ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশের মাটিতে ফিরে এলেন

মহাদেব সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ৯ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশের মাটিতে ফিরে এলেন

আমি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি নিজের চোখে দেখতে পারিনি। আমি তখনো কলকাতায়। ফিরে আসি ১৮ তারিখ। কলকাতায় বসে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আনন্দ ও উত্তেজনা উপভোগ করেছি। কলকাতায় লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল। আমার এখনো মনে পড়ে, সেই কয়েকটি দিন মানুষের মুখে একটি মাত্র শব্দ ছিল— বঙ্গবন্ধু কখন আসবেন?

সেই ১০ জানুয়ারির কথা ভাবলে আমি এখনো শিহরিত বোধ করি। সারাদিন কলকাতা শহরে আনন্দ আর উত্তেজনার মধ্যে সময় কাটাই। থাকি তখন হেদুয়া পাড়ায়। হেদুয়া পার্কের গলির ভেতর অগিলভি হোস্টেলে। যখন তখন ট্রাম ধরে চলে আসি কলেজ স্ট্রিটে। এখানে কফি হাউস, ‘পরিচয়’ পত্রিকার অফিস, বিখ্যাত সব বইয়ের দোকান। এতদিন ধরে কলকাতা আছি, যখন যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াই। কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা, এসপ্লানেড হয়ে আকাশবাণী, হাঁটতে হাঁটতে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’। আবার সেই উত্তর কলকাতা, ‘যুগান্তর’ অফিস। সেদিনও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।

১০ তারিখ সকালে বঙ্গবন্ধু এসে নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, মন্ত্রীসভার সকল সদস্য, প্রধান নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান ও সম্মানিত বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি অন্ধকার থেকে আলোতে বেরিয়ে এসেছেন। ওইদিন অপরাহ্নে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছান।

কলকাতায় লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য গভীর সহমর্মিতা, ভালোবাসা ও সমর্থনের অন্ত ছিল না। ‘জয় বাংলা’ কথাটি তখন কলকাতার মানুষের মুখে মুখে ছিল। জয় বাংলা, বাংলাদেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে কি আবেগই না তখন দেখেছি! বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসছেন শুনে মানুষের মনে আনন্দের জোয়ার। খবরের কাগজগুলোতে বড় বড় হেডিং, আকাশবাণীর খবর, সংবাদ পরিক্রমায় বাংলাদেশের জাতির জনকের বন্দনা। কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় মানুষের একমাত্র আলোচনা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু। আমি নিজে তখন কলকাতা ছিলাম জন্য মানুষের এই আবেগ, ভালোবাসা কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করতে পেরেছি।

আমি কলকাতা থেকে ঢাকা আসি ১৮ জানুয়ারি। কিন্তু তার আগে ১৩ ডিসেম্বর আমি সাতক্ষীরা এসেছিলাম। সাতক্ষীরা তখন মুক্ত এলাকা। পাকিস্তানিদের আগেই সেখানে পতন হয়। ১৬ ডিসেম্বরের আগেই আমি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করতে পারি। এটিকে আমি বিরল সৌভাগ্য বলেই মানি। বাংলাদেশ পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হওয়ার আগেই আমি বাংলাদেশে পৌঁছতে পেরেছিলাম, একথা মনে হতেই আজ কেমন শিহরণ জাগে। সে ছিল আমাদের সবচেয়ে গৌরবের সময়। বাঙালি জাতির ত্যাগ, সাহস ও বিরত্ব তখন পৃথিবীর মানুষের কাছে ভীষণ গর্বের বিষয়।

পরে চলে গেলাম যুগান্তরে। তখন যুগান্তরের বার্তা সম্পাদক দক্ষিণারঞ্জন বসু; সেখানে আছেন ঔপন্যাসিক প্রফুল্ল রায় ও কবি কৃষ্ণ ধর। ‘অমৃত’ পত্রিকায় কবি মণীন্দ্র রায়। প্রায় সারা দুপুর অমৃত ও যুগান্তরে কাটিয়ে দিলাম। সন্ধ্যায় চলে এলাম কলেজ স্ট্রিটে। পরিচয় পত্রিকার অফিস সেদিন জমজমাট। দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল, অমিতাভ দাশগুপ্ত, ধনঞ্জয় দাশসহ আরো অনেক কবি-লেখক। আলোচনা একটাই- বঙ্গবন্ধু। মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আমাকে কাছে পেয়ে সবাই খুব আনন্দিত। বঙ্গবন্ধুর কত কথা যে জানতে চান তারা! যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখেননি বা তাঁর বক্তৃতা শোনেননি তাঁরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জানতে চান। জানতে চান, আমি ৭ মার্চের জনসভায় ছিলাম কিনা। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ শুনেছি কিনা- এসব নিয়ে তাদের আগ্রহের অন্ত নেই। বঙ্গবন্ধুর কথা যতই বলি অভিভূত হন তারা। এখনো মনে আছে বহু রাত পর্যন্ত এ আলোচনা চলেছিলে সেদিন।

