ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনাভাইরাস: প্রয়োজন আরো কঠোর হওয়া

নিজামুল হক বিপুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১২, ৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস: প্রয়োজন আরো কঠোর হওয়া

এই ছ‌বি দেখে বোঝার উপায় নেই করোনা কতটা ছোঁয়াচে এবং কী দুর্যোগ ডেকে এনেছে

১.
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) কীভাবে ছড়ায় এটা বোধ হয় এখন মূর্খরাও জানেন এবং বুঝেন। শুধু আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা বোধ হয় বুঝতে পারছেন না। বা বুঝেও নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিচ্ছেন না। তা না হলে তারা প্রতিষ্ঠান বা কারখানা বন্ধ করে দিয়ে এখন আবার হঠাৎ করে সেই কারখানা খুলতে চাচ্ছেন কেন?

আজ যেভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা দলে দলে মিছিল করে ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় এসেছেন তাতে বুঝার উপায় নেই দেশ তথা বিশ্বব্যাপী একটা মহামারি বা দুর্যোগ চলছে। (ইতিমধ্যে বিজিএমইএ সভাপতি কারখানা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।) কিন্তু তার এই অনুরোধ বড্ড বিলম্বে হয়েছে।

এখানে একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারিনি। তা হচ্ছে- হাজার হাজার শ্রমিক যারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেছেন তাদের এই যাত্রা কেন শুরুতেই থামিয়ে দিতে পারলেন না আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা?

২.
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একটু একটু করে বাড়ছে। আইইডিসিআর এর তথ্য মতে, দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন একটু একটু করে হচ্ছে। এই দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকেই দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। ছুটি ঘোষণার পর থেকে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। সরকারের এই ছুটি দেয়ার মূল উদ্দশ্য হচ্ছে মানুষকে ঘর বন্দী করে রাখা। অর্থাৎ কেউ ঘরের ভেতর থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না।

এ লক্ষ্যে সরকার পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সারাদেশে দুর্যােগের বন্ধু সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কাজে। যাতে ঘর থেকে কেউ বের না হন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের নেয়া এই পদক্ষেপ কেন জানি দেশের কিছু মানুষের পছন্দ হচ্ছে না। তারা ঘরে বসে থাকতে পারছেন না। বাইরে বের হচ্ছেন হরদম। মানুষের এই বাহির প্রেম যে কােনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। এ জন্য যতোটা কঠোর হওয়া দরকার ততোটাই কঠোর হতে হবে। কোনো ছাড় নয়। তা না হলে সামান্য ভুলের জন্য বা হেয়ালিপনার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে আমাদের এই ঘনবসিতপূর্ণ দেশ আর দেশের মানুষকে।

৩.
আমাদের দেশের মানুষের একটা বিরাট অংশ আছে যারা দিন আনে দিন খায়। খেটে খাওয়া দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশা, ভ্যান চালক, সিএনজি অটোরিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল রেস্তোরাঁর শ্রমিকসহ এরকম আরও বেশ কিছু শ্রেণির মানুষ। এ দুর্যোগের সময় কর্মহীন হয়ে পড়া এই মানুষগুলো যেন অভুক্ত না থাকে সে জন্য সরকার তাদের জন্য খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করেছে। দেশে এখন খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এক-দুই মাস সরকার এই শ্রেনীর মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারবে। তাহলে কেন রাস্তায় ছোট ছোট যানবাহন চলবে? যাত্রী পরিবহণ করব?

আমাদের উপর যে মহাদুর্যোগ ঘুরপাক খাচ্ছে সেটিকে দমন করতে কয়েকটা দিন আমরা কেন জরুরি সেবা বাদে অন্য সব কিছু বন্ধ রাখতে পারছি না।

এটা যে করেই হোক করতে হবে। নতুবা চরম মূল্য গুনতে হবে। আমি বিশ্বাস করি এখনও সময় আছে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার। শুধু দরকার কঠোর হওয়ার। বিশ্বের অনেক দেশেই কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার তো জানিয়ে দিয়েছে যারা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বিদেশীদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে।

ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সব দেশেই কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাহলে আমরা কেন পারবো না?

৪.
দুর্যোগের সময় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ বা সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার বিষয়টা আমরা ভীষণভাবে দেখতে পাই। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে, সরকারি, বেসরকারি, এনজিও, রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে। এসব খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। ফলে একই ব্যক্তি বা পরিবার কিংবা একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ‌প্রত্যেকের কাছ থেকে খাদ্য সহায়তা বা ত্রাণ সামগ্রী  পাচ্ছেন। শুধু সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এমন হচ্ছে। এখানেও সরকারকে কঠোর হতে হবে। তাহলে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে ওভারলেপিং, অনিয়ম দূর সম্ভব হবে।

৫.
গুজব। গত কিছু দিন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিভিন্নভাবে কিছু ব্যক্তি, গোষ্ঠী, মহল থেকে নানা রকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে দুই দিন আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতে হয়েছে।

আমার জানতে ইচ্ছা করছে, গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব যাদের তারা কি ঘুমিয়ে আছেন? সরকার যে তাদেরকে বেতন দিয়ে পুষছে সেটা কি তারা ভুলে গেছেন?
সবশেষে বলবো, আমাদের এই মহা দুর্যোগকালে দেশের মানুষ একজনের উপরই ভরসা রাখছে। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই আমরা, এই বাংলাদেশ, এদেশের মানুষ এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে রক্ষা পাবে।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাব‌ন্ধিক


ঢাকা/তারা/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়