ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘টাকা উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আনিস’ 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ৫ জুলাই ২০২২  
‘টাকা উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আনিস’ 

গাজী আনিস

‘হেনোলাক্স কোম্পানির কাছ থেকে পাওনা ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন গাজী আনিস। শত চেষ্টা করেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের মন গলেনি। পাওনাদারের টাকা ফেরত দিতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।’ 
 
কুষ্টিয়ার ঠিকাদার নিহত গাজী আনিসের ভাই নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডি এসব কথা বলেন। টাকা না পেয়ে গাজী আনিস জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন। 

নজরুল ইসলাম বলেন, কাজী আনিস সৎ ও পরিচ্ছন্নভাবে জীবন যাপন করতেন। তিনি একজন ঠিকাদারও। ছাত্রজীবন শেষ করে কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তারই অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন কোম্পানিতে পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করতেন। তেমনই করেছিলেন হেনোলাক্স কোম্পানিতে। গাড়ির যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তিনি সরবরাহ করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং কোম্পানির চাহিদা মোতাবেক পণ্য দেন। দাখিল করেন পণ্য সরবরাহের মূল্য পরিশোধের তালিকাও। কিন্তু কোম্পানি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পণ্য নিয়ে বিক্রি কিংবা ব্যবহার করলেও কাজী আনিসের টাকা পরিশোধ করেনি।’

তিনি জানান, আনিস বিভিন্ন জনের সাহায্য নিয়েও টাকা তুলতে পারেনি। কোম্পানির লোকজন টাকাতো দেয়নি, তার সঙ্গে ঠিকমতো দেখাও করেনি। নিরাপত্তা প্রহরীরা অফিসের ভেতরে প্রবেশ করতে দিতো না তাকে। সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে  চলতি বছরের ৩১ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। কিন্তু কোনো কিছু করেই টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। 

জানা গেছে, ২০০০ সালের শুরুর থেকে আনিস সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানিতে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নে। তার বাবার নাম মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাস। নিহত গাজী আনিস তিন সন্তানের জনক। 

আরও পড়ুন: গায়ে আগুন দেওয়া ব্যবসায়ী মারা গেছেন

ছাত্র জীবনে তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তবে তার পরিবার থাকতো যশোরে। 

 মঙ্গলবার (৫ জুলাই) দুপুরে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুত হাওলাদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গাজী আনিসের লাশ ঢামেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তবে পরিবার যদি এখন অভিযোগ দেয় সেক্ষেত্রে তা মামলায় রূপ নেবে। পাশাপাশি মামলায় কাউকে আসামি করলে তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

এদিকে, আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। সেখানে তারা দায়ীদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। 

মানববন্ধনে নিহতের ছোট ভাই আবু তাহের বলেন, এরকম টাকা সে আরও অনেক কোম্পানির কাছে পায়। আমরা হেনোলাক্সের মালিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করবো।

উল্লেখ্য, পাওনা টাকা না পেয়ে সোমবার (৪ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে নিজের গায়ে আগুন দেন গাজী আনিস। তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। 

ঢাকা/মাকসুদ/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়