একটি সমাজতাত্ত্বিক খোলা চিঠি : প্রসঙ্গ করোনাভাইরাস
মনোজ দত্ত || রাইজিংবিডি.কম
‘এপ্রিল ১৬। ডাক্তার বার্নার্ড রিয়ু তাঁর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়েছেন। এমন সময় পায়ের নিচে নরম মাংসের পিণ্ড। একটা মরা ইঁদুর! রিয়ু কিছুক্ষণ থমকালেন। পাত্তা না দিয়ে এক লাথি মেরে সেটাকে সরিয়ে চলে গেলেন নিজের কাজে।’ কথাগুলো লিখেছেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আলবেয়ার কামু তাঁর ‘লা পেস্তে’ উপন্যাসে। ইংরেজিতে ‘দ্য প্লেগ’। রিয়ু ওরান শহরে কর্মরত চিকিৎসক, যে শহরকে গ্রাস করবে প্লেগ। এই মহামারির সূত্রপাত একটা লাথি। ইঁদুরটিকে পরীক্ষা না করে লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়া।
১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল কামুর কালজয়ী এই উপন্যাস। ব্রিটেনের এক পত্রিকার সমীক্ষা মতে, ৭৩ বছর পরে সেই উপন্যাস ফের বেস্টসেলার। বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই করোনা সংক্রমণকে প্যানডেমিক ঘোষণা করে দিয়েছে। কিন্তু ৭৩ বছর আগে লেখা কামুর উপন্যাস কি শুধুই এক মহামারির কাল্পনিক বর্ণনা? না কি ইতিহাস? না কি তা হয়ে উঠতে পারে যে কোনও মহামারিকে বুঝে ওঠার পথনির্দেশিকা? এর উত্তর দিয়েছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্লস রোসেনবার্গ। করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে যদি শিক্ষা নেওয়াই উদ্দেশ্য হয়, তা হলে রোসেনবার্গের তত্ত্বকে ফিরে দেখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।
রোসেনবার্গের মতে, যে কোনও রোগ যখন এপিসেন্টার বা প্রাথমিক সংক্রমণের এলাকা ছেড়ে গোটা দেশ ও শেষে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তার তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রবন্ধে তিনি প্রথম ধাপের নাম দিয়েছেন প্রোগ্রেসিভ রেভেলেশন, ধীরে ধীরে বুঝে ওঠা। এই ধাপের সর্বপ্রথমে যেটা ঘটে তা হলো, ব্যাপারটাকে পাত্তা না দেওয়া। যেমনটা করেছিলেন রিয়ু, মরা ইঁদুরটিকে লাথি মেরে সরিয়ে দিয়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে সমস্ত মহামারি ও অতিমারির সামাজিক ইতিহাসে নজর করলেই দেখা যাবে ব্যাপারটি ঘটেছে প্রতি বারই। এই পাত্তা না দেওয়ার ধাপটি করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রেও সত্যি। প্রতিটি মানুষ এবং কোনও জনসমষ্টির যে কোনও ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে ঘটনাটি থেকে তাঁর মানসিক, সামাজিক ও ভৌগোলিক দূরত্বের উপর। প্রথম যখন চিনে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়, তখন গোটা বিশ্বের জনসমষ্টিই তা থেকে মানসিক, সামাজিক ও ভৌগোলিক দূরত্বে। ধীরে ধীরে নিজের নিয়মে রোগ ছড়ায়। বদলায় দূরত্বের দৈর্ঘ্য। তবে এই দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন সব জায়গায় সমান ভাবে ঘটে না। ফলে ইঁদুরকে লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটতেই থাকে বেশ কিছু জায়গায়। এ ভাবেই ব্যাপারটা বুঝে ওঠার ধাপটা সম্পন্ন হয়।
