ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোজায় কাফফারা ও ফিদিয়ার বিধান

মুফতী মাহফূযুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ২৭ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১৪:৪২, ২৭ এপ্রিল ২০২২
রোজায় কাফফারা ও ফিদিয়ার বিধান

কাফফারা এবং ফিদিয়া রমজানের রোজার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষ দুটি বিধান। এ বিধান দু’টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অনেকেই ভুল করেন।

কাফফারা

রমজানের রোজা রাখার পর কেউ যদি অনুমোদিত কারণ ব্যতীত রোজা ভেঙে ফেলে, তবে তার উপর উক্ত রোজার কাজা এবং কাফফারা ওয়াজিব হয়।

রমজানে রোজা ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। ইসলামের স্তম্ভ। তাই রমজানের রোজা রাখার পর বিনা ওজরে তা ভেঙে ফেলার অপরাধ ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছে। আল্লাহর বিধান নিয়ে খামখেয়ালি বন্ধ করার জন্য ইসলাম এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেছে। যেন রমজানের রোজা রাখার পর কেউ তা ভাঙার চিন্তাও না করে। এ শাস্তির নাম হলো কাফফারা।

রমজানের রোজা ভাঙার কাফফারা হলো ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখা। কাফফারার উদ্দেশ্যে কয়েকটি রোজা রাখার পর যদি ঈদের কারণে বা অসুখের কারণে বা সন্তান প্রসবের কারণে বা অন্য কোনো কারণে রোজা রাখার ধারাবাহিকতা ছুটে যায় তবে পেছনের রোজাগুলো কাফফারা হিসেবে ধর্তব্য হবে না। সমস্যা দূর হওয়ার পর আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে একটানা ৬০টি রোজা পূর্ণ করতে হবে। তবে মহিলাদের মাসিকের কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে নতুন করে শুরু করতে হবে না। কারো যদি ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা রাখার দৈহিক সামর্থ্য না থাকে তবে সে ৬০ জন গরিবকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়াবে। অথবা প্রত্যেককে এক ফেতরা সমান অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম গম বা তার মূল্য দান করবে।

যে সব কারণে শরিয়ত রোজা ভাঙার অনুমতি দিয়েছে

রোজা রাখার কারণে কোনো রোগ বৃদ্ধি হওয়া বা আরোগ্য লাভে বিলম্ব হওয়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিলে রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। উক্ত আশঙ্কা একেবারে সুস্পষ্ট হতে হবে অথবা এ ব্যপারে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভিমত থাকতে হবে। রোজা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলার নিজের বা গর্ভস্থ সন্তানের প্রাণহানির বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা দেখা দিলে রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। দুগ্ধদানকারিণী মা রোজা রাখার কারণে যদি তার দুধ শুকিয়ে যায়, সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্থ না হয় এবং সন্তানের প্রাণহানির বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা দেখা দেয় তবে রোজা ভাঙার অনুমতি আছে।

ফিদিয়া

কোনো ব্যক্তি যদি এমন বার্ধক্যে উপনীত হয় যে, বয়সের কারণে তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব না এবং পরবর্তীকালে  সামর্থ্য ফিরে পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা তার নেই অথবা কোনো ব্যক্তি যদি এমন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়, যে রোগ নিয়ে রোজা রাখা আদৌ সম্ভব না এবং পরবর্তীতে আরোগ্য হওয়ারও সম্ভাবনা নেই তবে এ দুই ধরনের ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজার পরিবর্তে রয়েছে ফিদিয়ার বিশেষ বিধান। প্রতিটি রোজার পরিবর্তে একজন গরিবকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়াবে। অথবা একটি ফেতরা সমান অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম গম বা তার মূল্য গরিবকে দান করবে। 

উপরোক্ত দুই শ্রেণী ব্যতীত অন্য কারো জন্য ফিদিয়ার বিধান প্রযোজ্য নয়। সঙ্গত ওজরের কারণে কেউ রোজা রাখতে না পারলে পরবর্তীতে কাজা করবে। কিন্তু ফিদিয়া দিতে পারবে না। শুধু এই দুই শ্রেণীর মানুষের জন্য ফিদিয়া গ্রহণযোগ্য। এই দুই শ্রেণীর মানুষ ফিদিয়া দেওয়ার পর যদি রোজা রাখার উপর সামর্থ্যবান হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে তাদেরও ছুটে যাওয়া রোজাগুলো কাজা করতে হবে।

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়