ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বন্যা এবং করোনাকালের ঈদ

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ৩১ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বন্যা এবং করোনাকালের ঈদ

স্বামী-স্ত্রী আর এক সন্তান নিয়ে ছোট সংসার মনিরুল ইসলামের। সম্পদ বলতে সরকারি জমিতে দোচালা টিনের একটা ঘর। সারা দিন কাজ করে যা আয় হয়, তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলছিল। এর মধ্যেই আসে মহামারির কাল। বন্ধ হয়ে যায় আয়-রোজগার। তারপরও কোনো রকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন। এরপর এলো বন্যা। কোমর সমান পানি থাকার ঘরটিতে। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সড়কের পাশে ঠাঁই নিয়েছেন দিশেহারা দিনমজুর মনিরুল। (সূত্র: রাইজিংবিডি, ৩১ জুলাই ২০২০  )।

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। এবারের ঈদ তাকে হাসপাতালেই কাটাতে হবে। প্রতি বছরের মতো এবার ঈদ ঘিরে ব্যস্ততা নেই, নেই আনন্দ আয়োজন। পরিবার ছেড়ে কখনো ঈদ করেননি। তিনি ও তার চাচা মিলে কোরবানির পশু কিনতে হাটে যান। এবারই প্রথম হাটে যেতে পারছেন না। ঈদের দিন পরিবার থেকে দূরে হাসপাতালে থাকতে হবে ভেবে খুব মন খারাপ হচ্ছে তার। তবে তিনি মনে করেন, করোনায় বেঁচে ফেরাটাই এখন পরিবারের কাছে ঈদের আনন্দের মতো। আরিফুর বলেন, আমার দুই মেয়ে। বড়টার বয়স ৯ বছর। ছোটটার বয়স সাত মাস। বড় মেয়ে তাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে আর বলে, ‘বাবা ঈদে আমাদের কিচ্ছু লাগবে না। তুমি সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসো।’ (সূত্র: প্রথম আলো,৩১ জুলাই ২০২০)।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও কিছু খবরের শিরোনাম: ‘ঈদে আনন্দ নেই, আছে শুধু দীর্ঘশ্বাস’, ‘ঈদের আনন্দ নেই বাউফলের কর্মহীন ও ভাঙন কবলিত জেলেদের’, ‘ঈদ, তবুও আনন্দ নেই ক্রিকেটারদের মনে’, ‘ঈদের উচ্ছ্বাস নেই আম্পানে বিধ্বস্ত শ্যামনগরে’, ‘সিলেটে করোনাভাইরাসের প্রভাব: ঈদবাজারে নেই গতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা’, ‘এই কান্নার ঢেউ সাগরপারের লাখো মানুষের’। এমন অনেক সংবাদ প্রতিদিন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। করোনার সংবাদে ছেয়ে যাওয়া গণমাধ্যমে এখন বন্যা আর নদী ভাঙনের খবর নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিদিনই করোনায় মারা যাচ্ছে মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েক মাস করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। করোনার কারণে গত রোজার ঈদের নামাজের পর হাসিমুখে কোলাকুলির চিরচেনা দৃশ্য দেখা যায়নি। দূর থেকে সালাম বিনিময় হলেও মানুষের মুখে ছিল না হাসি। ঈদের দিন নামাজ শেষেই স্বজনদের নিয়ে ঘোরাঘুরি, দাওয়াত খেতে যাওয়া, ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পার্কে যাওয়া- এমন কিছুই হয়নি। এবার কোরবানি ঈদেও একই চিত্র দেখা যাবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর মুসলমানেরা ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন কিন্তু সেই আনন্দ অন্যান্য বছরের মতো হবে না। ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবছর যে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান নর-নারী পবিত্র হজ পালন করেন, এ বছর সেটি সম্ভব হচ্ছে না করোনা মহামারির কারণে। সৌদি সরকার আগের মতো বিদেশি নাগরিকদের সেখানে হজ পালনের অনুমতি দেয়নি। সৌদি আরবের স্বল্পসংখ্যক মুসলমান হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এই করোনা মহামারি নিকট ভবিষ্যতে যে শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই।

একদিকে করোনা, আরেকদিকে বন্যা- আমাদের বদলে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবন। উদ্বেগের বিষয় হলো, ঈদুল আজহার সময় দেশের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল বন্যাকবলিত। এসব এলাকায় লাখ লাখ মানুষ কষ্টে আছে। ঘরবাড়ি, ফসল, শাকসবজি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। তাদের নেই ঈদের আনন্দ। সবাইকে আহ্বান জানাই এই বন্যাদুর্গত মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানোর জন্য। আশা করবো, শিগগিরই করোনার আঁধার কেটে যাবে। বন্যাও শেষ হবে। অসহায় মানুষগুলো আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আবার আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারব। আগামী ঈদ আমরা মহামারি কাটিয়ে উঠে হাসি মুখেই পালন করব- এটুকুই প্রত্যাশা। ঈদ মোবারক।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

 

ঢাকা/তারা

রাইজিং বিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়