এরই সূত্র ধরে করোনা সংক্রমণে চোখ ফেরানো যাক। রোসেনবার্গের আলোচনা মিলে গিয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। চীনের খবর সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলিয়ে নেওয়ার মাঝেই স্টেশন চত্বরে বা চায়ের দোকানে এই কথা শোনা গিয়েছে অহরহ: ‘এখানে তেমন কিছু হবে না’। ধীরে ধীরে রোগ ছড়িয়েছে। প্রথমে কমেছে ভৌগোলিক দূরত্ব। তার পর প্রোগ্রেসিভ রেভেলেশন-এর শেষের ধাপে জনগোষ্ঠীর কোনও কোনও মানুষের মানসিক-সামাজিক দূরত্বও কমেছে মূল ঘটনাটির সঙ্গে।
কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, যেখানে ঘটনাটি ঘটেনি, সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের সেই দূরত্ব কমেনি। তাঁদের কাজ তাত্ত্বিক নয়, সম্ভাবনার উপর নির্ভরশীল নয়। সম্পূর্ণ হাতেকলমে। তাই ঘটনাটি তত্ত্বের পর্যায়ে থাকা পর্যন্ত রিয়ুর ইঁদুরে লাথি মারার ঘটনা ঘটতে থাকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেও।
করোনা সংক্রমণের টাইমলাইনে নজর করলেই দেখা যাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রমণটিকে প্যানডেমিক ঘোষণা করার আগে পর্যন্ত বহু চিকিৎসকও বলেছেন, ‘করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই’। মহামারির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, সেই সময়কার সংবাদপত্রেও রয়েছে এর নিদর্শন।
সংক্রমণ ছড়ানোর দ্বিতীয় ধাপের নাম ম্যানেজিং রেন্ডমনেস। নামে বোঝাই যাচ্ছে এই ধাপটি ভীষণই এলোমেলো। আসলে এই পর্যায়ে বেশ কিছু মানুষ বা গোষ্ঠীর ঘটনার সঙ্গে মানসিক ও সামাজিক দূরত্ব সর্বত্র সমান ভাবে কমছে না। ফলে গোটা ঘটনাটি একটি দেশের বা মহাদেশের সমগ্র জনসমষ্টির মানসিক ও সামাজিক স্পেস-এর ওপর তৈরি করছে অসম চাপ। এই অসম চাপ তৈরি করছে প্রতিক্রিয়া। কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়ার স্পেকট্রাম এতটাই বিস্তৃত যে গোটা ধাপটাই রেন্ডম। রোসেনবার্গ দেখিয়েছেন কীভাবে বিশ শতকের আগে পর্যন্ত সমস্ত মহামারির প্রতিই কোনও জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া ছিল ধর্ম বা আরাধ্য ঈশ্বর-নির্ভর। জনগোষ্ঠী রোগসংক্রমণকারী জীবাণু বা ভাইরাসের গতিপ্রকৃতিকে নিজেদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী চেষ্টা করে আকার দেওয়ার। তারপর সেই বিশ্বাস অনুযায়ী খোঁজা হয় প্রতিকার। একুশ শতকে এই ঘটনা কমেছে বলা যায় না। করোনা সংক্রমণ রুখতে গোমূত্রকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের নিদান ও প্রতিক্রিয়ায় কিছু মানুষের তা বিশ্বাস করা এর সাক্ষ্য দিচ্ছে।
আসলে এই ভণ্ডগুলো বড় ‘ভুল’ সময়ে জন্ম নিয়েছে! এদের প্রতিটি কথা এবং ‘আবিষ্কার’ বিজ্ঞানের কল্যাণে ‘ডাইরেক্ট’ ভুল এবং ‘হাস্যকর’ প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত! যারা বুদ্ধিমান ‘ভণ্ড’, এরাই মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডা সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে বেদ্বীনদের হাতের দিকে চেয়ে বসে আছে! কখন কোন নাস্তিক বা মুরতাদ বিজ্ঞানী করোনার টিকা
আবিষ্কার করবে! সেই কাঙ্খিত ‘বিস্ময়কর’ ঘটনাটির প্রতীক্ষায় গোটা পৃথিবী এখন নির্ঘুম সময় কাটাচ্ছে!