বঙ্গবন্ধুর ঢাকা পৌঁছানোর খবরও আমি পেয়ে যাই সন্ধ্যার খবরে। কলকাতায় তখন আমার নিজেকে নিয়ে গর্বই হচ্ছিল। আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমার এই পরিচয় গৌরবের ও আনন্দের। কিন্তু কলকাতায় যতই আনন্দ উত্তেজনার মধ্যে কাটাই, মনটা তখন দেশে ফেরার জন্য ছটফট করছিল। চোখে ভাসছিল ঢাকার রাস্তা-ঘাট, ঢাকার আকাশ। রাতে ঘুম আসছিল না চোখে। রমনা, পল্টন, নিউমার্কেট, বুড়িগঙ্গা সবই আমার চোখে ভেসে উঠছিল। সেদিনই ঠিক করে ফেললাম- আর দেরি নয়, সাতদিনের মধ্যে ঢাকা ফিরব। টিকিটও করে ফেললাম। কলকাতা থেকে সরাসরি ঢাকা।

কয়েক মাস ধরে কলকাতায় আছি, কত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব। এই দুঃসময়ে তাদের স্বহৃদয়তারও তুলনা হয় না। কতজনই তো কত মানুষকে সাহায্য করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। এখন তাদের আন্তরিকতার কথা খুব মনে পড়ছে। এই সময়ে কত বড় বড় মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়। তাদের কাছে স্নেহ ভালোবাসা পাই। সেসব ভোলার মতো নয়।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে বের হয়ে লন্ডন পৌঁছেন। লন্ডন থেকে দিল্লি পর্যন্ত তাঁর সঙ্গী ছিলেন ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। তিনি বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পরিচিত। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় সমর্থক। এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু দিল্লি পৌঁছার পূর্বনির্ধারিত ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। অধিকতর নিরাপত্তার কথা ভেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথকে বৃটিশ রয়েল এয়ার পোর্টের ভিআইপি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দিল্লি যাত্রার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু বৃটেন তখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। কূটনৈতিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও এডওয়ার্ড হিথ ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে বৃটিশ রয়েল এয়ার পোর্টের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুর দিল্লি যাত্রা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করেন। কোনো স্বাধীন দেশে বিদেশি সৈন্য থাকাবস্থায় বৃটেন সে দেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে না। অথচ সেই সময় বৃটেনের কূটনৈতিক স্বীকৃতি খুবই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের জন্য।

বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর নির্ধারিত বৈঠকে সরাসরি ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের সময় এগিয়ে আনার প্রস্তাব করেন। বৈঠকের পর মুজিব-ইন্দিরার যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, ভারত ১৯৭২ সালের ৩০ জুনের স্থলে ৩ মাস আগেই ১৯৭২ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার জন্য, বাঙালি জাতির যিনি পিতা। তিনি ১০ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে আসেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বদেশী সমাজচিন্তায় এমন একজন মানুষের সন্ধান করেছিলেন, যিনি হবেন স্বদেশের প্রতিচ্ছ্ববি। স্বদেশকে একজন বিশেষ ব্যক্তির মধ্যে আমরা উপলব্ধি করছি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে বটে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সেই স্বপ্ন অপূর্ণ থাকেনি। বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি যার মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠেছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন। যিনি দেশ ও সমাজের অন্তর্নিহিত সঞ্চিত শক্তিকে জাগ্রত ও একত্রিত করে একটি জাতিকে পৌঁছে দিয়েছিলেন এক অভাবনীয় উচ্চতায়, অপরিসীম গৌরবের শীর্ষে। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বাঙালি তার স্বদেশ ও স্বপ-রিচয় খুঁজে পেল। বাঙালি হয়ে উঠল অপার সম্ভাবনাময় একটি স্বাধীন জাতি। তিনি হয়ে উঠেছিলেন হতমান জাতির কাণ্ডারি। ভরসা, সুখ-দুঃখের সাথী। বাঙালির সকল দুঃখ, গ্লানি ও পরাজয় তিনি আপন বক্ষে ধারণ করেছিলেন। শুনিয়েছিলেন দুঃখ জয়ের অভাবনীয় জাদুকরি মন্ত্র।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বৃটিশ রয়েল এয়ার ফোর্সের কমেট বিমানটি ঢাকার আকাশে দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠেছিল। বিমানটি বাংলার মাটি স্পর্শ করার পর হাজার হাজার মানুষ প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। ভিড়ের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চে না এনে সরাসরি ট্রাক মিছিলে নিয়ে আসা হয়। দুই পাশে অগণিত মানুষের ভিড় ঠেলে তেজগাঁ বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছতে সময় লেগেছিল আড়াই ঘণ্টা। রেসকোর্স ময়দানে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েছিল অশ্রু। কান্না অবরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলতে লাগলেন, বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। বিশ্বকবি তোমার সেই কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আমার সাড়ে সাত কোটি মানুষ যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে।

