ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু

ড. এম আবদুল আলীম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু

বাঙালির হাজার বছরের রাজনীতির আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চিরকালের উপেক্ষিত বাঙালি তাঁর নেতৃত্বেই ইস্পাতকঠিন ঐক্যে সংঘবদ্ধ হয়েছে এবং লাভ করেছে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্র ও গৌরবদীপ্ত পতাকা।

ভাষা-আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বাংলা মায়ের তেজোদীপ্ত সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ৫৪-র নির্বাচন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং সর্বোপরি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান করে তিনি হয়ে ওঠেন এ ভূখণ্ডের মুক্তিকামী মানুষের  অবিসংবাদিত নেতা।

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের সময় শেখ মুজিব কারাগারে বন্দি ছিলেন। ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৫০ সালে গ্রেফতার হন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে গুলি হয়। সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেক শহীদ রক্ত দেয়। বঙ্গবন্ধু তখনও বন্দি। বন্দি থাকা অবস্থায়ও ছাত্রদের সাথে সবসময় তাঁর যোগাযোগ ছিল। তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতেন।’ বস্তুত, ‘জেল থেকেই তিনি তাঁর অনুসারী ছাত্র নেতাদের গোপনে দিক-নির্দেশনা দিতেন।’ শুধু তাই নয়, তিনি ‘জেল থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিতেন।’ 

পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৫১ সালের ৩০শে আগস্ট থেকে ১৯৫২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে বেশ কয়েকবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ সময় আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, ছাত্রনেতা, চিকিৎসক, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, আত্মীয়-স্বজন অনেকেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। ১৯৫১ সালের ১৩ই নভেম্বরের গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঐদিন সকাল ৯টায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাঁর কয়েকজন পুরনো বন্ধু, আনোয়ারা বেগম এমএনএ, খয়রাত হোসেন এমএনএ, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আহমদ হোসাইন এবং প্রায় ৩০ জন মেডিকেল ছাত্র তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই  ৩০শে নভেম্বর ১৯৫১ তারিখে সকাল ৯. ১৫টায় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজ খান ও জনৈক নজরুল ইসলাম। তাঁরা ৯. ১৫টা থেকে ৯. ৪৫টা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আব্দুস সালাম খান নামক এক গোয়েন্দা সদস্য একটু দূরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও, তাঁরা কি বিষয়ে আলাপ করেন, তা শুনতে পাননি বলে ৩০শে নভেম্বর, ১৯৫১ তারিখের গোপন গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।

১৯৫২ সালের ২৫শে জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান খান, আজিজ আহমদ; পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদ; পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হক চৌধুরী ও সহ-সভাপতি কাজী গোলাম মাহবুব। তাঁরা সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে নানা আলাপ করেন। এভাবে হাসপাতালের কেবিন থেকে নিরাপত্তা-বন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ‘পুলিশের নজরকে ফাঁকি দিয়ে তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে দেশের সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনা এবং ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে পরামর্শ প্রদান’ করেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে, সেখানে বসেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ঢাকা সফরে এসে ১৯৫২ সালে ২৭শে জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উক্তি পুনর্ব্যক্ত করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে পূর্ববঙ্গের ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা-বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের আলোচনা হয়। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালনের। কেবল তাই নয়, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক যাতে ছাত্রলীগ থেকেই করা হয়, সে বিষয়েও শেখ মুজিবুর রহমান নির্দেশনা দেন। এ প্রসঙ্গে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং বিভিন্ন ভাষণে তিনি বিস্তারিতভাবে বলেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন: ‘আমি হাসপাতালে আছি। সন্ধ্যায় মোহাম্মদ তোয়াহা ও অলি আহাদ দেখা করতে আসে। আমার কেবিনের একটা জানালা ছিল ওয়ার্ডের দিকে। আমি ওদের রাত একটার পরে আসতে বললাম। আরও বললাম, খালেক নেওয়াজ, কাজী গোলাম মাহবুব আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে খবর দিতে। দরজার বাইরে আইবিরা পাহারা দিত। রাতে অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন পিছনের বারান্দায় ওরা পাঁচ-সাতজন এসেছে। ... বারান্দায় বসে আলাপ হল এবং আমি বললাম, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও খবর দিয়েছি। ছাত্রলীগই তখন ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগ নেতারা রাজি হল। অলি আহাদ ও তোয়াহা বলল, যুবলীগও রাজি হবে। ... সেখানেই ঠিক হল, আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই জনমত গঠন করতে হবে।’

