হাজারো স্বপ্ন নিয়ে হলে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা
আহসান হাবীব, জাবি || রাইজিংবিডি.কম
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে নিরাপত্তার অজুহাতে গত ১৭ জুলাই হল বন্ধের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৭ আগস্ট থেকে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘোষণার পর থেকে হলে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
হলে ফেরা শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে বিজয়ের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের সফল আন্দোলন শেষে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সংস্কারের প্রত্যয় ফুটে উঠেছে তাদের কণ্ঠে।
আবাসিক হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে নতুন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত প্রোগ্রামের বৈধ শিক্ষার্থীরাই শুধু হলে প্রবেশ করতে পারবেন বলে নির্দেশনা দিয়েছে জাবি প্রশাসন। এছাড়া প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা কোনোভাবেই হলে থাকতে পারবে না জানিয়ে এ বিষয়ে হল প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
বিভিন্ন হলে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত বুধবার (৭ আগস্ট) থেকে হল খোলা এবং গত রোববার (১১ আগস্ট) থেকে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে হলগুলোতে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। যারা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, তাদের প্রায় সবাই হলে চলে এসেছেন। হলে বিদ্যুৎ-পানিসহ জরুরি সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। তবে হলের ক্যান্টিনগুলো এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি।
আন্দোলনে আহত অনেক শিক্ষার্থীও ফিরে এসেছেন ক্যাম্পাসে। তবে এখনো প্রশাসন ও ছাত্রলীগের হামলার ট্রমা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেননি অনেকে। হাজারও বাধা ও শতশত তাজা প্রাণের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ স্বাধীনতার সুফল যেন শিক্ষার্থীরা পান সেই প্রত্যাশা সবার।
অনুভূতি জানতে চাইলে শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কাজী আবিয়াস রহমান বলেন, রোববার থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক বিভাগ ক্লাস শুরুর তারিখ পিছিয়ে নিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা কিছুটা মন্থর গতিতে হলে ফিরছে। দেশে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাব আমাদের ক্যাম্পাসেও পড়বে এটাই স্বাভাবিক। হঠাৎ আসা এ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ক্যাম্পাস ও হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ চালু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর দমন-পীড়ন দূর হবে।
আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমা আক্তার সিথী বলেন, বাবা-মা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত থাকায় বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে আসতে সায় দিচ্ছিলেন না। কিন্তু অন্যান্য শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমিও একরকম জোর করেই হলে চলে আসলাম।
তিনি বলেন, হলে এখনো খুব বেশি শিক্ষার্থী আসেননি। যেহেতু সব বিভাগের ক্লাস এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি, তাই ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে আসছেন শিক্ষার্থীরা। হলের সব সুবিধা এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। আগে হলে ছাত্রলীগের কারণে অনেক অন্যায়-অবিচার মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে, প্রশাসনও ছিল নির্বিকার। কিন্তু এখন থেকে এসবের মুখোমুখি না হওয়ার প্রত্যাশা করছি। এখন থেকে ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের মানোন্নয়নের পাশাপাশি হলের সামগ্রিক পরিবেশের যেন দ্রুত উন্নতি ঘটে- এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলা বিভাগের শফিকুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীন এ দেশে আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রাণের এই ক্যাম্পাসটাকেও নতুন করে গড়ে নিতে চাই। আমরা চাই না লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে আবার ক্যাম্পাসে আগের অরাজক অবস্থা ফিরে আসুক। এখন আর কেউ আমাদের নির্যাতন করতে পারবে না, কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করতে পারবে না, জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে যাবে না, ছাত্র সংসদের বাইরে কোনও রাজনৈতিক দল থাকবে না, ছাত্র সংসদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবে।
তিনি বলেন, হলের সিট বরাদ্দ হবে মেধার ভিত্তিতে। হলে দলীয় কিংবা কোনও রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারবে না। শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতি গড়ার কারিগর। কিন্তু বিগত আন্দোলনে আমরা দেখতে পেয়েছি, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কারণে শিক্ষকরা আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিতে পারেননি। তাই আমরা মনে করি শিক্ষক রাজনীতি জাতি গঠনের অন্তরায়।
/মেহেদী/