ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

২০২০: বিষাদমাখা বিস্ময়কর একটি বছর

এম এ কবীর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৪৯, ২ জানুয়ারি ২০২১
২০২০: বিষাদমাখা বিস্ময়কর একটি বছর

কবি টিএস এলিয়ট বলেছেন, ‘জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড নতুন এবং কোনো ঘটনাই একজন মানুষের জীবনে একই সময়ে ফিরে আসে না।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে, তবুও শান্তি, তবুও আনন্দ, তবুও অনন্ত জাগে।’

দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ নতুন প্রাপ্তির প্রত্যাশায় পুরাতন ক্ষত ভুলে যায়। এক বুক আশা নিয়ে নতুন বছরকে নতুন করে গ্রহণ করে জীবনের হিসাব নতুন করে কষতে শুরু করে। টাকা-পয়সা, যশ-খ্যাতি কোনো কিছুই মানুষকে পূর্ণাঙ্গভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে তার স্বপ্ন, আশা। আশা বা স্বপ্ন মানুষকে যেভাবে বাঁচিয়ে রাখে, ভুল স্বপ্ন তাকে ধ্বংসও করে দিতে পারে। সুতরাং এ কথাটিও স্মরণে রাখা প্রয়োজন।

বছর নতুন হলেও উদযাপনের ধরন কিন্তু পুরাতন। যদিও এবার থার্টি ফাস্ট নাইটে আতশবাজির আলোকচ্ছটা একটু বেশিই দেখা গেছে। হয়তো মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষায় মানুষ এভাবে উল্লাসে মেতেছে। এই মুক্তি হলো করোনাকাল থেকে মুক্তি। ২০২০ বরণ করে নিতে আমরা যখনে এভাবেই আনন্দে মেতেছিলাম তখন কেউ বুঝতেই পারিনি কি ভয়ঙ্কর সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে! এই ভয়ঙ্কর সময় থেকেই মুক্তি চাইছে মানুষ। এর বাইরেও আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো বহু বছর ধরেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দুশ্চিন্তার কারণ। এসব থেকেও মুক্তি জরুরি।

প্রতি বছরের শুরুতে আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার শপথ করি। দুর্নীতি, হত্যা, অরাজকতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে দৃঢ় সংকল্প হই। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন কতটা ঘটে? পুরাতন কাজ আর ভাবনায় চলে যায় নতুন বছর। যদি আমাদের স্বভাব আর শপথ ঠিক করতে না পারি, তাহলে কেন প্রতি নতুন বছর আমরা এভাবে স্বপ্ন দেখি? যদি একই ধারায় হঠাৎ সকালবেলার সূর্যটাকে নতুন সূর্য হিসেবে দেখতে পারি, তবে কেন রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যাগুলোকে নতুন করে দেখতে পারি না? কেন একই ভুল বারবার ঘটে?

প্রতিবার হঠাৎ পেঁয়াজ আমদানী বন্ধ হলে দেশে পেঁয়াজের দাম লাগামছাড়া হয়ে যায়? ধর্ষণ, হত্যা, দুর্নীতি প্রতি বছর আলোচিত ঘটনা হবে কেন? নতুন বছরের জন্য আমরা প্রতি বছর যেভাবে আতশবাজি আর বাহারি রঙের আলোকসজ্জা নিয়ে গর্জে উঠি, যে প্রত্যাশা আর পরিকল্পনা করি, তার সিকি ভাগও যদি কাজে লাগত, তাহলে অবশ্যই এ ধরা আরও সুন্দর ও বাসযোগ্য হতো। পুরাতন স্বভাব মজ্জায় রেখে নতুনকে স্বাগত জানানোর মানে নেই। ঘড়ির কাঁটা আর সূর্য যেভাবে ঘূর্ণায়মান ঠিক আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যাগুলো একইভাবে ঘূর্ণায়মান। আমরা যদি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে জীবন সাজাতে না পারি, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দৃঢ় সংকল্প না হই তবে নতুন বছর উদযাপন আর নতুনের প্রত্যাশা শুধু অরণ্য রোদন।

২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। তবে আমরা এমন একটি সময়ে উদযাপন করতে যাচ্ছি, যখন প্রতিদিনই খবর আসছে অদৃশ্য এক শত্রুর হানায় মৃত্যুর খবর। যদিও পৃথিবীর কোনো দুর্যোগই স্থায়ী হয় না। টিকা আবিষ্কারের কথা শোনা যাচ্ছে। অনেক দেশ বলছে- এগুলো কার্যকর। তবে এই অদৃশ্য শত্রুর আক্রমণের ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে। এ দেশের মানুষ জন্মগতভাবেই বেশ সহনশীল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই নিজেদের টিকে থাকার পথ বের করে এগিয়ে চলে তারা। জন্ম থেকেই নানা সঙ্কট কাটিয়ে সমৃদ্ধির পথে আমরা। এবারও পিছু হটবো না।

আমাদের পথচলা নতুন প্রত্যাশা, স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্খা নিয়ে। মনে রাখতে চাই না, ফেলে আসা দুঃখ-কষ্ট, গ্লানি, হতাশা। সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। করোনাকাল কেটে যাক। শুভ হোক ২০২১।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট


 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়