কারাগারের রোজনামচায় তিনি আরও স্পষ্ট করে লিখেছেন: ‘জানুয়ারি মাসে আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। ... আমি তখন বন্দি অবস্থায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাত্রের অন্ধকারে মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের সহায়তায় নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদের দিন স্থির করা হয়। আমি ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন শুরু করব মুক্তির জন্য। কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, মোল্লা জালালউদ্দিন, মোহাম্মদ তোয়াহা, নাঈমুদ্দীন, খালেক নেওয়াজ, আজিজ আহম্মদ, আবদুল ওয়াদুদ ও আরো অনেকে গোপনে গভীর রাতে আমার সঙ্গে দেখা করত।’

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন এবং পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী গোলাম মাহবুবের আহ্বায়ক নির্বাচিত হওয়া, সভায় গৃহীত প্রস্তাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির শর্ত যুক্ত করা প্রভৃতি বিষয় পর্যালোচনা করলে এ বিবরণের বস্তুনিষ্ঠতা খুঁজে পাওয়া যায়। তাছাড়া সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রাধান্য থেকেও এটা অনুধাবন করা যায়। ১৯৭৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: ‘অনেকে ইতিহাস ভুল করে থাকেন। ১৯৫২ সালের আন্দোলনের তথা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস আপনাদের জানা দরকার। আমি তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্দী অবস্থায় চিকিৎসাধীন। সেখানেই আমরা স্থির করি যে, রাষ্ট্রভাষার ওপর ও আমার দেশের ওপর যে আঘাত হয়েছে ২১ শে ফেব্রুয়ারি তারিখে তার মোকাবেলা করতে হবে। সেখানেই গোপন বৈঠকে সব স্থির হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রস্তুতি। ছবি: রফিকুল ইসলাম

 

ভাষা-আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং অন্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কারাবন্দি অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের আলাপ-আলোচনা ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। বদরুদ্দীন উমর, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুল মতিন, আহমদ রফিকসহ অনেকেই এর বিপক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে মহিউদ্দিন আহমেদ, অলি আহাদ, গাজীউল হক, কামরুজ্জামান, আবদুস সামাদ আজাদ, এম আর আখতার মুকুল, শেখ আব্দুল আজিজ, জিল্লুর রহমান, কে. জি. মুস্তাফা, আবদুল গাফফার চৌধুরী প্রমুখ ভাষাসংগ্রামী এবং মযহারুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান, হারুন-অর-রশিদ, মুনতাসীর মামুন, আবু আল সাঈদ, নূহ-উল-আলম প্রমুখ গবেষক এর পক্ষে জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেছেন। 

বদরুদ্দীন উমর ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে নিরাপত্তাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের ৫২-র ভাষা-আন্দোলনে ভূমিকার কথা অলি আহাদের বক্তব্য-সূত্রে পরোক্ষভাবে স্বীকার করলেও; পরবর্তীকালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় তা সরাসরি নাকচ করে দেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হলো: ‘শেখ মুজিব ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তি লাভ করে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, যে সময়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকারীদের বিপুল সংখ্যায় গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির অনেক সদস্য আত্মগোপন করে আছেন। এই পরিস্থিতিতে জেল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি লাভ থেকেই প্রমাণিত হয় যে তৎকালীন ভাষা আন্দোলনে তারও কোন ভূমিকা ছিল না এবং আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মুক্তি দেওয়াটা সরকার নিজেদের জন্য অসুবিধাজনক বা বিপজ্জনক কিছুই মনে করেনি।’

