ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রাইজ বন্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি চাই

শেখ আনোয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৩:৩৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রাইজ বন্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি চাই

ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা এফডিআর যখন-তখন যে কেউ করতে পারেন। কিন্তু নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ছাড়া এফডিআর করা যায় না। অল্প টাকাওয়ালাদের জন্য মোক্ষম বিকল্প প্রাইজ বন্ড।

ধরা যাক, আপনার শিশুকে আদর করে জন্ম দিনে কেউ নগদ টাকা দিয়েছেন। আপনি হয়তো এখনই শিশুর নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে চাচ্ছেন না। তাই টাকাগুলো হাতে নিয়ে ভাবছেন- কী করা যায়? অথবা কারো বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিনে উপহার হিসেবে নগদ টাকা বা পণ্য দিতে চাইছেন না। তাহলে কী করবেন? আপনার জন্য সহজ সমাধান প্রাইজ বন্ড দেওয়া। প্রতিটি প্রাইজ বন্ডের মূল্য ১০০ টাকা। প্রাইজ বন্ড ভাঙিয়ে সহজেই নগদ টাকা পাওয়া যায়। আবার ধরে রাখলে প্রাইজ বন্ডের মাধ্যমে নগদ পুরস্কারও জেতা সম্ভব। ভাগ্যে থাকলে মাত্র ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে লাখ টাকার মালিক বনে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।

প্রাইজ বন্ড হলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সঞ্চয়ের লক্ষ্যে প্রবর্তিত এক প্রকার কাগুজে মুদ্রা পদ্ধতি। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ‘বাংলাদেশ প্রাইজ বন্ড’ চালু করে। প্রাইজ বন্ডকে লটারি বন্ডও বলা হয়। তবে এই লটারি সেই লটারি নয়। অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকে ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিলের প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন ‘যদি লাইগ্যা যায়’-এর মতো নয়। কারণ এটি যে কোনো সময় ভাঙিয়ে নগদ টাকা ফেরত নেওয়া যায়।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের পণ্য হলেও সরকারের পক্ষে প্রাইজ বন্ডের যাবতীয় কাজ পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাইজ বন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। অর্থাৎ প্রাইজ বন্ডের মাধ্যমে সরকার বাজার থেকে টাকা ধার করে। এর কোনো মেয়াদ না থাকায় যে কোনো সময় বিক্রিও করা যায়। ভাঙানো ও কেনা দু’টোই করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ক্যাশ অফিস ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও প্রাইজ বন্ডের লেনদেন সাধারণত বেআইনি।

১৯৫৬ সালে আয়ারল্যান্ডে চালু হয় প্রাইজ বন্ড। একই বছর যুক্তরাজ্যে এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ‘প্রিমিয়াম বন্ড’ নামে ছাড়া হয়। বাংলাদেশে মূলত জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা চালু করে ১৯৭৪ সালে। তবে তখন ছিল ১০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ড। ১৯৮৫ সালে চালু হয় ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ড। ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ড চালু হওয়ার পর ১০ টাকা ও ৫০ টাকা মূল্যমানের বন্ড সরকার তুলে নেয়। জানা যায়, বর্তমানে বাজারে ৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৪ পিস প্রাইজ বন্ড রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদাপত্র অনুযায়ী বাজারে প্রাইজ বন্ড বিক্রি করা হয়। যদি চাহিদা থাকে, তবে আরও বেশি প্রাইজ বন্ড ছাপানো যেতে পারে। তবে সাধারণত একজন ব্যক্তি ৪৫ লাখ টাকার সমপরিমান প্রাইজ বন্ড কিনতে পারেন।

বাংলাদেশের প্রাইজ বন্ডে প্রতিটি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে। যার মূল্যমান ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রথম পুরস্কার ১টি ৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ১টি ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ২টি ১ লাখ টাকা করে, চতুর্থ পুরস্কার ২টি ৫০ হাজার টাকা এবং পঞ্চম পুরস্কার ৪০টি ১০ হাজার টাকা। ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয় বছরে চারবার। যথা ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর। তবে উক্ত তারিখগুলো সাপ্তাহিক ছুটি হলে অথবা অন্য কোনো কারণে প্রাইজ বন্ডের ভাগ্যপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে না পারলে পরবর্তী কার্যদিবসে তা সম্পন্ন করা হয়। সিঙ্গেল কমন ড্র পদ্ধতিতে প্রাইজ বন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ভাগ্য পরীক্ষার পূর্বে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে একটি পরিষদ গঠন করা হয়। এই পরিষদ বা গঠিত কমিটি ড্র করে। ভাগ্যপরীক্ষার ফল সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব সাইট, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। পুরস্কার জেতার পর মূল বন্ডসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডার দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, প্রাইজ বন্ড কেনার দুই মাস পার হওয়ার পরই কেবলমাত্র এটি ভাগ্যপরীক্ষার আওতায় আসে। নতুন কেনা প্রাইজ বন্ডের পাশাপাশি আগে কিনে রাখা প্রাইজ বন্ড ড্রয়ের আওতায় থাকে। ড্র অনুষ্ঠানের দুই বছর পর্যন্ত পুরস্কারের টাকা দাবি করা যায়। এর মধ্যে কেউ দাবি না করলে পুরস্কারের অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়। তবে ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই থেকে পুরস্কারের টাকার ওপর সরকারকে উৎস কর দিতে হয় ২০ শতাংশ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম প্রাইজ বন্ড চালু করেন। যা এখন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুদমুক্ত জাতীয় প্রাইজ বন্ড হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত ও সুপরিচিত। সাধারণ মুদ্রার মতোই প্রাইজ বন্ডের বিনিময় মূল্য এক এবং সমান। কিন্তু টাকায় জাতির পিতার ছবি থাকলেও প্রাইজ বন্ডে নেই। প্রাইজ বন্ডে জাতির জনকের ছবি ছাপানো হলে আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন হতে পারে। এতে নতুন প্রজন্ম প্রেরণা পাবে। আর জাতি হিসেবেও আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ পাবো। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলে এটি অতুলনীয় কাজ হবে বলেই মনে করি। প্রজন্মের প্রত্যাশা প্রাইজ বন্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংযোজিত হোক। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে প্রজন্মের এই প্রত্যাশা পূরণে অনন্য নজির স্থাপন করবেন।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়