ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সোহানের সংগ্রহে ৩০০ প্রজাতির গাছ

মো. রাকিবুল হাসান, গবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
সোহানের সংগ্রহে ৩০০ প্রজাতির গাছ

মাথার উপরে উত্তপ্ত রোদ। চারদিকের বাতাসে বিভিন্ন ফুল-লতা-পাতার ঘ্রাণ। শরীরে থাকা শার্ট ঘামে ভিজে গেছে। এই তাপদাহের মাঝেই কাজ করছেন ওমর ফারুক সোহান। রোদ-বৃষ্টি তার নিত্য দিনের সঙ্গী। মাথলা মাথায় দিয়ে গাছের পরিচর্যা করছেন। তিনি বলেন, ‘সবুজের মাঝে খাটুনিতে অন্যরকম শান্তি খুঁজে পাই।’

স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ২০১৬ সালে আইন বিষয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। নিজ জেলা চাঁদপুরের জজ কোর্টে শিক্ষাণবিশ আইনজীবী ছিলেন বছর খানেক। দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র (গবিসাস) ২য় কমিটির (২০১৪-২০১৫) সভাপতি ছিলেন। তিনি গবি সাংবাদিক সমিতির আজীবন উপদেষ্টা।

জেলা শহরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিবন্ধিত অ্যাপোলো নার্সারি এবং পুলিশ লাইন নার্সারির স্বত্বাধিকারী সোহান বলেন, কৃষি সম্ভবনাময় বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছি। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে এই পেশায় আশা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ভালো আছি।

তার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি ৩০০ প্রজাতির গাছ আছে। দূরদূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে বড় বাগান এটি। আপেল, আনার, তিন, জয়তুন, পার্সিমন, এবোকাডো, রামভুটান, ডুরিয়ান, আনার, ইয়োলো মাল্টা, ব্লাড মাল্টা, নতুন নতুন জাতের কমলাসহ ৫০ এর অধিক জাতের আম, চা পাতার গাছ, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি ফল, ১০০ রঙের গোলাপ চারাইনডোর প্লান্ট, সাকুলেন্ট, গ্রিন লিফ, পিটুনিয়া, ক্যাকটাসসহ কতশত গাছ। গাছে গাছে ভরা এই নার্সারি।

গ্রীষ্মকালে আমের রাজ্যে পরিণত হয় ২ একরের দুটো নার্সারি। অনলাইনে ৬৪ জেলায় মাল্টি গ্রাফটিং চারা বিক্রি করেন। কৃষি সেবায় খুলছে ফেসবুক পেজ। গাছ কিনতে আসা জিন্নাতল তানিয়া জানান, চমৎকার কয়েকটি গাছ কিনেছি। ভালো মানের সব গাছ সুলভ মূল্যে পেয়েছি। দুটো গাছ উপহারও দিয়েছেন তিনি।

ওমর ফারুক ‘ল’ পড়ে ব্যবসায়ে ঝুঁকি নিয়েছেন সাড়ে ৩ বছর। তিনি বলেন, বাবা মৃত দেলোয়ার চৌধুরী নার্সারি ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে আমি হাল ধরেছি। নার্সারিতে এমনও জাতের চারা আছে, যা বাংলাদেশে একদম নতুন প্রজাতির। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গাছ বা সায়ন সংগ্রহ করে থাকি। নতুন জাতের মাতৃ গাছও তৈরি করি। 

চাঁদপুরের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোহান মাতৃ গাছ থেকে সায়ন সংগ্রহ করে নতুন চারা তৈরি করেন। যা কৃষি সম্ভবনাময় বাংলাদেশে বিদেশি ফল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। জানা যায়, তার পারিবারিক এই ব্যবসার বয়স ২০ বছর। এখানকার পুলিশ লাইনে পরিত্যক্ত ডোবা পড়ে ছিল। তৎকালীন দায়িত্বরত পুলিশ সুপার (এসপি) আমির জাফর ১৫ শতাংশ জমিতে নার্সারী করার অনুমতি দেন। সেই থেকে শুরু।

ক্যাম্পাস জীবনে সোনালি সময় কেটেছে সোহানের। ২৯ বয়সী এই তরুণ বলেন, চাচা টাকশালের উৎপাদন শাখার পরিচালক। তার মাধ্যমে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হই। ক্যাম্পাসে থাকাকালীন পলাশ, শিমুল, বকুল আপেলসহ নানা ধরনের গাছ রোপণ করেছি। 

বর্তমানে নার্সারিতে ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান করেন। নিজ উদ্যোগে মহামারিতে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দেন।  লকডাউনে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও জরুরি অক্সিজেন সেবা চালু করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়