বদরুদ্দীন উমরের এ বক্তব্য খণ্ডিত। কারাগারে ছাত্রনেতারা যে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে ভাষা-আন্দোলনে দিকনির্দেশনা নিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গ তিনি এড়িয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিদান প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন, ১৯৫২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পরবর্তী ভাষা-আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে জেলখানা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশনা প্রদানের বিষয়ে বদরুদ্দীন উমরের বক্তব্যকে যুক্তি দ্বারা খণ্ডন করেছেন একুশের গান রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী। ৫২-র ভাষা-আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা প্রদান সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: ‘ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের আগে থেকেই শেখ মুজিব জেলে ছিলেন। তিনি তার চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী জেল থেকে তার অনুগত সেপাইদের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ও আওয়ামী লীগের তরুণ নেতাদের কাছে গোপনে চিঠিপত্র পাঠিয়ে আতাউর রহমান-শামসুল হক গ্রুপের আন্দোলন-বিমুখতা সম্পর্কে সতর্ক করতে শুরু করেন এবং ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে সরকার যদি ১৪৪ ধারা জারি করে, তাহলে আওয়ামী লীগ কমান্ডের নির্দেশ যাই হোক, ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মীরা যাতে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়, সেই পরামর্শ দিতে থাকেন। সরকারি গোয়েন্দারা যখন টের পেল যে, শেখ মুজিব জেলে বসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার দল ও অনুসারীদের উৎসাহিত করছেন, তখন আকস্মিকভাবে তাকে ১৫ অথবা ১৬ তারিখে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। ... ফরিদপুর জেলে বসেও তিনি চিরকুট পাঠান, যেটি একুশ তারিখে একটু দেরিতে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে পৌঁছে।’

বদরুদ্দীন উমরের প্রত্যেকটি মত বিভিন্ন যুক্তি দ্বারা খণ্ডন করে একুশের গান রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী আরও লিখেছেন: ‘উমরকে বাহবা না দিয়ে পারা যায় না। বায়ান্ন সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ধারেকাছেও তিনি ছিলেন না। ... একটি আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলে পদে পদে যে ভুল হয়, ১৪৪ ধারা সম্পর্কে উমরের বালখিল্য উক্তিই তার প্রমাণ।’

আবদুল মতিন এবং আহমদ রফিক নিরাপত্তাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের ৫২-র ভাষা-আন্দোলনে যুক্ত থাকা এবং ছাত্রনেতাদের নির্দেশনা প্রদানের বিষয়টিকে ‘ইতিহাসের কল্পকাহিনী’ বলে অভিহিত করে লিখেছেন: ‘একুশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল না। অথচ দীর্ঘকাল পর বৃথাই একুশের আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে ‘মিথ’ তৈরির চেষ্টা চলছে, ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে, সে চেষ্টা এখনো চলছে এবং এজন্য দায়ী কয়েকজন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’  আহমদ রফিক তাঁর ‘ভাষা আন্দোলন : ইতিহাস ও উত্তরপ্রভাব’ (২০১৭) গ্রন্থে আগের বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করে লিখেছেন: ‘দীর্ঘকাল পর বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) ভূমিকা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা সঠিক তথ্য-নির্ভর ইতিহাস নয়। কেউ বলেছেন ‘১৪৪ ধারা ভঙ্গের নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন’ কেউ বলেন, ‘পরিষদ ভবন ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা তারই’, আবার কেউ দাবি করেছেন-‘আন্দোলনের কর্মসূচি তাঁর কাছ থেকেই এসেছে’। দাবিগুলো এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে যারা কমবেশি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।’

