বাংলা সাহিত্যের মানিকের জন্মদিন
শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম স্বার্থক জীবনবাদী কথাশিল্পী। সম-সাময়িক কালের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের ট্রাজেডি, বাস্তবতা এমন শিল্প-কুশলতায় আর কোনো লেখক তুলে ধরতে পারেননি।
জনপ্রিয় এই কথাশিল্পীর ১১৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে তার জন্ম। কারণ, সেখানে ছিল বাবার কর্মস্থল। পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে৷
চৌদ্দ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। তার বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদানীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্টার। বাবার চাকরির সূত্রে তার শৈশব ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়েছে বাংলা-বিহার-ওড়িষার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল সে সময়ের পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ এই বাংলাদেশেই। তার উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য় তিনি তার মায়ের গ্রাম গাউদিয়া’র পটভূমি রচনা করেছেন।
আসল নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাকনাম ছিল মানিক। প্রথম গল্প ছাপতে দেন ডাকনামেই, সেই থেকে আসল নাম চাপা পড়ে যায়। হয়ে গেলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এ নামেই জগৎ জোড়া খ্যাতি। তিনি আজ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক।
‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ ছাড়াও তার উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ কিংবা গল্পসংকলন ‘অতসীমামী’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’ এসব লেখা আজও পাঠক মনে দোলা জাগাতে সমর্থ। নিম্নবিত্ত ও সর্বহারা সমাজের মানুষের ক্ষয়-ক্ষতি, ক্লেদ-হতাশা ও দুঃখ বেদনায় তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক স্বতন্ত্রধারায় চিরভাস্বর।
শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনকাল ছিল মাত্র ৪৮ বছর। ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন ৪২টি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোটগল্প।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলা হয় গণমানুষের যাপিত জীবনের কুশলী রূপকার। তার লেখাই তাকে শক্তিশালী ও স্মরণীয় করে রেখেছে। তার সময়ের সাহিত্যাকাশের অনেক তারার সমারোহেও তিনি আলোকিত হয়ে উঠেছিলেন। কথাশিল্পীকে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
/টিপু/
আরো পড়ুন