ঢাকা     শনিবার   ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ৩০ ১৪৩১

জাবি ও রাবির হল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-মাদক উদ্ধার

জাবি ও রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৩ আগস্ট ২০২৪  
জাবি ও রাবির হল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-মাদক উদ্ধার

জাবির হল থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও মাদক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, মাদক ও জন্ম নিরোধক উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) হল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এ অভিযান চালানো হয়।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী অংশ নেন। সেদিন রাতে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের একটি অংশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কক্ষে রয়েছে এমন সন্দেহে হল প্রশাসনের কাছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ব্যবহৃত কক্ষগুলো অভিযানের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে হলের তৃতীয় তলার দুইটি ব্লকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কক্ষ থেকে রামদা, চাপাতি, ছুরি, লোহার পাইপ, মদের খালি বোতল ও জন্মনিয়ন্ত্রক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো হল অফিসে রাখা হয়েছে।

হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীরা এসে আমাদের অভিযান পরিচালনা করার কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। তিন তলার কক্ষগুলো থেকে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করি। অস্ত্রগুলো হল অফিসে জব্দ করা আছে। আমি আমার উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে জানিয়েছি। উনারা পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।

এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হলের প্রাধ্যক্ষ, ওয়ার্ডেন ও আবাসিক শিক্ষকরা দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। বর্তমানে হলে এ পদগুলোতে কোনো শিক্ষক না থাকায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এই অভিযান পরিচালনা করেন। 

অন্যদিকে, আজ মঙ্গলবার (১৩ আগষ্ট) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হল প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে রাবির আবাসিক হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কক্ষগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, রাত ৮টার দিকে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সম্মিলিত অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন আবাসিক হল থেকে বিপুল পরিমাণে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

এ সময় তারা শাহ্ মখদুম হলের ২০৯-২৫২ নম্বর কক্ষ পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে চাকু, রড, লোহার পাইপ, বিদেশি মদের বোতল, গাঁজা, কয়েকটি মোবাইল ফোনসহ দেশীয় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করে। এছাড়া নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তাসফিক আল তৌহিদসহ ওই হলের অন্যান্য নেতার ২০১-২২০ পর্যন্ত  কক্ষ থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তৌহিদের কক্ষ থেকেও চাকু, রড, লোহার পাইপ, বিদেশি মদের বোতল, গাঁজা, বস্তায় রাখা রেললাইনের পাথর, ছাত্রলীগের চাঁদা আদায়ের রশিদ, হেলমেট, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড, বাঁশের লাঠি ইত্যাদি উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা।

রাবির হল থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও মাদক

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তুচ্ছ ঘটনায় সাধারণ ছাত্রদের কক্ষে ডেকে নিয়ে এসব অস্ত্র দিয়ে হত্যার হুমকি দিতেন, অত্যাচার করতেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উদ্ধার হওয়া এসব অস্ত্র হস্তান্তর করে তাদের বিচারের দাবি করেন।

এ ব্যাপারে আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, এগুলো আপাতত হল প্রশাসনের কাছে জমা থাকবে। পরবর্তীতে পুলিশ এলে তাদের সহায়তায় বাকি কক্ষগুলো তল্লাশি করার পর হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে, বঙ্গবন্ধু হলের ৪৯৬টা সিটের মধ্যে দুই শতাধিক সিটে অবৈধভাবে অবস্থান করতেন শিক্ষার্থীরা। দখলকৃত অধিকাংশ সিটই ছিল ছাত্রলীগের দখলে। সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বহু বছর ধরে কক্ষ দখল নিয়ে অবস্থান করতেন। এতে বছরে লক্ষাধিক টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তো হল প্রশাসন। গত ১৬ জুলাই কোটা আন্দোলন চলাকালে এই হলে ছাত্রলীগের দখলকৃত অন্তত ৩০টি কক্ষ ভাঙচুর হয়। এতে সভাপতি ও সম্পাদক সহ নেতাদের কক্ষ থেকে পিস্তলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়।

গত ১৭ জুলাই শহিদ হবিবুর হলে তল্লাশি চালান আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগ নেতা সোহান ও মিনহাজের কক্ষ থেকে অস্ত্র পাওয়া যায়। এই হলেও বহু কক্ষ দখলে নিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের সিট বরাদ্দ কিংবা নিয়ন্ত্রণ করত ছাত্রলীগ। আবাসিকতা পেলেও অনেক সিট ছাত্রলীগ দখলে রাখতো। প্রাধ্যক্ষরা কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। ছাত্রলীগের একচ্ছত্র দাপটে অনেকক্ষেত্রে নিরুপায়ও ছিলেন তারা।

এরই জেরে গত রোববার (১১ আগষ্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশসহ সাতটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সহ-সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা ক্যাম্পাসকে অস্ত্রমুক্ত করতে হলগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি। এক সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এগুলো দিয়ে আমাদের ভাইদের ওপর অত্যাচার করত। এখন থেকে শাহ মখদুম হল অস্ত্র ও সন্ত্রাস মুক্ত। এভাবে আমরা সব হলে অভিযান চালিয়ে হলগুলোকে অস্ত্র মুক্ত করব।

অভিযান শেষে শাহ মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, ছাত্রলীগের দখলকৃত কক্ষগুলো থেকে এ অস্ত্র পাওয়া গেছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক তারা কক্ষগুলো দখল নিয়ে থাকতো। অধিকাংশই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়। ছাত্রলীগ নেতা ইলাহির কক্ষে বেশি অস্ত্র পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অস্ত্রগুলো আপাতত আমাদের কাছেই জমা থাকবে। এরপর আমরা এগুলো সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করব।

/আহসান/ফাহিম/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়