আহমদ রফিক ও আবদুল মতিনের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই, আছে ঢালাও মন্তব্য। তাঁরা বলতে চেয়েছেন যে, ১৯৫২ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান কারামুক্ত হয়ে কেন অসুস্থ অবস্থায়ই ভাষা-আন্দোলনে যুক্ত হলেন না? তাঁদের দাবি ভাষা-আন্দোলন ‘তখনও চলছে’। এবং ২ মাস পর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় শেখ মুজিবুর রহমান যে বক্তব্য দেন, তার ফলে তাঁরা ৫২-র ভাষা-আন্দোলনে তাঁর যুক্ত না থাকার ‘ঘটনা সঠিক’ বলে মনে করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন। তাঁদের এ বক্তব্য খণ্ডন করার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

প্রথমত, তাঁরা বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পান ২৬শে ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এ তথ্য ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। ঐ সময়কার ইত্তেফাক, ইনসাফ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর মুক্তির সংবাদ ছাপা হয়। ১৯৫২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘নিরাপত্তা বন্দী জনাব মুজিবর রহমানের মুক্তিলাভ’ শিরোনামের সংবাদে বলা হয়: ‘রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র হইতে ঘোষণা করা হইয়াছে যে, বিখ্যাত নিরাপত্তা বন্দী জনাব মুজিবর রহমান খানকে [ভুলবশত খান বলা হয়েছে] গতকাল মুক্তি দান করা হইয়াছে।’ অর্থাৎ শেখ মুজিব কারামুক্ত হন ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। প্রকৃতপক্ষে, ২৭শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তো ভাষা-আন্দোলন চলমানই ছিল না, তাতে শেখ মুজিবুর রহমান যোগ দেবেন কী করে? ২৫শে ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সভায় ‘২৬. ২. ৫২ তারিখ থেকে সাধারণ ধর্মঘট প্রত্যাহার’ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী ২৬শে ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা ‘শহরের সর্বত্র স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু’ হয়।

দ্বিতীয়ত, ফরিদপুর কারাগারে থাকা অবস্থায় এবং কারামুক্ত হয়ে তিনি ভাষা-আন্দোলন সম্পর্কে নীরব ছিলেন না। সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা ও শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং আনিসুজ্জামানের স্মৃতিকথা  থেকে এ তথ্য জানা যায়। ঢাকায় গুলিচালনা ও ধরপাকড়ের সংবাদ শুনে শেখ মুজিবুর রহমান অতিশয় মর্মাহত হন এবং শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বিবৃতি দেন। একই সঙ্গে তিনি দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসার অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেন এবং কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় এসে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন এবং কারাবন্দিদের মুক্তির দাবি করেন। তিনি করাচিতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে দেখা করে বন্দিদের মুক্তির দাবি জানান। এছাড়া  হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে দিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে বিবৃতি প্রদান করান। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে পশ্চিম পাকিস্তানের সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের ভাষা-আন্দোলন সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩। ঢাবি ছাত্রীদের মিছিল

 

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা অলি আহাদ (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগে যোগ দেন) ভাষা-আন্দোলনের দুই পর্বেই প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ হতো এবং ভাষা-আন্দোলন নিয়ে কথা-বার্তা চলতো। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন: ‘শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারী হইতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন। চিকিৎসার কারণে সরকার তাঁহাকে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। প্রহরী পুলিশের ইচ্ছাকৃত নির্লিপ্ততার সুযোগ গ্রহণ করিয়া আমরা তাঁহার সহিত হাসপাতালেই কয়েক দফা দেখা করি। তিনি ও নিরাপত্তা বন্দী মহিউদ্দিন আহমেদ ১৬ই ফেব্রুয়ারী হইতে মুক্তির দাবীতে অনশন ধর্মঘট করিবেন, সেই কথা শেখ সাহেবই আমাদিগকে জানাইয়াছিলেন। ... ১৫ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হইতে শেখ মুজিবর রহমানকে ফরিদপুর জেলা কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয় এবং এই ১৫ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হইতে ফরিদপুর যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে নারায়ণগঞ্জ নেতৃবৃন্দের সহিত শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ ঘটে।’

শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা হয়েছিলো তখনকার মেডিকেল কলেজের শেষবর্ষের ছাত্র মির্জা মাজহারুল ইসলামের। তিনি শেখ মুজিবের পূর্বপরিচিত ছিলেন তাই হাসপাতালে একাধিকবার তাঁর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেছেন: ‘১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু নিরাপত্তা বন্দী অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আমি তখন এই কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র। দোতলায় ৮ নম্বর ওয়ার্ড-সংলগ্ন একটি কেবিনে তিনি থাকেন। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করলাম। রাউন্ড দেয়ার সময় প্রফেসরদের সঙ্গে আমরা যেতাম কিন্তু আমাদেরকে কেবিনে প্রবেশ করতে দিত না। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পূর্ব সম্পর্ক ছিল। কলকাতায় আমাদের মাঝে প্রথম পরিচয় হয়, পরে ঢাকা এসেও বহু বার দেখা হয়েছে। একদিন বঙ্গবন্ধু ‘এই মির্জা’ বলে আমাকে ডেকে তাঁর কেবিনের জানালার কাছে নিয়ে যান এবং ভাষা আন্দোলনের খোঁজখবর নেন। তিনি আমাকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

তখনকার গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ভাষাসংগ্রামী ও গবেষকের সাক্ষাৎকার ও স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ‘ছাত্রনেতারা গোপনে তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) সাথে দেখা করতেন। তাঁর মুক্তির জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিবৃতি দেন। নাইমউদ্দীন, খালেক নেওয়াজ, অলি আহাদ ও মোহাম্মদ তোয়াহা দেখা করেন এবং তাঁরা ভাষা আন্দোলন বিষয়ে তাঁর সাথে পরামর্শ করতেন। সরকার তাঁকে হাসপাতালে বসে রাজনীতি করার অপরাধে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে এবং তাদের সুপারিশে তাঁকে অনেকটা সুস্থ বলে ঘোষণা দিয়ে আবার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকাকালে তিনি ও মহিউদ্দিন আহমেদ চিঠি দিয়ে সরকারকে জানান, ১৫ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি না দিলে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁরা অনশন ধর্মঘট শুরু করবেন।’

এভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এক পক্ষ বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা পুরোপুরি খারিজ করে দিয়ে বাহবা নিতে চেয়েছেন; অন্য পক্ষ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে সকল কৃতিত্ব তাঁর কাঁধে তুলে দিতে চেয়েছেন। সম্প্রতি শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং তাঁর সম্পর্কে প্রণীত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনসমূহ প্রকাশের পর ভাষা-আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, তা দিবালোকের মতো সত্য বলে প্রতিভাত হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের সময় কারাগারে বন্দি অবস্থায় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের যোগাযোগ হয়েছে, সরাসরি কথা হয়েছে এবং তিনি আন্দোলন সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এবং সে নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ও ফরিদপুর কারাগারে স্থানান্তরের পথে-নারায়ণগঞ্জে।

তাছাড়া কারাগার থেকে চিঠির মাধ্যমে, টেলিগ্রামের মাধ্যমে ফরিদপুর কারাগারে স্থানান্তরের পথে নারায়ণগঞ্জে এবং চিরকুট পাঠিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ৫২-র ভাষা-আন্দোলনে ছাত্রনেতাদের  নির্দেশনা দিয়েছেন এটিও সত্য। ভাষা-আন্দোলনে তিনি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন, এটা ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বক্তৃতা-বিবৃতি ও সমকালীন পত্র-পত্রিকার সংবাদ পর্যালোচনা করলেই প্রমাণিত হয়। কারাগারে বসে তিনি এবং মহিউদ্দীন আহমদ ১৯৫২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করলে ভাষা-আন্দোলনে কর্মসূচিতে আসে উৎসাহ ও প্রেরণা। তাঁদের মুক্তির দাবি যুক্ত হয়ে ভাষা-আন্দোলনের কর্মসূচি ভিন্নমাত্রা পায়। ১৯৫২ সালের ৩১শে জানুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সভায় যেসব প্রস্তাব গৃহীত হয় তাতে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবি যুক্ত ছিল। ১৯শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসভা হয়। ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দারি করে পোস্টারও দেওয়া হয়। ২০শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার এক গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়: Did yonal duty in the Sutrapur P. S. area with W/C Md. Yasuf on 19.2.1952 and this morning (20.2.52) a Bengali leaflet under heading ÒHunger Strike of Sheikh Mujibar RahmanÓ and Mahiuddin was found to be distributed at defferent places of Dacca City. এছাড়া তাঁদের মুক্তির জন্য পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভায় আবেদন করা হয়।

সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়: ‘পাকিস্তান সংগ্রামের জঙ্গী কর্মী, ছাত্র-যুব আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাবাস ও বন্ধ দিনগুলির নিষ্ঠুর নিষ্পেষণে জীর্ণ স্বাস্থ্যের জন্য উৎকণ্ঠার ও ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলিয়া প্রদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই প্রদেশের সকল রাজনৈতিক কর্মী- বিশেষ করিয়া শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের আশু মুক্তির প্রশ্নে পূর্ববঙ্গ পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে এক আবেদনপত্র পেশ করিয়াছেন। স্বাক্ষরকারীগণ বলেন- সর্বশক্তি নিয়োজিত করিয়া আপনারা পাকিস্তানে আইন ও নীতির শাসন, সৌভ্রাতৃত্ব ও গণতন্ত্র কায়েম করুন। ... আসুন আসুন, আপনারা পরিষদের ভিতরে আর আমরা বাহিরে পূর্ববঙ্গের রাজবন্দীদের বিশেষ করিয়া শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের মুক্তির দাবিতে আওয়াজ তুলি।’ কেবল রাজপথ এবং সভা-সমাবেশে নয়, বঙ্গীয় আইন পরিষদেও শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবি তোলা হয়। তাঁর ‘অনশন পালন বিষয়ে আলোচনার জন্য পূর্ব পাকিস্তান এ্যাসেম্বিলিতে আনোয়ারা খাতুন এমএলএ  মুলতবি প্রস্তাব পর্যন্ত উত্থাপন করেছিলেন।’

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ‘মানবতার নামে’ শীর্ষক এক পৃথক বিবৃতিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদের মুক্তির দাবি জানান। ২৭শে ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে অত্যন্ত অসুস্থ শরীরেও তিনি গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকেই একুশে ফেব্রুয়ারির গুলিবর্ষণে প্রাণহানীর ঘটনায় মর্মাহত হয়ে বিবৃতি পাঠান এবং শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এরপর কিছুটা সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফিরে এসে নিরাপত্তা-বন্দিদের মুক্তি দাবিতে বিবৃতি দেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। ১৯৫২ সালের ২৭শে এপ্রিল সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ-এর উদ্যোগে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।

১৯৫২ সালের জুন মাসে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে ভাষা-আন্দোলনের পক্ষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমর্থন আদায় করেন এবং বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁকে দিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করান। বিবৃতিটি ১৯৫২ সালের ২৯শে জুন সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ মুজিব লিখেছেন: ‘‘একটা অনুরোধ করলাম, তাঁকে লিখে দিতে হবে যে, উর্দু ও বাংলা দুইটাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসাবে তিনি সমর্থন করেন। কারণ অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। মুসলিম লীগ এবং তথাকথিত প্রগতিবাদীরা প্রপাগাণ্ডা করছেন তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই লিখে দেব, এটা তো আমার নীতি ও বিশ্বাস’। তিনি লিখে দিলেন।’’

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। আমতলায় ছাত্রদের সভা। ছবি সংগৃহীত

 

করাচিতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দেখা করেন এবং সংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ভাষা-আন্দোলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ভাষা-আন্দোলন নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি ছিল, শেখ মুজিবুর রহমানের সাংবাদিক সম্মেলনের পর তা দূর হয়। ঢাকায় ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান আরেকটি সাংবাদিক সম্মেলন করে পাকিস্তান সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি সম্মেলনে যোগদানের জন্য চীন সফরে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ‘মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন’। এতে বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা যেমন প্রকাশিত হয়, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে যাঁরা যোগদান করেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন ভারতের মনোজ বসু। ১৯৫২ সালের ২০শে নভেম্বর আরমানিটোলা ময়দানে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত ঐ জনসভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান, দেওয়ান মাহবুব আলী, ইব্রাহিম ত্বাহা, সুলেমান খান, আশরাফ ফারুকী, মুহম্মদ এমাদুল্লাহ, গাজীউল হক প্রমুখ। ১৯৫৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বিকেলে আরমানিটোলা মাঠে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে আরও একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বন্দিদের মুক্তি ও বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন। ১৯৫৩ সালের শুরু থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলেন এবং উর্দুকে বয়কট করার ব্যাপারে সোচ্চার হন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনসূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ‘ঢাকার এক জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন, এ দেশ জুড়ে উর্দু বয়কট করার জন্য আন্দোলন শুরু করা হবে।’ এ বছর ৫ই ফেব্রুয়ারি বগুড়ার একটি জনসভায়ও তিনি একই সুরে কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘বক্তৃতার সময় শেখ মুজিব বলেন, বাংলাকে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। এখানকার স্কুল-কলেজে নূরুল আমীন সরকার উর্দু চালু করেছেন, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান তার স্কুল-কলেজে বাংলা চালু করেনি। তারা যদি বাংলাকে না মেনে নেয়, তাহলে কয়েকমাস পর আমরাও উর্দুকে বয়কট করব।’

ভাষা-আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১৯৫৩ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানও ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালনের আহ্বান জানান। ঐদিন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ঢাকার সর্বস্তরের মানুষ প্রভাতফেরি, শোভাযাত্রা, শহীদদের কবর জিয়ারত এবং আলোচনা-সভার আয়োজন করে। এতে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান খান, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী গোলাম মাহবুব এবং ছাত্রলীগ নেতা এম এ ওয়াদুদসহ অনেকে। ভাষা আন্দোলনের বর্ষপূর্তির সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়। ঢাকা প্রকাশ-এ শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলা হয়: ‘‘আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সেক্রেটারী জনাব মুজিবুর রহমান সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, গত বৎসর ঠিক এমন দিনে পূর্ব্ব পাকিস্তানের সাড়ে চার কোটি অধিবাসীর ভাষা বাংলাকে আজাদ পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করিবার দাবীতে ঢাকা শহরে ছাত্র ও জনসাধারণ নির্ভীকভাবে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়াছে। তাহারা সেই দিন যে নতুন ইতিহাস রচনা করিয়াছে, সমগ্র জাতি তাহা চিরদিন শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করিবে। ২১শে ফেব্রুয়ারীকে তিনি ‘জাতীয় কারবালা দিবস’ বলিয়া অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে, আজ পাকিস্তান সরকারের সম্মুখে শুধুমাত্র দুইটি পথ খোলা রহিয়াছে। হয় তাঁহারা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বলিয়া মানিয়া লইবেন, নতুবা গদি ছাড়িবেন। তিনি সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তি এবং নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার করিবার জন্যও দাবী জানান।’’

শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বক্তৃতায় বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দানের দাবি তোলেন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা সম্পর্কে বলা হয়: ‘দায়ী ব্যক্তি (শেখ মুজিবুর রহমান) ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন’-এ বিশেষ নেতৃত্বের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেন। ২১. ২. ৫৩ তারিখে ঢাকার একটি জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন যে, পূর্ববাংলার ‘উর্দু’ বয়কট করার জন্য প্রদেশব্যাপী দাবি বা আন্দোলন দিবস পালন করা হবে। ২১. ২. ৫৩ তারিখ ‘শহীদ দিবস’ উপলক্ষে তিনি ঢাকায় একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন।’’ ঐ দিনের বক্তৃতায় ‘যতদিন বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না পাবে, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।’

