ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ৬ জুলাই ২০২২   আপডেট: ০৮:৫৭, ৬ জুলাই ২০২২
বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এ কারণে দেশে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। সম্প্রতি এ খাতে ৮৩৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৯ মাসে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে মোট ১২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ভর্তুকির চাপ সামলাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে আরও তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ভর্তুকির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। তারপরও এই সীমায় ভর্তুকি বেঁধে রাখা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস ওয়েলের দাম ৩০০ ভাগ বেড়েছে। এই ফার্নেস ওয়েলই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত দামে ফার্নেস ওয়েল কেনা হলেও সরকার কম দামে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিক্রি করছে। অন্য দিকে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকিও সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলে নতুন অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যাবে।

ভর্তুকির চাপ সামলাতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম শতকরা ৫ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে বলা হচ্ছে, খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়বে। কারণ বিপণন কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবে তা হয় না। গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১৬ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে বেড়েছে ৯০ ভাগ। বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াট ঘণ্টা পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরও তিন টাকা ৩৯ পয়সা। 

আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সঙ্কটে পড়েছে। দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৫২টি। সাধারণভাবে অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ৫৭ ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া দেওয়া হয়। তবে এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ ভর্তুকির অর্থ ছাড় করার জন্য অর্থ বিভাগের কাছে অনুরোধ করা হয়। তিন মাসের জন্য তারা পাঁচ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা চেয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বর মাসের জন্য চাওয়া হয়েছে এক হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের জন্য এক হাজার ৬২৩ কোটি টাকা এবং জানুয়ারি মাসের জন্য চাওয়া হয়েছে দুই হাজার ২০৫ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যায়ী হওয়ার আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেট থেকে এই অর্থ পরিশোধ করা হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। প্রতি তিন মাস অন্তর ভর্তুকির অর্থ দেওয়া হয়ে থাকে। গত ১১ বছরে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সরকার প্রতি বছর যে ভর্তুকি দেয় তার বেশির ভাগই দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। প্রতি বছর তা বেড়ে চলেছে। ২০১৬-২০১৭ সালে ভর্তুকির ৫৩ শতাংশ দেওয়া হতো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভর্তুকির ৮০ ভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে এই খাতে। চলতি অর্থবছরে ৩৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেওয়া হয়েছে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়