ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাড়ি পাওয়ায় ফিরে এলেন জমিরার স্বামী

  জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ২১ জুলাই ২০২২  
বাড়ি পাওয়ায় ফিরে এলেন জমিরার স্বামী

জমিরা খাতুন

একসময় যে স্বামী ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বাড়ি পাওয়ার পর সেই স্বামী আবারো ফিরে এসেছেন জমিরা খাতুনের কাছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের ‘মা’ সম্বোধন করে নফল নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করেছেন জমিরা।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দফায় আরো ২৬ হাজার ২২৯টি বাড়ি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চুয়ালি পাঁচটি স্পটে যুক্ত ছিলেন তিনি। 

তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দফায় ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন চর ভেড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্পেও বাড়ি দেওয়া হয় গৃহহীনদের মধ্যে। এখানে জমিসহ বাড়ি পেয়েছেন জমিরা খাতুন। এ সময় ময়মনসিংয়ের স্থানীয় ভাষায় তিনি জিজ্ঞেসা করেন, প্রধানমন্ত্রী ভালো আছেন কি?

জমিরা খাতুন জানান, এক সময় তাকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন তার স্বামী। তিনি এখন ফিরে এসেছেন। ঘর-স্বামী দুটো পেয়ে এখন তার খুশির শেষ নেই।

জমিরা খাতুন দুই রাকাত নামাজ আদায় শেষে বলেন, ‘আমার মা (শেখ হাসিনা) আপনার জন্য দোয়া করলাম। আমার বাড়ি ঘর কিছুই আছিলো না। আজকে আমার মা (শেখ হাসিনা) আমার পাশে দাঁড়াইছে। বাড়ি পাইছি, আমার স্বামী এখন আমার কাছে চলে আসছে। অনেক বছর আমার মায়েরে আল্লাহ বাঁচায় রাখুক।’

উপকারভোগীদের আরেকজন নাসিমা খাতুন। তাকে চার সন্তানসহ রেখে স্বামী চলে যান। কোনো উপায় না পেয়ে সন্তানদের মায়ের কাছে রেখে কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। এভাবে জীবনে সঙ্গে সংগ্রাম করে আসা নাসিমা শেখ হাসিনার উপহারের বাড়ি পেয়েছেন।

বাড়ি পেয়ে শুকরিয়া আদায় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি বেঁচে থাকেন দোয়া করি। আপনি দয়া করে আমাদের কাছে একবার আসবেন। আপনি কি নিজের চোখে আমাদের দেখে যাবেন না? আমাদের বাসায় এসে ডাল ভাত খেয়ে যাবেন।’

মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলাধীন জাঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেণ শাহিনুর বেগম। স্বামী পেশায় একজন ভ্যান চালক।

তিনি বলেন, ‘পরের বাড়ি থাকতাম। সন্তানরা একটু খেলাধুলা করলে তারা বলতো এখান থেকে চলে যাও। তখন খুব মন খারাপ হতো। চিন্তা করতাম একটা বাড়ি কবে হবে। আজ বাড়ি দেয়েছেন আপনি।’

শাহিনুর বেগমের বাড়ি নরসিংদী। ২০২০ সালে মা মারা যায় মাকে দেখতে পারেননি। সেই আক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন ঘণ্টা ফেরি পাড়ে বসে ছিলাম। আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। তিনঘণ্টায় এখন নরসিংদী চলে যেতে পারবো। এজন্য প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ।’

অন্যদের মতো পিয়াঙ্কা সরকারও এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখেন। পড়াশোনা করেন স্কুলে। তার বাবা ভ্যান চালায়। সাত সদস্যরে বড় পরিবারের টানাপোড়েনে মন্দিরের পাশে ছোট্ট একটি ঘরে থাকতেন তারা।

পিয়াঙ্কা বলেন, ‘বাবা ভ্যান চালিয়ে যে টাকা আয় করে তা দিয়ে সংসার চলতো না। আমি ছেলে হলে কাজ করতে পারতাম। এজন্য আমি টিউশনি করি।  বাবাকে সহযোগিতা করি।’

স্থায়ী বাড়ি পাওয়ায় এখন স্থায়ী একটি ঠিকানা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘চাকরির জন্য আবেদন করলে স্থায়ী ঠিকানা দরকার। আজকে আপনি স্থায়ী ঠিকানা উপহার দিয়েছেন। আজকে যে ঠিকানা উপহার দিয়েছেন তার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।’

আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী মোট ৬৭ হাজার ৮০০টি বাড়ি দেওয়া হচ্ছে। এই ৬৭ হাজার ৮০০ বাড়ির মধ্যে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৮ হাজার ৬৬৭টি বাড়ি নির্মাণাধীন রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার উপর ছাদ পায়। আর গত বছরের ২০ জুন আশ্রায়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবার বাড়ি পায়। 

আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে সরকার বাড়িগুলোকে অধিকতর টেকসই ও জলবায়ু সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে নকশা পরিবর্তন করেন। এতে বাড়িগুলোর নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়। আর এজন্যই এখন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষরা দুই শতাংশ জমির ওপর আরো উন্নতমানের টিন-শেডের আধা-পাকা ঘর পাবেন।
 

পারভেজ/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়