ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিজেদের প্রয়োজনেই বাঘ রক্ষা করতে হবে

অলোক আচার্য || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১১, ২৯ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নিজেদের প্রয়োজনেই বাঘ রক্ষা করতে হবে

পৃথিবীতে সময়ের সঙ্গে বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। বহু প্রাণী বিপন্নের তালিকায় আছে। ক্রমেই সেই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। গত বছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’-এর এক হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। এই প্রাণীগুলো প্রকৃতির সম্পদ।

প্রতিটি দেশেই বিশেষ প্রাণী রয়েছে যা সেই দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরে। আমাদের যেমন রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ শক্তিশালী এই প্রাণীটিকেও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করতে হচ্ছে। বসবাসের ভালো জায়গার অভাব, শিকারির দৌরাত্ম্যে বাঘ আজ বিলুপ্তির পথে।

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবাগ শহরে সর্বপ্রথম বিশ্ব বাঘ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও অনেক আগে থেকেই এই প্রাণীটির অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত ছিলেন প্রকৃতিবিদরা। সম্মেলনের পর বিষয়টি আরো সামনে চলে আসে। বাঘ বাঁচাতে হবে, এমন একটি ভাবনা গড়ে ওঠে সবার মধ্যে। সেন্ট পিটার্সবার্গের সম্মেলনে আগামী ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে লক্ষ্যে কয়েকটি সংগঠন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাঘ টিকে আছে এমন দেশের সংখ্যা ১৩টি। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া। বাঘের বর্তমানে পাঁচটি উপজাতি রয়েছে। এগুলো হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান টাইগার, সুমাত্রা টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার ও ইন্দো চায়না টাইগার। বাঘের এই পাঁচটি প্রজাতিই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। 

যে কয়েকটি দেশে বাঘ আছে, সেই তালিকায় আমাদের দেশের নামও আছে। কিন্তু কত বছর থাকবে সেটাই প্রশ্ন। প্রকৃতি থেকে কোনো প্রাণী চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাক তা আমরা চাই না। যদিও ইতোমধ্যে বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ থেকে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে বাঘ বা বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু একটি দুষ্টচক্রের কারণে তা একেবারে বন্ধ করা যায়নি। একটি তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৮০ সাল থেকে ২০১২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গত ৩২ বছরে সুন্দরবন এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন কারণে ৬৭টি বাঘের মৃত্যু ঘটেছে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০০৪ সালে বাঘের পায়ের ছাপ নিয়ে পরিচালিত এক শুমারিতে দেখা যায়, সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১২১টি, স্ত্রী ২৯৮টি এবং শাবক ২১টি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ৪০০০ বাঘ ছিল বলে ধারণা করা হয়। অথচ শুনলে বিস্মিত হতে হয়, ১৯০০ সালে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখ। এই একশ বিশ বছরে বাঘ প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী শতাব্দী আসার আগেই বাঘ হারিয়ে যাবে চিরতরে।

বাঘ বনের জীববৈচিত্র, খাদ্যশৃঙ্খল ও প্রতিবেশ চক্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক। প্রতিটি প্রাণীই এই নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো না কোনো সময় এসব চক্রের ভেতর মানুষও এসে যায়। ফলে প্রতিটি প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে থাকলে মানুষ বাদ যাবে না। এটা একটা সংকেত। বনের প্রাকৃতিক বংশবৃদ্ধি ঠিক রাখার জন্য প্রতিবেশ চক্র নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। বনে নানা ধরনের প্রাণী ও  উদ্ভিদ রয়েছে। কোনো প্রাণী মাংসাশী, আবার কোনো প্রাণী তৃণভোজী। তৃণভোজী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে হরিণ, বনগরু, মেষ, শূকর ইত্যাদি। এসব প্রাণীর বেঁচে থাকার উপর আবার মাংশাসী প্রাণীর জীবন ধারণ নির্ভরশীল। এভাবে খাদ্যচক্র নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানেও সমস্যা রয়েছে। ফলে সব কিছু মিলিয়ে বাঘের জীবন ধারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। টিকে থাকার যে শর্ত বা ডারউইনের মতবাদ সেখানেও বাঘ পিছিয়ে পড়ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত কমছে বাঘের সংখ্যা।

বাঘ বাঁচাতে, বাঘের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বিংশ শতাব্দীতেই তিন প্রজাতির বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকি যে পাঁচ প্রজাতি রয়েছে তা আমরা কোনোভাবেই বিলুপ্ত হতে দিতে পারি না। কারণ প্রকৃতি থেকে একটি প্রজাতি হারিয়ে যাওয়া মানে প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়া। এই প্রভাব লড়াই করে সাময়িকভাবে কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা মানুষের আছে কিন্তু স্থায়ীভাবে সে সমস্যা মোকাবিলা মানুষ করতে পারে না। তাই পরিবেশের শৃঙ্খল রক্ষা করা প্রয়োজন। আসুন সবাই বাঘ রক্ষায় সোচ্চার হই।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়