ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ড্রাগন চাষ বাড়ছে শেরপুরে

তারিকুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ০৯:৪০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
ড্রাগন চাষ বাড়ছে শেরপুরে

ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, ধীরে ধীরে দেশি ফলে রূপ নিয়েছে। পরিচিতির সংখ্যাও বাড়ছে, আরও বেশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ ফলের ক্রেতা-বিক্রেতা। শেরপুরের কৃষকরাও ড্রাগন চাষে পিছিয়ে নেই। কৃষিবিদরা বলছেন, চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ অনেক কম ও লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।  

ড্রাগন ফণি মনসা প্রজাতির উদ্ভিদ। এর ফুল রাতে ফোটে, তাই একে নাইট কুইনও বলা হয়। জেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ড্রাগন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফল। দুই দশক ধরে আমাদের দেশে এ ফল আমদানি করা হচ্ছে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও চীনেও বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষাবাদ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক চাষাবাদ শুরু হয় ২০০৭ সালে।

ড্রাগন চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় শেরপুরে চাষাবাদ বাড়াতে উদ্যোগ নেন তৎকালীন সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। তার নির্দেশে ২০১২ সালে জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টার নকলায় ৩২০ জন প্রান্তিক কৃষককে ফলের কাটিংকৃত চারা সরবরাহ করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ বিনা খরচে প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়। ওই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে বানের্শ্বদী ইউনিয়নের মোজারবাজার, পোলাদেশী, বাওসা, চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর, বাছুর আলগা এলাকার ১০ থেকে ১২ জন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এবং অনেকেই বসতবাড়ির আঙিনা ও অনাবাদি জমিতে গত কয়েক বছর ধরে ড্রাগন চাষ করছেন। এখন এসব কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের কালাকুড়ার মো. আল-আমিন গত বছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত লাল বারী-১ জাতের ড্রাগনের খামার শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় ৪৫০টি চারা রোপণ করেন, এক বছরের মধ্যে তার বাগানে ফল উৎপন্ন শুরু হয়েছে। তিনি এখন নিয়মিত চারা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন।

এছাড়াও নকলা উপজেলার পোলাদেশী, বাছুর আলগা, মোজার ও রামপুর এলাকার কয়েক জন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়েক বছর ধরে ড্রাগন চাষ করছেন। তারা ফল বিক্রি ও কাটিং চারা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের চৈতাজানী গ্রামের মো. শাহ আলম ২০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগনের খামার। পাশাপাশি করেছেন মাল্টা বাগান। তিনিও প্রায় এক বছর ধরে লাল ড্রাগন (বারি-১) চাষ করছেন।

ড্রাগন ভিটামিন সি, মিনারেল ও আঁশসমৃদ্ধ। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ডায়াবেটিস, প্যারালাইসিস ও হার্টের রোগ প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম। নকলার হাবিবুর ও শফিকুল বলেন, ড্রাগন গাছে সামান্য জৈব সার দিলে চলে। রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না কীটনাশকের। মাসে একবার ছত্রাকনাশক ছিটাতে হয়। তবে শীতকালে সন্ধ্যার পর আলোর ব্যবস্থা করতে হয়। চারা রোপণের এক থেকে দেড় বছর পর ফল ধরে। একবার রোপণ করলে টানা ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। পূর্ণ বয়সের একেকটি চারা থেকে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ কেজি ফল পাওয়া যায়।  এ গাছের রোগবালাই ও মৃত্যুঝুঁকি নেই বললে চলে।

কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী।  ফলে এ অঞ্চলে ড্রাগন চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে জেলার কৃষিতে বৈপ্লবিক উন্নতি ঘটবে।

রামপুরের ড্রাগন চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ১৫ শতক পতিত জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। এখন তার দেখাদেখি অনেকেই ড্রাগন চাষ করছেন।  তার বাগানে ড্রাগন গাছ রয়েছে ৩২০টি।

বাওসা এলাকার চাষি পারুল বেগম জানান, তার বাগানে গাছ রয়েছে ৮০টি। সংসারের পাশাপাশি তিনি ড্রাগন ক্ষেতে সময় দিয়ে তৃপ্তি পান।  তার মতে, এর ফুল ও ফল পরিবেশকে নান্দনিক সৌন্দর্য দেয়। এতে বাড়তি ব্যয় নেই, বরং সংসারে বাড়তি আয় হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপ-পরিচালক ড. মোহিদ কুমার দে বলেন, ২০১২ সালে নকলায় পরীক্ষামূলক ড্রাগন চাষ শুরু হয়, যা বাণিজ্যিক চাষে রূপ নিয়েছে। কৃষি বিভাগের তরফ থেকে সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

পোলাদেশীর কৃষক আ. হালিম বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় ড্রাগন চাষ করে আমরা এখন সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছি। ড্রাগন একবার যিনি খেয়েছেন, বার বার তিনি খুঁজবেনই।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, কৃষকদের ড্রাগন চাষে আগ্রহী করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বাড়ির আঙিনা ও অনাবাদি জমিতে চাষ করে সহজে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়