ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৮ ১৪৩১

রয়্যাল এনফিল্ডের ইতিহাস

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ২৫ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৫:২৮, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
রয়্যাল এনফিল্ডের ইতিহাস

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের প্রায় ৫০টির বেশি দেশে রয়েছে রয়্যাল এনফিল্ড মোটর সাইকেল। বাইক প্রেমীদের কাছে এ এক জনপ্রিয় নাম। সম্প্রতি ভারতের বাজার থেকে বাংলাদেশে আসার পরই নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রদর্শনী কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চারটি মডেলের রয়্যাল এনফিল্ড মোটর সাইকেলের প্রি-অর্ডার কার্যক্রম উদ্বোধনের পর একের পর এক অর্ডার আসতে থাকে।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয় আলোচনা। ৫০ এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত রয়্যাল এনফিল্ড মোটর সাইকেলের ডিজাইন প্রায় একই ধরনের আছে। এই ডিজাইন রয়্যাল এনফিল্ডকে রাস্তায় চলা অন্য বাইক থেকে আলাদা করেছে এবং অনন্যতা দিয়েছে।  রয়্যাল  এনফিল্ডের রয়েছে উচ্চগতি এবং মাইলেজ।  জানা যায়, ভারতীয়রা এই বাইক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে।  বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে রয়্যাল এনফিল্ড মোটর সাইকেল তৈরি করা হয় বলে এর মূল্য সাধ্যের মধ্যেই থাকে। 

জানা যায়, ১৮৫১ সালে ইংল্যান্ডের রেড্ডিচ শহরে জর্জ টাউনসেন্ড নামের একজন ব্যবসায়ী সেলাই মেশিনের সূচ তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। এই কাজ করার জন্য তিনি অনেকগুলো মেশিন স্থাপন করেন। তার কয়েক বছরের মধ্যে টাউনসেন্ডের ছেলে এই কারখানার যন্ত্রপাতির সাহায্যে সাইকেলের স্যাডেল এবং ফর্ক তৈরি শুরু করেন। এই কাজ করে তিনি লাভ করতে শুরু করেন এবং বাইসাইকেল তৈরিতে মনোযোগ দেন। তার কাছে বাইসাইকেল তৈরি করার প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি ছিল। ১৮৮৬ সালে তিনি ‘টাউনসেন্ড অ্যান্ড একোসাইস’ নামে বাইসাইকেল তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। তবে মার্কেটিং ভালো না থাকায় ১৮৯১ সালে কোম্পানিটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অ্যালবার্ট এডি নামে বারমিংহামের একজন সেলস ম্যানেজার এবং রবার্ট ওয়াকার স্মিথ নামে একজন ইঞ্জিনিয়ারের হাতে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। উচ্চাভিলাষী অ্যালবার্ট ১৮৯২ সালে এর নতুন নাম দেন এডি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি অনেক সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু করে। ১৮৯৬ সালে এডি মিডলসেক্সের এনফিল্ড শহরে অবস্থিত রয়্যাল স্মল আর্মস ফ্যাক্টরির জন্য যন্ত্রপাতি তৈরির কন্ট্রাক্ট পান এবং এখান থেকেই রয়্যাল এনফিল্ড নামের জন্ম হয়। এরপরে নিউ এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ক্রয় করে। এবং ১৮৯৭ সালে সাইকেলের সব ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু করে। ধীরে ধীরে যখন মোটরচালিত সাইকেল ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল তখন এনফিল্ড কোম্পানিও মোটর সাইকেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। দুই বছর চেষ্টার পর এনফিল্ড ১৯০১ সালে তাদের প্রথম ২৩৯ সিসি মোটর বাইক বাজারে আনে। এরপর ১৯০২ সালে তারা একটি মোটরগাড়ি বানায়। মাত্র চার বছরের মধ্যে চার চাকার যানবাহনের মার্কেট দখলের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ ১৯০৬ সালে অটোকার কোম্পানি স্থাপন করে। কিন্তু এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কোম্পানিটি পুরোমাত্রায় মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন তৈরি ও ডিজাইন উন্নয়নের কাজ শুরু করে।  ১৯১০ সালে তারা ২৯৭ সিসি ভি টুইন ইঞ্জিন তৈরি করে। ১৯১১ সালে ৩৪৪ সিসি করা হয়। ১৯১২ সালে ৭৭০ সিসি ভি টুইন JAP এঞ্জিনের মডেল ১৮০ বের হয় যার সাথে একটি সাইড কারও ছিল। ১৯১৩ সালে তারা ৪২৫ সিসির মডেল ১৪০ বের করে। এগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

মার্কেটিংয়ে বড় পরিসরে কাজ শুরু হয় ১৯১৪ সালে। ওই সময় এনফিল্ড কোম্পানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ব্রিটেনের সেনাবাহিনীকে মোটরসাইকেল সরবরাহ শুরু করে। এরপরে ইম্পেরিয়াল রুশ সরকারের জন্য মোটরসাইকেল তৈরির চুক্তি সাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী বাইকগুলোতে এনফিল্ড ২২৫ সিসি টু স্ট্রোক সিঙ্গেল এবং ৪২৫ সিসি ভি-টুইন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় রয়্যাল এনফিল্ড।

১৯২১ থেকে ১৯৩০ এর মধ্যে তারা আরও দুটি নতুন ইঞ্জিনের উন্নয়ন করে। তবে এই দশ বছরে তারা আর যে কাজটি করে তার থেকেই আধুনিক বাইকের ডিজাইনের জন্ম হয়। আজকের দিনে বাইকে যেসব ফুয়েল ট্যাঙ্ক দেখা যায় তার প্রচলন শুরু হয় এই দশকে রয়্যাল এনফিল্ড কারখানায়। ১৯৩১ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যে রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট নামের একক সিলিন্ডারের ফোর স্ট্রোক মোটরবাইক তৈরি করা হয়। 

১৯৫৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ মোটরস ব্রিটিশ রয়্যাল এনফিল্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করে। এবং রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক তৈরি শুরু করে। শুরুতে যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভারতে এনে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক সংযোজন করতো প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ১৯৬২ সাল থেকে দেশটিতে সব যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু হয়।স্থানীয়ভাবে তৈরি হতে থাকে রয়্যাল এনফিল্ড। ১৯৭৭ সালে এনফিল্ড ইন্ডিয়া যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে ৩৫০ সিসি মডেলের বাইক রপ্তানি শুরু করে।

১৯৯৩ সালে এনফিল্ড ইন্ডিয়া পৃথিবীর প্রথম ডিজেল মোটরবাইক তৈরি শুরু করে। এই মোটরবাইকের নামকরণ হয় এনফিল্ড ডিজেল। ১৯৯৪ সালে আইশার গ্রুপ অধিগ্রহণ করলে এনফিল্ড ইন্ডিয়ার নামকরণ হয় রয়্যাল এনফিল্ড মোটরস লিমিটেড। ১৯৯০–এর দশকে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ায় মোটরবাইক উৎপাদন কমে যায়। কিন্তু মার্কেটে এই মোটরবাইকের চাহিদা বাড়ার কারণে ২০১৩ সালে ভারতের চেন্নাইতে নতুন আরেকটি কারখানা চালু করা হয়। ২০১৫ সালের দিকে বাইক বিক্রিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হার্লি-ডেভিডসনকে ছাপিয়ে যায় রয়্যাল এনফিল্ড।

বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে রয়্যাল এনফিল্ডের চারটি মডেল; রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০, রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০, রয়্যাল এনফিল্ড হান্টার ৩৫০, রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০। দেশে রয়্যাল এনফিল্ডের একমাত্র প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইফাদ মোটরস লিমিটেড।

জানা গেছে, বাজারে হান্টার মডেলের দাম শুরু হবে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে। ক্লাসিক মডেলের দাম শুরু হবে চার লাখ ৫ হাজার টাকা থেকে, বুলেট মডেলের দাম শুরু হবে চার লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে ও মিটিয়র মডেলের দাম শুরু হবে চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটর সাইকেলের অনুমতি দেয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল স্থানীয় বাজারে প্রবেশের সুযোগ পায়।

ঢাকা/লিপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়