২১শে ফেব্রুয়ারির বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে গাজীউল হক গেয়েছিলেন তাঁর গানধ: ‘ভুলব না, ভুলব না-একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না!’ বঙ্গবন্ধুর অনুরোধেই তিনি গানটি ঐ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন। এ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে গাজীউল হক লিখেছেন: ‘সভায় জনাব শেখ মুজিবুর রহমান-এর অনুরোধে ভাষা আন্দোলনের ওপর লেখা আমার গানটি আমাকে গেয়ে শোনাতে হয়। এখানে বলা প্রয়োজন, ১৯৫৩-৫৪-৫৫ সালে যে গানটি গেয়ে প্রভাতফেরি করা হতো সে গানটি লিখেছিলাম আমি। গানটির প্রথম লাইন ছিল: ‘ভুলব না, ভুলব না-একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না!’ সময়ের প্রয়োজনে এ গানটি লিখেছিলাম।’

১৯৫৩ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি-সম্বলিত শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। ১১ই মার্চ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার বার লাইব্রেরি হলে যে আলোচনা-সভা অনুষ্ঠিত হয় তাতেও বক্তৃতা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১২ই মার্চ দৈনিক আজাদ-এ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা দাবী’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়: ‘গতকল্য (বুধবার) শহরের বিভিন্ন ছাত্রপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কর্ত্তৃক রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হয়। এই উপলক্ষে গতকল্য সর্ব্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম্মপরিষদের পক্ষ হইতে ছাত্র জনসাধারণের নিকট ব্যাজ বিক্রয় করা হয় এবং সন্ধ্যায় বার লাইব্রেরী হলে এক আলোচনা-সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব আতাউর রহমান। সভায় অধ্যাপক আবুল কাসেম, পূর্ব্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য আবদুল মতিন, আওয়ামী লীগের জমিরুদ্দীন আহম্মদ, গণতন্ত্রী দলের মাহমুদ আলী, প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ ব্যক্তি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার দাবীতে বক্তৃতা করেন।’

এভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভাষা-আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অসামান্য। মূলত, ভাষা-আন্দোলনের মাধ্যমেই ঢাকার রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপিত হয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জাগ্রত জাতীয়তাবাদী চেতনা লালন এবং বাস্তবায়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে স্বাধিকার ও মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ও জাতিসংঘে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন, তার ফলে  ইতিহাস তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।

 

তথ্যসূত্র
আবুল ফজল, শেখ মুজিব: তাঁকে যেমন দেখেছি, পঞ্চম মুদ্রণ, বাতিঘর, চট্টগ্রাম : ২০১৮; পৃ. ৭৩
Sheikh Hasina [edited], ÔSecret  Documents of Intelligence Branch on Father of The Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman (1948-1971),Vol–1, Hakkani Publishers, Dhaka : September, ২০১৮; চ. ১৬০, ৩১৯

শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, চতুর্থ মুদ্রণ, ইউনিভার্সিাটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা : ফেব্রুয়ারি ২০১৮;  পৃ. ৯৩
শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, পঞ্চম মুদ্রণ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা : অক্টোবর, ২০১৭; পৃ. ২০৬
তাজউদ্দীন আহমদ, ১১ই মার্চ, ১৯৪৮; তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি ১৯৪৭-১৯৪৮, প্রথম খণ্ড, প্রতিভাস, দ্বিতীয় সংস্করণ, ঢাকা : জানুয়ারি ২০১৪; পৃ. ২২৫-২২৬
হায়াৎ মামুদ, অমর একুশে, ইত্যাদি প্রথম সংস্করণ, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা :  ফেব্রুয়ারি ২০১৫; পৃ. ৬৬
অলি আহাদ, জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ’৭৫, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিমিটেড, চতুর্থ সংস্করণ, চট্টগ্রাম : ফেব্রুয়ারি ২০০৪; পৃ. ১৩৬-১৩৭


 

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়