ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রোজা রেখেও যেসব অন্যায় করছি

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৭ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোজা রেখেও যেসব অন্যায় করছি

মানুষের রোগবালাইয়ের চিকিৎসায় দুটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিজ্ঞান, একটি হচ্ছে প্রতিষেধক, আরেকটি প্রতিরোধক। মুসলমানদের আত্মিক রোগের চিকিৎসার জন্য মহান আল্লাহও কিছু ওষুধের বিধান দিয়ে রেখেছেন। এসব ওষুধের একটি হচ্ছে রোজা। বছরের একটি মাস সিয়াম সাধনা হচ্ছে কুপ্রবৃত্তি দমনের বড় প্রতিষেধক বা টিকা। শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহর দেওয়া এই প্রতিষেধক মানুষকে অন্যায়-অনাচার, অশ্লীলতা, মিথ্যাচার, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি থেকে বিরত রাখে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মুসলিম জাহানের কোটি কোটি মানুষ রোজা রাখছে, তাদের অনেকেই তো যে লাউ সেই কদুর মতোই চুরি, ঘুষ, অন্যায়-অনাচারে লিপ্ত। এদের পরিবর্তন হচ্ছে না কেন?

এর উত্তরের জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিসই যথেষ্ঠ। আল্লাহর নবি বলেন, ‘রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ একে সে ফেড়ে না ফেলে।’

ঢালের অর্থ আমাদের সবার জানা-যা মানুষকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এই ঢাল একজন মানুষ কীভাবে ফেড়ে ফেলে? এক রেওয়াতে এসেছে, মিথ্যা ও গিবতের মাধ্যমে ঢাল ফেড়ে ফেলা হয়।  অথচ রোজাদার মানুষ এখন সময় কাটানোর উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে- আড্ডা ও খোশগল্প, যেখানে মিথ্যা ও গিবতের চর্চা হয় সবচেয়ে বেশি।

আরও কিছু উপায়ে মানুষ জাহান্নাম থেকে বাঁচার এই ঢালকে ফেড়ে ফেলে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপাত্রে দৃষ্টি এবং কানকে অশ্লীল ও নাজায়েজ শব্দ শোনা থেকে বিরত না রাখা। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দৃষ্টি শয়তানের তীরগুলোর মধ্যে একটি।’  রোজা রাখা অবস্থায় নিজের স্ত্রীর প্রতিও কামভাবে দৃষ্টি দেওয়া যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে বেগানা বা ভিন নারীর প্রতি সমাজে অবাধে দৃষ্টিপাত চলছে। অনেকে হয়তো বলবেন আমি তো রাস্তাঘাট ও অফিস আদালতে অন্য নারীর দিকে তাকাই না। তবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে ওই ব্যক্তি বাসায় টেলিভিশনে সিনেমা, নাচ-গান দেখছেন। দুঃখের বিষয় এই রোজার মাসেও সময় কাটানোর এখন বড় ‍উপায় হিসেবে এই সিনেমা, নাচ-গান দেখাকে বেছে নিয়েছি আমরা। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেহুদা ঘোরাফেরা করে সময় কাটান। সেখানেও আছে নাটক-সিনেমা, নাচ-গানের ক্লিপস কিংবা কোনো নারীর পোস্ট করা ছবি। রোজার আত্মিক ফায়দা তো আপনি এখানেই শেষ করে দিচ্ছেন। অসুখ সারবে কীভাবে বলুন?  বিষয়টি এমন যে আপনি একদিকে ওষুধ খাচ্ছেন, আবার অন্যদিকে বিষপান করছেন।

কেবল রোজা নয়, সব ইবাদত কবুলের একটি বড় শর্ত হালাল খাদ্য তথা হালাল কামাই। আপনি সফেদ পাঞ্জাবি পরে মসজিদের প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করেন, ফরজ কেন পারলে নফল রোজাও সব রাখেন, কিন্তু দু‘হাতে হারাম কামাই করছেন। আপনার জন্য আল্লার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্কবার্তা- ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’

হালাল কামাইয়ের ইফতার দিয়েও অনেকে রোজার উদ্দেশ্যকে নস্যাৎ করেন। রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ক্ষুৎ-পিপাসা ও ইবাদতের মাধ্যমে কাম ও পশু প্রবৃত্তিকে দমন এবং নূরাণি ও ফেরেশতাসুলভ শক্তিকে বৃদ্ধি করা। অথচ ইফতারি ও সেহরিতে এতো পরিমাণ খাওয়া হয় শেষ পর্যন্ত বেচারির নড়াচড়া করাই মুশকিল হয়ে পড়ে। অতি ভোজনের কারণে নামাজেও চলে আসে আলস্য, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার তো আরও পরের ব্যাপার।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় চলাচল করে। তোমার ক্ষুধার মাধ্যমে তার চলাচল বন্ধ করে দাও।’

রোজার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি করা। সমাজের হতদরিদ্ররা যারা একবেলা খায়, দু’বেলা অনাহারে থাকে এমন মানুষদের কষ্টের অনুভূতি ধনী বা সামর্থ্যবানদের মধ্যে তৈরি হয় রোজার মাধ্যমে। অথচ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোজায় যদি আরও বেশি মুখরোচক ও বিলাসী খাদ্য পেট পুরে খাওয়া হয় সেই উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়।

ছোট্ট একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করব। বাগদাদের অনেক বড় ওলি ছিলেন হযরত আবু নসব বিশর ইবন আল হারিছ আল হাফী। তীব্র শীতে বিশরকে কাঁপতে দেখে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো কাপড় খুলে রেখেছেন কেন? জবাবে বিশর বললেন, বহু দরিদ্র মানুষ আছে যাদেরকে সাহায্য করার শক্তি আমার নাই। অন্তত তাদের মতো হয়ে আমি এতোটুকু সহানুভূতি তো প্রকাশ করতে পারি।

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়