রোসেনবার্গ লিখেছেন, এই দ্বিতীয় ধাপে আরও একটি বিষয় ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সমস্ত মহামারির ক্ষেত্রেই সত্যি, তা হলো দোষ চাপানো। এই দোষ চাপানোর স্পেকট্রামও বিস্তৃত। দোষ চাপানো হয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর উপর, ভিন্ন খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত গোষ্ঠীর উপর, এমনকি বিভিন্ন খাদ্যবস্তুর উপর। করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রেও যে এমনটা ঘটেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি জনৈক প্রাক্তন ক্রিকেটারও ইউটিউবে আঙুল তুলেছেন চৈনিক খাদ্যাভ্যাসের উপর। শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভুয়ো খবরের জেরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক পোলট্রি ফার্ম। দোষারোপের চূড়ান্ত পর্যায় এক দেশের সরকারের অন্য দেশের সরকারের উপর দোষ চাপানো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগের বছরই লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮ সালের সেই প্যানডেমিকের সময় চীন ও মার্কিন সরকার দোষ চাপিয়েছিল একে অপরকে। মার্কিন ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার ল্যাংফোর্ড এক রিপোর্টে দেখিয়েছিলেন, এই প্যানডেমিক-এ সবচেয়ে কম প্রাণহানি ঘটেছিল চীনে। তাই চীন থেকেই নাকি অন্য দেশে ছড়ানো হয়েছিল ভাইরাস। করোনা সংক্রমণেও সেই ঐতিহ্য বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে। করোনাভাইরাস ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী কিছুই চেনে না, কেবল চেনে ফুসফুসের কোষ আবরণীর প্রোটিন রিসেপ্টর। বিপাকীয় কাজের জন্য কোষের ভেতর এবং বাইরে প্রোটিন আনা নেওয়া করতে হয়। নির্দিষ্ট প্রোটিন রিসেপ্টর নির্দিষ্ট প্রোটিনকেই গ্রহণ করে কোষের ভেতরে নিয়ে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাস নিজেকে এমনভাবে বিবর্তিত করেছে যেন সে প্রোটিন রিসেপ্টরকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং নিজেদের প্রোটিন মনে করে কোষের রিসেপ্টরগুলো ভাইরাসটিকে সাদরে গ্রহণ করে ভেতরে নিয়ে যায়। এই কাজটি যে ভাইরাসটি জেনে বুঝে করে তা নয়, তার আরএনএ-তে র্যান্ডম পরিবর্তনের ফলে নিজের অজান্তেই সে এটা পেয়ে গেছে। এই ঘটনাটিকে বলে মিউটেশন। মিউটেশন প্রতিটি জীবের ডিএনএ/আরএনএ-তেই ঘটে এবং এটাই বিবর্তনের চালিকা শক্তি (ভাইরাসকে(অণুজীব) অবশ্য ঠিক জীব বলা যায় না বরং জীব ও জড়ের মাঝামাঝি কিছু বলা যেতে পারে)। এই মিউটেশনের ফলেই নতুন নতুন জীব প্রজাতি তৈরি হচ্ছে পৃথিবীতে। ভাইরাস সরল বলে সে দ্রুত পরিবর্তিত হয় আর অন্যরা জটিল বলে এত দ্রুত পরিবর্তিত হয় না, পার্থক্য মূলত এখানেই। একবার কোষে ঢুকে যেতে পারলে সে তার আরএনএ-র মাধ্যমে কোষ-যন্ত্রকে ব্যবহার করে নিজের প্রচুর প্রতিলিপি তৈরি করে নেয় এবং কোষ বিদীর্ন করে বের হয়ে নতুন হোস্ট খুঁজতে থাকে। এটি যে সে জেনে বুঝে করে তা নয়। আমরাই তাকে পৌঁছে দিতে সাহায্য করি। কেননা, সে কেবল চেনে রিসেপ্টর।
রোসেনবার্গ এর পরের ধাপটির নাম দিয়েছেন নেগোশিয়েটিং পাবলিক রেসপন্স। এই ধাপে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের আসরে নামে দেশের সরকার এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এই ধাপে ঘটে সরকারের আরোপিত ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জারি করা নির্দেশিকা ও জনসমষ্টির প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দড়ি টানাটানি। ইতিহাসের পাতায় রয়েছে এর অনেক উদাহরণ। প্রথম গুটি বসন্ত রোগ সংক্রমণ রোখার উপায় তুরস্ক থেকে শিখে এসেছিলেন লেডি মেরি মন্টাগু। তাঁর ব্যবস্থাপনা ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ড মেনে নেয়নি প্রথমেই। ফলে গুটি বসন্ত রোগ নির্মূল হওয়া পিছিয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েক বছর। তবে এই দড়ি টানাটানিও নির্ভর করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে কতটা আলাদা, তার উপর। শুধু তা-ই নয়, জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সদস্যের জীবনধারণ, দিনলিপির উপরেও। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সোশ্যাল আইসোলেশন বা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন রাখার কাজটাই অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। ঘরে বসে কাজ করার সুযোগও নেই। নেপথ্যে রয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
