ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর দুহাত-এক পা ভেঙে দিলো স্বামী

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ১২ এপ্রিল ২০২১  
যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর দুহাত-এক পা ভেঙে দিলো স্বামী

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ স্মৃতি বেগম

মাগুরা সদরের আমুড়িয়া গ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূর দুই হাত ও একটি পা ভেঙে দিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ফেলে রেখে গেছে তার স্বামী আমির হোসেন। এছাড়াও ওই নারীর সারা শরীরে অসংখ্য যখমের চিহ্ন রয়েছে।

সোমবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে সংবাদ পেয়ে মাগুরা জেলা মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও জেলা ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের কর্মকর্তারা হাসপাতালে পরিদর্শন করে। সেসময় এ ঘটনা প্রকাশ পায়।

এর আগে গতকাল শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। তবে স্বামীর ভয়ে কাউকে কিছু জানাতে পারেননি স্মৃতি বেগম (৩৫) নামে ওই নারী। 

স্মৃতি বেগমের বাবা জেলার শ্রীপুর উপজেলার জোকা গ্রামের দিনমজুর শেখ মশিয়ার রহমান জানান, সতের বছর আগে মাগুরা সদরের কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের আমুড়িয়া গ্রামের ফুলমিয়া মোল্যার ছেলে আমির হোসেনের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে জামাইকে বিভিন্ন সময় একাধিকবার যৌতুকের টাকা ও মালামাল দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে নিজ বাড়ির জমি বন্দক রেখে জামাইকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিদেশ থেকে ফিরে এসে জামাই আবার টাকা দাবি করে। টাকা না পেয়ে প্রায়ই মেয়েকে নানা রকম নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। তার বাবা ফুলমিয়া ও মা খাদিজা বেগম এ ব্যাপারে আমিরকে উৎসাহ দিতেন। ঘটনার দিনে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জামাই আমির হোসেন লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে আমার মেয়ের দুই হাত ও একটি পা ভেঙে দেয়। 

‘এছাড়াও মেয়েটিকে পিটিয়ে রক্তাক্ত যখম করে। এক পর্যায়ে স্মৃতি অজ্ঞান হয়ে পড়লে আমিরুল তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্মৃতির চিকিৎসা শুরু করে। পরে খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে যাই।”

গুরুতর আহত স্মৃতি বেগম জানান, যৌতুকের জন্য স্বামী আমির হোসেন প্রায়ই তাকে মারপিট করত। চার মাস আগে বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর থেকেই মারপিট করে তার একটি হাত ভেঙে দেয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার তার শরীরে যেটুকু গয়না ছিল সব কেড়ে নিয়ে স্বামী ও শাশুড়ি তার ওপর অত্যাচার শুরু করে।

এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে তার দুটি হাত ও একটি পা ভেঙে দেয়। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে সেই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে যায় স্বামী আমির। 

তিনি বলেন, ‘গরিব বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে যত সহায়তা সম্ভব ছিল সবই করা হয়েছে। কিন্তু স্বামী নিজে কাজ না করে সম্পূর্ণই শ্বশুরের পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চায়। আমি প্রতিবাদ করলেই আমার ওপর অকথ্য অত্যাচার করে।’

এ ব্যাপারে স্বামী আমির হোসেন মোবাইলে ফোনে জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা চাওয়া নিয়ে তাদের ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়া মারামারির পর্যায়ে পৌঁছলে এক পর্যায়ে স্মৃতি বেগমের হাত-পা ভেঙে গেছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি মমতাজ বেগম বলেন, ‘ঘটনা জানতে পেরে আমরা মাগুরা সদর হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির খোঁজ খবর নিই। প্রথমে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাহস না পেলেও তাকে অভয় দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।’

মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, নারী নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ভিকটিম নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাহীন/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়