ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আন্দোলনের কারণে চা শিল্প ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা উদ্যোক্তাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৬ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ২৩:০১, ১৬ আগস্ট ২০২২
আন্দোলনের কারণে চা শিল্প ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা উদ্যোক্তাদের

ফাইল ফটো

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশের ২৩১টি চা বাগানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। চা শ্রমিকদের এ আন্দোলনের ফলে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চা শিল্পের বাজার ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন দাবি করছে, চা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি দাবি করলেও বর্তমানে একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৪০০ টাকা সমপরিমাণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রত্যক্ষ সুবিধার মধ্যে দৈনিক নগদ মজুরি ছাড়াও ওভারটাইম, বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি ভাতা, অসুস্থজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, কাজে উপস্থিতি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিলের ওপর প্রশাসনিক ভাতা মিলিয়ে সর্বমোট গড়ে দৈনিক মজুরির প্রায় দ্বিগুণ নগদ অর্থ দেওয়া হয়।

উদ্যোক্তারা বলছেন, শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকার বিভিন্ন রকম সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা বাগান আছে। এসব বাগানে দেড় লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি চায়ের বাজারের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জিডিপিতে চা শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ।

আন্দোলনের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮ চা বাগানে থেকে দৈনিক ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ বাগান মালিকদের।

খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে শ্রমিকদেরকে প্রতি মাসে প্রতি ৪২.৪৬ কেজি চাল অথবা গম রেশন দেওয়া হয়। তাছাড়া, শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রায় ৯৪ হাজার ২০০ বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য বণ্টন করা হয়েছে।

১৯০ বছরের পুরোনো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রমিক আইন অনুসরণ করা হচ্ছে প্রতিটি চা বাগানে। শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৬ সপ্তাহের মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির পাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।

একজন শ্রমিকের বসতবাড়ির জন্য পরিবার প্রতি ১ হাজার ৫৫১ স্কয়ার ফিট করে বাড়িসহ সর্বমোট ৫ হাজার ৮০০ বিঘা জায়গা দেওয়া হয়েছে।

শ্রমিকদের স্বাস্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুটি বড় গ্রুপের ও ৮৪টি বাগানের হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫টি ডিসপেনসারসহ মোট ৮৯১ জন মেডিকেল স্টাফ নিয়োজিত আছেন।

শ্রমিকদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয় মিলিয়ে মোট ৭৬৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪৪ হাজার ১৭১ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।

এছাড়া, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের ভাতা, বিভিন্ন রকম শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি যেমন: বিশুদ্ধ খাবার পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক, স্বাস্থসম্মত টয়লেট, পূজা, বিনোদন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়াও, চা শ্রমিকের অবসরের পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে থাকে, যা একজন চা শ্রমিকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে গত ১০ বছরে চায়ের নিলাম মূল্যের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শুন্য দশমিক ১৬ হারে বৃদ্ধি পেলেও চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে ৯৪.২০ শতাংশ।

হাসান/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়