যেমন ছিল একাত্তরের ২৬ মার্চ
রাতের গণহত্যার পর ২৬ মার্চ ঢাকার বিভিন্নস্থানে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়
একাত্তরের ২৬ মার্চ ছিল শুক্রবার। দিনের প্রথম প্রহরেই ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইয়াহিয়া খান আজ তার ভাষণে সারা দেশে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগেই আমার উচিত ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা...। কেননা কয়েকটি শর্ত দিয়ে সে আমাকে ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সে আক্রমণ করেছে-এই অপরাধ বিনা শাস্তিতে যেতে দেওয়া হবে না।’
টানা ২৪ দিন ধরে চলা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন আর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কৌশলের কাছে পরাস্ত হয়ে গণহত্যার দিকে এগিয়ে যায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জেনারেল ইয়াহিয়া এবং চক্রান্তকারী পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুুট্টো।
ফলে ২৫ মার্চ জিরো আওয়ারে গণহত্যা শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বলেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ১২টা ৩০ মিনিটে স্বাধীনতার এই অমোঘ মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠ থেকে।
২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে বলেন-
‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ- দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোন আপোস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’
বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় নিয়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ।
‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুযায়ী রাত ১২টায় পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকার চারটি স্থানকে টার্গেট করে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, তৎকালীন ইপিআর সদর দফতর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং ধানমন্ডি ৩২নং বঙ্গবন্ধুর বাসভবন।
ভয়াল কালরাতের ধ্বংসস্তূপ আর লাশের ভেতরে দিয়ে রক্ত রাঙা সেই নতুন সূর্য। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কুণ্ডুলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। জ্বলছে শাড়ি, খুকুর ফ্রক। চোখে জল। বুকে আগুন। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র স্লোগান তুলে ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক।
ঢাকা/টিপু
- ১০ মাস আগে লটারির টিকিট নিয়ে বিরোধে যুবক খুন
- ৩ বছর আগে ২৫ মার্চ : সেই ভয়াল দিনের ঘটনাক্রম
- ৩ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্রের বিশাল চালান নিয়ে সোয়াত জাহাজ
- ৩ বছর আগে ঢাকা হয়ে ওঠে পতাকার নগরী
- ৩ বছর আগে প্রাক্তন সৈনিকদের রক্তশপথ
- ৩ বছর আগে ঢাকায় ভুট্টো-ইয়াহিয়ার গোপন বৈঠক
- ৩ বছর আগে বিভিন্ন স্থানে বিহারিদের সঙ্গে বাঙালীর তুমুল সংঘর্ষ
- ৩ বছর আগে প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ
- ৩ বছর আগে ৩২ নম্বরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল
- ৩ বছর আগে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক
- ৩ বছর আগে নতুন সামরিক আদেশের বিরুদ্ধে উত্তাল সারাদেশ
- ৩ বছর আগে জাতিসংঘ কর্মীসহ ২৬৫ বিদেশি নাগরিকের ঢাকা ত্যাগ
- ৩ বছর আগে একগুচ্ছ নাটক নির্মাণ করবে বিটিভি
- ৩ বছর আগে ঢাকা নগরী যেন কালো পতাকার শহর
- ৩ বছর আগে ঢাকাসহ সারাদেশে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু
- ৩ বছর আগে যেমন ছিল ৭ মার্চের দৃশ্যপট
- ৩ বছর আগে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি ইয়াহিয়ার
- ৩ বছর আগে উত্তাল মার্চ: টঙ্গীর বিক্ষোভ মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলি
- ৩ বছর আগে ৪ মার্চ ছিল লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিন
- ৩ বছর আগে পতাকা মুক্তি ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহঙ্কার
- ৩ বছর আগে স্মৃতিতে অগ্নিঝরা মার্চ: আজ পতাকা দিবস
- ৩ বছর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বার্তা নিয়ে এলো আগুন ঝরা মার্চ
আরো পড়ুন