সালাহ্উদ্দিনের কাছে প্রত্যাশা
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে আবারও কাজী সালাহ্উদ্দিনকে বেছে নিয়েছেন কাউন্সিলররা। শনিবার (৩ অক্টোবর) বাফুফে নির্বাচনে ১৩৫ ভোটের মধ্যে ৯৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ দফায় নির্বাচিত হলেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার।
নির্বাচনের আগে কর্ণধার নিয়ে যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল, তার প্রতিফলন হলো না ভোটে। সভাপতি পদে নির্বাচন হলো সাদামাটা। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেও নির্বাচন হলো একপেশে। সহ-সভাপতি পদে তিন জনের নির্বাচিত হওয়া ছিল অনুমিত। শুধু সহ-সভাপতির একটি পদ নিয়ে লড়াই হলো স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সমন্বিত পরিষদের মধ্যে।
নির্বাচনের আগের রাতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত পাল্টানো বাদল রায় সভাপতি পদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ ভোট পেয়েছেন। হেভিওয়েট প্রার্থী সালাহ্উদ্দিনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শফিউল ইসলাম মানিক পেয়েছেন মাত্র এক ভোট। বলাবাহুল্য, ৪০ ও ১ সংখ্যা দুটি স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়, দেশের ফুটবল তলানিতে গেলেও সংগঠক হিসেবে সালাহ্উদ্দিনের জনপ্রিয়তা।
২০০৮ সালে প্রথমবার বাফুফের দায়িত্ব নিয়ে খুব বেশি কাজ করতে পারেননি। চার বছর পর পুনরায় একই আসনে বসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সেবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ।’ আট বছর আগে যে প্রতিশ্রুতি বাফুফে সভাপতি দিয়েছিলেন, তা পাল্টে যায় এবারের নির্বাচনের আগে। বর্তমান র্যাঙ্কিং ও খেলার মান হতশ্রী। বিশ্বকাপ দূরে থাক, এশিয়া কাপের চূড়ান্তপর্বও বাংলাদেশের কাছে অনেক দূরের ব্যাপার। তাই তো বুঝেশুনে ইশতেহার দিয়েছেন এবার, ‘বাংলাদেশ ফুটবল দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।’
বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৭ নাম্বারে রয়েছে বাংলাদেশ। নতুন করে দায়িত্ব গ্রহণের পর র্যাঙ্কিংয়ে ৩৭ ধাপ এগুনো সালাহ্উদ্দিনের প্রথম চ্যালেঞ্জ। সেজন্য খেলতে হবে ফিফা ফ্রেন্ডলি। পারবেন তো সালাহ্উদ্দিন?
এছাড়া প্রত্যেক বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ আয়োজন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও এসএ গেমসের শিরোপা পুনরুদ্ধার, ফুটবল দলের জন্য হাইপ্রোফাইল কোচিং স্টাফ নিয়োগ, খেলোয়াড়দের প্রোফাইল তৈরি, ঘরোয়া ফুটবলের সুনির্দিষ্ট পঞ্জিকা প্রণয়ন, লিগের জন্য সুনির্দিষ্ট বাইলজ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সালাহ্উদ্দিন।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়ামের সংখ্যা বাড়ানো, ন্যূনতম চারটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাফুফে ভবনে একটি আধুনিক মানের জিম প্রতিষ্ঠা করা।
সভাপতি বাদে সালাহ্উদ্দিনের প্যানেল থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ৯১ ভোট পেয়ে এবারও নির্বাচিত হয়েছেন ‘সম্মিলিত পরিষদের’ আব্দুস সালাম মুর্শেদী। সঙ্গে এসেছেন ১২ বছরের সঙ্গী সহ-সভাপতি কাজী নাবিল এবং প্যানেলের দুই নতুন সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাবিথ আওয়াল ও সমন্বিত পরিষদের মহিউদ্দিন আহমেদের ভোট সমান ৬৫টি করে হওয়ায় ৩১ অক্টোবর আবার ভোটাভুটি হবে। এখানে নিশ্চিতভাবেই সালাহ্উদ্দিনের চাইবেন পুরনো সঙ্গী তাবিথ আওয়ালকে। এছাড়া সদস্য পদে পাশে পেয়েছেন ডজনখানেক নীতি-নির্ধারককে।
আরও চার বছরের জন্য বাফুফের মসনদে বসলেন সালাহ্উদ্দিন। ২০২০ থেকে ২০২৪। সময়টা বিশাল লম্বা। লম্বা সময়ে সালাহ্উদ্দিন ফুটবলকে কোথায় নিয়ে যান সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ঢাকা/তারা
আরো পড়ুন