হাবের নেতৃত্ব দখলের চক্রান্ত চলছে
ভোল পাল্টালেন বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকদের চেয়ারম্যান আকতার উজ্জামান
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
সরকার যেতে না যেতেই ভোল পাল্টিয়েছেন হাবের বর্তমান সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিমের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত হজ এজেন্সির মালিক আকতার উজ্জামান। নিজেদের বৈষম্যের শিকার দাবি করে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ নামে সংগঠনের বানারে সংবাদ সম্মেলন করে গেল বছরের হাব নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অতীতে হাবের নির্বাচনে দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে দাবি করে হাব কমিটি বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর রুনি মিলনায়তনে হজ ব্যবস্থাপনায় বিগত সময়ের দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব দাবি করেন।
জাল ভোট ও কারচুপি করে নির্বাচনে হাবের বর্তমান কমিটি এসেছে অভিযোগ করলেও খবর নিয়ে জানা গেছে, সেই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন এই আকতার উজ্জামান। হাবের ২০২৪-২৬ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সম্মিলিত ফোরাম থেকে ৪০৪ ভোটে তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয় শাহাদাত হোসাইন তসলিম। এই নির্বাচনের নির্বাচনি বোর্ডের সদস্য ছিলেন বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের পক্ষের আহ্বায়ক আকতার উজ্জামান। বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ তিনি নিজেই হাবের নির্বাচিত বর্তমান কমিটি ঘোষণা করেন।
তসলিম দায়িত্ব গ্রহণের দিনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সরকার পতনের পরপরই ভোল পাল্টে যায় তার। তিনি এখন নিজেই তার ঘোষিত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তার এমন দ্বিচারিতামূলক ভূমিকায় অবাক হয়েছেন হজ এজেন্সি মালিকরা। নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে তিনি হাবের নেতৃত্ব দখলের চক্রান্ত করছেন বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে হাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, তার এ অভিযোগ সত্য নয়। দুইবার সভাপতি এবং ছয় মাস আগে তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন তসলিম।
তিনি বলেন, হাবের গত নির্বাচন ছিল সবার অংশগ্রহণে। বাণিজ্য ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আমাদের হেফাজত-বিএনপির ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। আর এখন ফায়দা লুটতে আওয়ামী লীগের লোক বানানো হচ্ছে। যারা অভিযোগ করছেন, তারাই শেখ হাসিনার সেই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন জাহাঙ্গীরকে দিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করিয়েছেন।
হাজিদের নিয়ে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই দাবি করে শরাফতী বলেন, হাজিরা যেখানে ভালো সেবা পাবেন সেখানেই যাবেন। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।
তিনি বলেন, তাদের মূল দাবি হজের খরচ কমানো। সেই দাবির সঙ্গে আমরা একমত। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টাকে হজে খরচ কমানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। আর বিমান ভাড়া কমানোর জন্য আমরা আগেও চেষ্টা করেছি, সেই চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছর বিমান ভাড়া নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে আমাদের ঝগড়া পর্যন্ত হয়।
বিমানের টিকিটে গত ৮ বছরে কোনো সিন্ডিকেট হয়নি দাবি করে শরাফতী বলেন, যারা এই অভিযোগ করছেন তারাই এক সময় বিমান টিকিটের সিন্ডিকেট, হাজি রিপ্লেস ও ট্রলি বাণিজ্য করতেন। এগুলো আমরা বন্ধ করেছি। আগে হজে গেলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লাগতো। ২০১৮ সালে আমরা সেটা বাতিল করিয়েছি।
তিনি মিথ্যা অভিযোগে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
হাবের নেতারা বলছেন, ৮ বছর আগে হজে টিকিটের সিন্ডিকেট, হাজি রিপ্লেস ও ট্রলি বাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। ওই সময় হাবের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ আব্দুল্লাহরা। এসব অপকর্ম তসলিমের নেতৃত্বে হাবের কমিটি বন্ধ করেছেন। সম্প্রতি ধর্ম উপদেষ্টা নিজেই সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনার জন্য তসলিমের প্রশংসা করেছেন।
এখন এসব আবার শুরু করার জন্য তসলিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে হাবের বৈধ কমিটি বাতিল করতে চক্রান্ত চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন হাবের সাবেক নেতা রশিদ শাহ সম্রাট, বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকদের চেয়ারম্যান আকতার উজ্জামান প্রমুখ।
নঈমুদ্দীন/এনএইচ