্যু কমবে, রাজস্ব বাড়বে
সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)।
মঙ্গলবার (১৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস।
সংবাদ সম্মেলনে তামাক কর বিষয়ে বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আয় বাড়বে, স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমবে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এর পাশাপাশি মধ্যমেয়াদে (২০২২-২৩ থেকে ২০২৭-২৮) সিগারেটের মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। কারণ, বর্তমানে চার স্তর বিশিষ্ট অ্যাডভ্যালুরেম কর কাঠামো চালু থাকায় সিগারেট অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ভোক্তা কম দামি ব্রান্ড বেছে নিতে পারছে।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
উল্লিখিত তামাক-কর ও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট খাত থেকে সরকারের ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এছাড়াও বিড়ি, জর্দা এবং গুলের মূল্যবৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে এবং এসব খাতে সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস, (সিটিএফকে) বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
উল্লেখ্য, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।
হাসান/রফিক
আরো পড়ুন