তৃতীয় ধাপের অন্যতম বড় ঘটনা হলো, প্রাথমিকভাবে দেশের সরকারের সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র চেপে যাওয়া। কামুর ‘দ্য প্লেগ’-এ এর নির্দেশ রয়েছে। আগে ঘটে যাওয়া যে কোনও মহামারির ক্ষেত্রেই তা সত্যি, করোনার ক্ষেত্রেও। চীন প্রথমে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা চেপে যাওয়ার পরবর্তী ধাপে প্রকাশ করে একাধিক প্রোপাগান্ডা পোস্টার। প্রতিটি পোস্টারেই জনসাধারণকে ভয় দেখিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ইঁদুরকে লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে গিয়েছে অনেক আগেই। চেপে যাওয়ার ঘটনা শুধুমাত্র যে কত জন আক্রান্ত হলেন, সেই তথ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বেশির ভাগ সময়ই চেপে যাওয়া হয় সংক্রমণ রুখতে স্বাস্থ্যবিভাগ কতটা তৈরি, সেই তথ্য। যেহেতু তৃতীয় ধাপেও বেশ কিছু মানুষের আসল ঘটনা থেকে মানসিক, সামাজিক ও ভৌগোলিক দূরত্ব পুরোপুরি ঘুঁচে যায় না, তাই সাধারণ মানুষ রিয়ুর মতো ভুল করতেই থাকে।
বাজারে বা রাস্তায় কোনও জমায়েতে মিনিট দুয়েক দাঁড়ালেই দেখা যাবে, কীভাবে চারিদিকে থুতু ছেটাচ্ছে অনেকে। ব্যাকগ্রাউন্ডে হয়তো ঠিক তখনই ঘোষণা হচ্ছে করোনা রুখতে কী কী করা উচিত নয়। করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে তৎপর সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আগে ঘটে যাওয়া যে কোনও প্যানডেমিক রুখতেও তেমনটাই করা হয়েছিল। কিন্তু প্রাণহানি রোখা যায়নি। রোসেনবার্গ তাঁর ‘হোয়াট ইজ় অ্যান এপিডেমিক’ প্রবন্ধে তাই আহ্বান করেছেন যে কোনও মহামারি বা অতিমারির ইতিহাসকে বুঝতে।
ভাইরাস, সেটা মোটামুটি যে ধরনেরই হোক, দু’ধরনের নিউক্লিক এসিড- RNA কিংবা DNA এবং তার চারপাশে ক্যাপসিড নামের একটা আবরণ দিয়ে গঠিত। এর বাইরে এনভেলোপও থাকে অনেকের। তো এই আবরণগুলো প্রোটিন ও লিপিড এ দুটো জটিল যৌগ দিয়ে তৈরি। লিপিড ধরতে গেলে তেল বা চর্বির মত, সে পানিতে দ্রবীভূত হয় না। কিন্তু সাবান তাকে দ্রবীভূত হতে বাধ্য করে। সাবান মূলত বিশাল ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ৷ এর দুইটা অংশ- একটি হাইড্রোফোবিক অর্থাৎ পানিকে ঘৃণা করে কিন্তু তেলের সাথে যুক্ত হয় এবং অপরটি হাইড্রোফিলিক। মানে তেলকে ঘৃণা করে কিন্তু পানিকে ভালোবাসে। যখন সাবান ভাইরাসের বাইরের লিপিড আবরণের সংস্পর্শে আসে, তখন সে তার হাইড্রোফিলিক হাত দিয়ে লিপিডকে ধরে, ও বাকি হাতটা দিয়ে আশপাশের জলকে ধরে। তারপর সহজ ভাষায় ভাইরাস থেকে তার লিপিড আবরণ ছিনিয়ে নেয়। অনেক সাবান অণু মিলে এ কাজটা করে। ফলে ভাইরাসের আবরণ টুকরো টুকরো হয়ে পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়, ঐ তেলে জলে মিশ খাবার মতই। নিজের সেফটি অর্থাৎ আবরণ হারিয়ে ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে না, সে যে ভাইরাসই হোক। এমনকি কোভিড-১৯-ও না।
হ্যান্ড স্যানিটাইজারও একই কাজ করবে। তাতে প্রায় ৭০-৯০% এলকোহল দেয়া হয়। এলকোহলও দুইটা বিপরীতমুখী প্রান্ত দিয়ে গঠিত, তাই সহজেই ভাইরাসের লিপিড/প্রোটিন আবরণ ছিঁড়ে ফেলতে পারে। সবাই নিজেকে পরিষ্কার রাখবেন।
নিজের বাঁচা নিজেকেই বাঁচতে হবে। নিজে, নিজের পরিবারকে সেফ রাখুন। পর্যাপ্ত পরিষ্কার থাকলে অন্তত এক পার্সেন্ট হলেও চান্স থাকবে। সেটাই অনেক আপাতত।
লেখক: চিকিৎসক
ঢাকা/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন