‘আমার ছেলের একটি চোখ ভালো হলেও আবার পৃথিবীটা দেখতে পেতো’
কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিমেল।
“প্রায় চার মাস আমার ছেলে পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না। মাথায় গুলির যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটছে তার। মির্জাপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে। দেশের চিকিৎসা শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশে নিতে বলেছেন ডাক্তার। আমার ছেলের যদি একটি চোখও ভালো হতো তাও নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। ও অন্তত পৃথিবীর আলো দেখতে পেতো।”
কথাগুলো বলেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হিমেলের মা নাসিমা বেগম।
হিমেলের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের গোড়াই লালবাড়ি গ্রামে।
হিমেলের পরিবার জানায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হিমেল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানার সামনে মহাসড়কে অবস্থান করছিলেন। সেসময় হিমেলের মাথায় গুলি লাগে। অন্য ছাত্ররা হিমেলকে দ্রুত কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলে। পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) হিমেলের চিকিৎসা করানো হয়।
পরিবার বলছে, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হিমেল বেঁচে আছেন। সেসময় হিমেলের চোখেও গুলি লাগে। এরপর থেকেই তিনি দেখতে পারছেন না। চিকিৎসক জানিয়েছে, তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করালে চোখ ভালো হতে পারে। তবে অর্থের অভাবে বিদেশে যেতে না পেরে চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে দিন কাটছে হিমেলের।
হিমেলকে উপজেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাসিমা বেগম। তিনি জানান, এরপর আর কোনো সহযোগিতা পাননি।
হিমেলের মা ও বাবার সম্পর্ক নেই প্রায় ১৫ বছর। সংসারে অভাব লেগেই আছে। ফলে স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি হিমেল ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করতো। নাসিমা বেগম মানুষের বাড়ি কাজ করে কোনোরকমে সংসার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। হিমেল তার একমাত্র অবলম্বন।
নাসিমা বেগম বলেন, “ডাক্তার বলছেন, দুটি চোখের মধ্যে একটি চোখ একবারেই নষ্ট হয়েছে। আরেকটি চোখ মোটামুটি ভালো আছে। তবে সে চোখেও হিমেল দেখে না। চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার আয়-রোজগার বন্ধ রয়েছে। সব দিক থেকে হিমশিম খাচ্ছি।’’
নাসিমা বেগম চান সরকার যেহেতু আন্দোলনে আহতদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে, তাহলে তার ছেলেরও উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিক। সমাজের মানুষ সহানুভূতি নিয়ে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিক।
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আল আমিন বলেন, “আমরা বিষয়টি জানার পরে আর্থিকভাবে কিছু সহযোগিতা করেছি। এরপর কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়ক সারজিস আলমের সঙ্গে কথা বলে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হিমেলকে পাঠিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা আশ্বাস দিয়েছেন যদি বাংলাদেশে হিমেলের চিকিৎসা সঠিকভাবে না হয় সেক্ষেত্রে দেশের বাইরে নিয়ে হলেও হিমেলের চোখের চিকিৎসা করা হবে।”
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হিমেলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/টিপু