ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

একটি ন্যায় বিচারের অপেক্ষায়

মো. শফিকুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ১৪ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
একটি ন্যায় বিচারের অপেক্ষায়

গত ১ মে ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ফেইসবুকে দেখতে পেলাম, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম খান (২৪) আর বেঁচে নেই।

খবরটি দেখার পর থেকেই এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করি। সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের ফোন দিলাম। ঘটনা জানার চেষ্টা করলাম। যা জানলাম তাতে মন আরো খারাপ হয়ে গেল। শহরের মেসে নিজের রুমে সন্ত্রাসী হামলায় নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় তৌহিদুল ইসলাম খান।

শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই কিছু সময়ের জন্য। সেহরি খেতে উঠে খাবার আর খেতে পারেনি সে। খাবারের থালা টেবিলের উপর রয়ে গেছে। দেহটি পরে আছে মেঝেতে- কি নিশ্চল! কি নীরবে পরে আছে! যে নীরবতা আমরা কেউ কারো জন্য কামনা করি না। মানুষ কি নির্মম আর পাষণ্ড হতে পারে, আমি চিন্তা করতে পারি না! আমি যদি এত কষ্ট অনুভব করি, তাহলে তার বাবা-মা’র কি অবস্থা সহজেই অনুমেয়। প্রতিটি বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, তারাও নিশ্চয়ই দেখেছিলেন। সন্তানকে নিয়ে তৌহিদের বাবা-মা’র স্বপ্নগুলো আর বাস্তবায়ন হবে না। তারা সন্তান হারানোর ব্যথা নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন। জীবন্ত লাশের মতো জীবনযাপন করতে হবে তাদের, আমি এটাই মনে করি।

তৌহিদুল ইসলাম খান ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১০ম ব্যাচের ছাত্র। আমাদের প্রিয় এই ছাত্র সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেছে আজ চৌদ্দ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীই এই হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারেনি। পারে না। তারা সবাই অপেক্ষা করছে বিচারের জন্য। কারণ তৌহিদের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। ওর সহপাঠী, শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজন সবাই বিস্মিত, ব্যথিত, ক্ষুব্ধ।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরলস চেষ্টায় গত ৩ মে, ২০২০ অপরাধীকে গ্রেফতার করে ময়মনসিংহের পুলিশ প্রশাসন। এই করোনাকালে অল্প সময়ের মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারায় ময়মনসিংহের পুলিশ প্রশাসনকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছেন। কিন্তু আমরা অপেক্ষা করছি, কখন আমরা শুনবো- অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। তাহলেই ওর বাবা-মা, সহপাঠী এবং আমরা সবাই শান্তি পাবো।

মৃত্যুর পর সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং-এ অপরাধীর যে জবানবন্দী তুলে ধরা হয়েছে তা সাধারণভাবে শিক্ষার্থীসহ নিহতের পরিবারকে মর্মাহত করেছে। তারা মনে করছে অপরাধের সঙ্গে হয়তো অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারে। হয়তো আরও গভীর তদন্তের স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। তাই এ বিষয় পুলিশ প্রশাসন আরও গভীরভাবে বিবেচনা করতে পারে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত, তৌহিদের গায়ে আঘাতের ধরন এবং অপরাধীর জবানবন্দীর মধ্যে অসংলগ্নতা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের অধীনে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার ও শাস্তির বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তাই আমি চাই না, আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী রাস্তায় নেমে যাক, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হোক। ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচারই এর সমাধান।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারে যথাযথ সহয়তা দেওয়া। আমি মনে করি, প্রশাসন তা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যখন এই জাতীয় ঘটনা ঘটে তখনই আমরা একটু সচেতন হই। অন্যথায় আমাদের ঘুম ভাঙে না। এটাই হলো আমাদের দোষ। কিছু দিন পার হলে সময়ের পরিক্রমায় সবই ধামাচাপা পরে যায়।

আমরা চাই মেস মালিক, প্রশাসনসহ সকলেই এই ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। অন্যথায় এই জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না। বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থায় কিছুটা দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। অনেক সময় বিচার কার্যক্রম থেমে যায়, এমনকি বিচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব যাতে বিচারের কার্যক্রম খুব দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হয়।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়