বঙ্গবন্ধু আরো বললেন, আমি প্রথমে স্মরণ করি বাংলাদেশের অগণিত হিন্দু, মুসলমানের উপর অত্যাচার হয়েছে তাঁদেরকে। তাঁদের স্মৃতির জন্য প্রার্থনা করি। তাঁদের আত্মার মঙ্গল কামনা করি। আজ আমার বাংলা স্বাধীন। আমার জীবনের সব সাধ পূর্ণ হয়েছে। আমি আজ বক্তৃতা করতে পারব না। বাংলার মেয়েরা, মায়েরা, ছাত্র-কৃষক সবাই আমার দেশের মুক্তির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার তুলনা নাই। আমি কারাগারে বন্দি ছিলাম। আপনারা দেশকে মুক্ত করেছেন। আমি জানতাম, বাংলাকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কত লোক শহীদ হয়েছেন, জান দিয়েছেন তবু পিছু হটেননি। ত্রিশ লক্ষ লোককে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও এত লোক, এত নাগরিক মৃতুবরণ করেননি, শহীদ হননি। আমি জানতাম না আবার আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারব। আমি ওদের বলেছিলাম, আমাকে মারতে চাও মেরে ফেল, শুধু আমার লাশটা বাংলাদেশে আমার বাঙালিদের কাছে ফিরিয়ে দিও।

আমি এর আগে এই ময়দানের সভায় আপনাদের বলেছিলাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। আমার সহকর্মীরা অক্ষরে অক্ষরে আমার নির্দেশ মেনেছিল। কত লোক প্রাণ দিয়েছেন, কত লক্ষ লক্ষ মানুষকে পাকিস্তানি সৈন্যরা খুন করেছে। কত লোককে আর দেখতে পাব না। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় বড় ভালোবাসি। দুনিয়ার সব রাষ্ট্রের কাছে আমার নিবেদন আমার বাংলায় রাস্তা নেই, ঘাট নেই খাবার নেই। আমার মানুষ গৃহহারা। খাদ্য নেই, আমার মানুষ পথের ভিখারি- তোমাদের সাহায্য চাই। আজ থেকে আমার হুকুম প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, ভাই হিসেবে। তোমরা আমার ভাই। আমি তোমাদের ভাই। আমাদের এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, মা-বোন কাপড় না পায়, যুবকরা কাজ না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের প্রতি আমার মোবারকবাদ। তোমরা লড়েছ, গেরিলা হয়েছ, রক্ত দিয়েছ, রক্তদান বৃথা যায় না। দেশকে স্বাধীন করেছ। 

রেসকোর্সের লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝ থেকে বের হয়ে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির পথে পা বাড়ান। সেখানে তার আগমনের জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছিলেন বৃদ্ধ পিতা শেখ লুৎফর রহমান, বৃদ্ধা মা সাহেরা খাতুন। প্রিয়তমা পত্নী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, একমাত্র দৌহিত্র ও নিকটাত্মীয় যারা। সন্ধ্যা পৌনে ছটায় স্বাধীন বাংলার পতাকা সংবলিত গাড়িতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, আব্দুস সামাদ আজাদ ও হাজী গোলাম মুর্শেদকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাড়িতে পৌঁছান। এভাবেই সুদীর্ঘ নয় মাসের কারাভোগ ও অশেষ নির্যাতন সহ্য করে দেশে ফিরে তিনি নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে মিলিত হন। সবাই তখন অঝরে কাঁদছিলেন। এই বেদনার মধ্যে অপার আনন্দে ভাসছিল ৩২ নম্বর সড়কের এই বাড়িটি। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় বাঙালির প্রিয় এই বাড়িটিতে বর্বর ঘাতকেরা নিষ্পাপ শিশু, নারী ও বঙ্গবন্ধুর পবিত্র রক্তে রঞ্জিত করে!

সেদিনের সব ঘটনা তুলে ধরার মতো নয়। অনেক অশ্রু-আনন্দে সেদিন হয়ে গিয়েছিল বাঙালি জাতির সর্বাধিক গৌরবের দিন। বাঙালি বাংলাদেশ তাঁর প্রিয় সন্তানকে এই দিন ফিরে পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন স্বদেশে তাঁর মায়ের কোলে।  


লেখক: কবি

ঢাকা/তারা/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়